E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দেবহাটার ইজিবাইক চালক মনিরুল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো রমজান জামিনে মুক্ত

২০২০ সেপ্টেম্বর ১০ ২২:০৩:৫৬
দেবহাটার ইজিবাইক চালক মনিরুল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো রমজান জামিনে মুক্ত

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার ১০ দিন পর দেবহাটার শিমুলবাড়িয়ার ইজিবাইক চালক মনিরুল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো রমজান আলী বুধবার জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। বুধবার সাতক্ষীরার জেলা ও দায়রা জজ  মফিজুর রহমান এ জামিন দেন।

জামিনে মুক্তি পাওয়া রমজান আলী(৩৮) সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার ভাড়াসিমলা ইউনিয়নের সোনাটিকারী গ্রামের শহর আলী সরদারের ছেলে।

এদিকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর আইন প্রয়োগকারি সংস্থার সদস্যরা মনিরুল হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকা ও ইজিবাইক উদ্ধারের স্বীকারোক্তি আদায়ের নামে যে নির্যাতন চালিয়েছিল তা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ায় রিমাণ্ডে নিয়ে আবারো নির্যাতন চালানো হয়। স্বজনদের থানায় ডেকে এনে চরম হুশিয়ারি দেওয়া হয়।

রমজান আলী অভিযোগ করে বলেন, একজন সার্কেল পর্যায়ের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তার নেতৃত্বে গত ৩০ জুন দিবাগত রাত একটার দিকে তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে দেবহাটা থানায় আনা হয়। সেখানে স্বীকারোক্তি আদায়ের নামে চোখ বেঁধে পুরুষাঙ্গে মোমবাতির গলিত অংশ ফোঁটা ফোঁপটা আকারে ফেলা হয়। দু’ কান ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ইলেকট্রিক শক দিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়।(বক্তব্য রেকডিং)। পহেলা জুলাই রাতে তাকে চোখ বেঁধে ক্রসফায়ারে দেওয়া হবে একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে হাত ও পা বেঁধে ফেলে দেওয়া হয়। এ সময় সেখানে টর্চের আলো অনুভব করেন। শুনতে পান দু’টি গুলির আওয়াজ। পরে তাকে সাতক্ষীরার একটি গোয়েন্দা সংস্থার কার্যালয়ে আনা হয়। সেখানেও স্বীকারোক্তি আদায়ের নামে তাকে চোখ বেঁধে নির্যাতন করা হয়।

গত ৭ জুলাই মঙ্গলবার রাতে তাকে দেবহাটা থানায় আনা হয়। সেখানে স্বীকারোক্তি আদায়ের নামে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক উজ্জ্বল কুমার মৈত্র তার উপর নির্যাতন করেন। পরে মনিরুলের গাড়ি উদ্ধার দেখাতে একটি ভাঙড়ি ইজিবাইক যোগাড় করে সেটি সাঈদুর রহমান রাজুর বাড়ির পাশে পাওয়া যাবে বলে জনগনের সামনে বলার জন্য শিখিয়ে দেওয়া হয়। সেজন্য ১০ জুলাই সকালে তাকে কামটা গ্রামের একটি পুকুর পাড়ে হেলমেট পরিয়ে আনা হয়।কিন্তু মনিরুল হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কোন প্রমান না মেলায় পরে তাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হলে ঘটনা অন্য দিকে মোড় নিতে পারে ভেবে তাকে ১১ জুলাই সকালে পাঁচ দিনের রিমাণ্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়।

আদালতে আসার আগে পুষ্পকাটি মাঠের পাশে তাকে নামিয়ে ভয় দেখিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। তার উপর যে শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়েছে তাতে তিনি সারা জীবনের জন্য কর্মশক্তি হারিয়ে ফেলতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন। পরে তাকে একদিনের রিমাণ্ডে নিয়ে তদন্তকারি কর্মকর্তাসহ কয়েকজন সাংবাদিকদের কাছে সত্য প্রকাশ করায় তাকে আবারো নির্যাতন করেন। মা, স্ত্রী ও ভাইকে থানায় ডাকিয়ে এনে তাদেরকে মুখে কুলুপ আটতে বলেন। নইলে আবারো ক্রসফায়ারের হুমকি দেওয়া হয়।

তবে দেবহাটা থানার পুলিশ পরিদর্শক উজ্জ্বল কুমার মৈত্র বলেন, রমজানের উপর নির্যাতনের অভিযোগ ঠিক নয়।
প্রসঙ্গত, ২৫ জুন রাতে বাড়ি ফিরে না আসা শিমুলিয়া গ্রামের ইজিবাইক চালক মনিরুলের লাশ ২৬ জুন সকালে দেবহাটার কামটা গ্রামের মিঠুর রাইস মিলের পাশে দেখে জনতা পুলিশে খবর দেয়। এ ঘটনায় নিহতের ভাই আমিনুর রহমান ২৬ জুন রাতে কারো নাম উল্লেখ না করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় পুলিশ ২৭ জুন নিহতের স্ত্রী রাবেয়া, নিহতের শ্বাশুড়ি ফতেমা ও কামটা গ্রামের সাঈদুর রহমান রাজুকে আটক করে।

পরবর্তীতে একই এলাকার সুমন, আব্দুর রশীদ ও মামা জহুরুল হকের বাড়িতে থাকা আশাশুনির বসুখালি গ্রামের আব্দুর রাজ্জাককে আইনপ্রায়াগকারি সংস্থার সদস্য পরিচয়ে আটক করে। পহেলা জুলাই দুপুরে রশীদকে দেবহাটা থানা থেকে ও রাতে পাওয়ার হাউজ মোড় ধেকে সুমন ও রাজ্জাক মুক্তি পায়। ৭ জুলাই বিকেলে মুক্তি পায় ফতেমা। আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবর রহমান ও আরমান মেম্বর হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারে প্রধানমন্ত্রি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি বরাবর এমন অভিযোগ করেন মামলার বাদি আমিনুর রহমান।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ১০, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test