E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

লাশ আটকে রেখে টাকা আদায়ের অভিযোগ

খুমেক হাসপাতালে শৃঙ্খলা ফেরাতে পরিচালক পদে সেনা কর্মকর্তা নিয়োগের দাবি

২০২০ সেপ্টেম্বর ১২ ১৪:১০:০৩
খুমেক হাসপাতালে শৃঙ্খলা ফেরাতে পরিচালক পদে সেনা কর্মকর্তা নিয়োগের দাবি

খুলনা প্রতিনিধি : গাইনি সমস্যা নিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন উম্মে সালমা (ছদ্মনাম) (২১)। ভর্তি করা হয় গাইনি-১ ওয়ার্ডে, ট্রলিতে করে কয়েকবার বিভিন্ন রুমে আলট্রাস্নোসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য গেলে প্রত্যেকবারই টাকা দিতে হয় ফ্রি সার্ভিস ও আউটসোর্সিং কর্মচারীদেরকে।

ইজিবাইকে দুর্ঘটনায় ফুলতলার জামিরা এলাকার দিনমজুর রহমান আলীর স্ত্রী সায়েরা খাতুন (৬০)-কে সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করেন জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার। তাকে হাসপাতালের ট্রলিতে করে তৃতীয় তলায় নিয়ে গেলে ১০০ টাকা দাবি করেন ফ্রি সার্ভিসের এক কর্মী। ৫০ টাকা দিতে চাইলে দুর্ব্যবহার করেন রোগীর স্বজনদের সাথে। বলেন আমরা বেতন পাইনা, এগুলো দিয়ে চলি। ১০০ টাকার কমে রোগী নামাতে দেবো না। কাছে ওষুধ কেনার টাকা না থাকলেও বাধ্য হয়ে ১০০ টাকা দিয়ে হাসপাতালের বারান্দায় জায়গা হয় সায়েরা খাতুনের।

একইদিন মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক ভ্যান চালকের মৃত্যু হয়। দোতালা থেকে লাশ নিয়ে ভ্যানে ওঠানোর আগেই একশ’ দিতে হবে। যদিও ট্রলি টেনে নিয়ে নীচে নেমে এসেছেন মৃতের স্বজনেরা। শোকে বিহব্বল হতদরিদ্র পরিবারের কাছে কোন টাকা না থাকলেও লাশ নামাতেই দেয়নি আর এক ফ্রি সাভিসের আয়া। পরে ধার করে টাকা দিয়ে লাশ নিয়ে যেতে হয়েছিল স্বজনদের। এমন অসংখ্য ঘটনা প্রতিদিন খুমেক হাসপাতালে ঘটে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৮৯ সালের ১৮ জানুয়ারি নগরীর বয়রা এলাকায় ৪৩ দশমিক ২৫ একর জমির ওপর ‘খুলনা হাসপাতাল’ নামে যাত্রা শুরু হয় আজকের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের। ২০০৮ সালের ১ জুলাই হাসপাতালটি ৫০০ শয্যায় উন্নীত করার জন্য প্রশাসনিক অনুমোদন দেওয়া হয়। হাসপাতালে মোট ২৩টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ৪০টি কেবিন রয়েছে। এসব ওয়ার্ড ও কেবিনের মধ্যে বেশির ভাগ ওয়ার্ডে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে দু-তিন গুণ বেশি রোগী ভর্তি থাকছে। এতে একদিকে যেমন সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা, অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট অনেকের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে গাফিলতির অভিযোগও আছে। ফলে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না রোগীরা।

হাসপাতালে আউট সোর্সিং এ সাড়ে ৩ শ’ এবং ফ্রি সার্ভিসে দেড় শ’ লোক কাজ করছে। এখন প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে সার্বক্ষণিক সিকিউরিটি গার্ড, ওয়ার্ডে একাধিক ওয়ার্ড বয় ও পরিচ্ছন্ন কর্মী রয়েছে। এরপরও ফ্রি সার্ভিস-এর নামে রোগীদের কাছ থেকে নিয়মিত টাকা নেয়া হচ্ছে। আর টাকা না দিলে তারা কোন সেবাই দেয় না বরং বেতন পায় না এ অজুহাতে দুরদুরান্ত থেকে আসা রোগী ও তার স্বজনদেরকে নানাভাবে হয়রানী করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

খুমেক হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক ডাঃ মুন্সী রেজা সেকেন্দার বলেন, হাসপাতালের আউটডোরেই সব সমস্যা। এখানে ডাক্তাররা দালালদের সাথে জড়িত। এছাড়া ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা অবৈধভাবে রোগীদের সময় নষ্ট করে ডাক্তারদের রুমের সামনে বসে থাকে। ধীরে ধীরে এসবের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠতে হবে সাধারণ মানুষকে। সাধারণ মানুষকে সাথে নিয়ে এসব অনিয়ম রুখে দিতে হবে।

নানা সমস্যায় জর্জরিত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য এবং একটি মডেল হাসপাতালে পরিণত করার জন্য পরিচালক হিসাবে অভিজ্ঞ সেনা কর্মকর্তা নিয়োগের দাবি দিন দিন জোরালো হচ্ছে।

খুলনার সম্মিলিত দুর্নীতি বিরোধী জোট এর আহ্বায়ক শেখ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অনিয়ম দুর্নীতি কঠোর হস্তে দমন করতে হলে পরিচালক পদে সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরের অভিজ্ঞ অফিসার নিয়োগ প্রদান এখন সময়ের দাবি। এতে হাসপাতালের শৃঙ্খলা ফিরে সেবার পরিবেশ তৈরি হবে।

খুলনা জেলা ইমাম পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এএফএম নাজমুস সউদ বলেন, যে সকল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধ করে মডেল হাসপাতালে পরিণত হয়েছে, দেখা গেছে সে সব হাসপাতালে সেনা কর্মকর্তা পরিচালক পদে ছিলেন। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিসর যেহেতু অনেক বেড়েছে, তাই সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা, দালাল নির্মূল ও রোগীদের অন্যান্য সেবা নিশ্চিত করতে মেডিকেল কোরের সেনা কর্মকর্তা নিয়োগ করলে অবশ্যই শৃঙ্খলা ফিরবে বলে আমার বিশ্বাস।

একই অভিমত ব্যক্ত করেছেন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরাও। তাদের অভিমত, এখানে দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা যেভাবে বাসা বেঁধেছে তা থেকে উত্তরণে এবং এ অঞ্চলের কোটি মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হলে অবিলম্বে সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপ প্রয়োজন।

(এম/এসপি/সেপ্টেম্বর ১২, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test