E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

দিনাজপুরে বালু উত্তোলনের মহাযজ্ঞ

২০২০ সেপ্টেম্বর ২২ ১৪:৪৫:৫৮
দিনাজপুরে বালু উত্তোলনের মহাযজ্ঞ

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : দিনাজপুরে কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ পদ্ধতিতে বালু উত্তোলন।কোন প্রকার নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে,কখনো নদীর পাড় কেটে,আবার কখনো আবাদী জমি থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করছে,এক শ্রেণীর স্বার্থান্বেষী মহল। এতে নদী তার গতিপথ হারাচ্ছে,ঘটছে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়। সেইসাথে বালু উত্তোলণে ফলে নদীতে সৃষ্ট চোরাই খাদ বা গর্তে ডুবে প্রতিবছর প্রাণ হারাচ্ছে,অসংখ্য মানুষ। শুধু তাই নয়,বালু বহনে ব্যবহার করা হচ্ছে, বেপরোয়া ট্রাক্টর এবং ১০ চাকার ভারি যান (ট্রাক)। এতে গ্রামীণ জনপদের রাস্তা-ঘাট ভেঙে যাচ্ছে। সড়ক দূঘর্টনায় বাড়ছে, হতাহতের সংখ্যা। এভাবে বেপরোয়াভাবে ট্রাক্টর চলাচল ও ভপু বাজানোর বিকট শব্দ আর বহণকৃত বালু কণা উড়ে চরমভাবে দূষণ হচ্ছে পরিবেশ।

যদিও সংবাদ সংগ্রহকালীন কয়েকজন সাংবাদিকের সাথে অশালীন আচরন করায় দিনাজপুর চিরিরবন্দরের কাঁকড়া নদীর কারেন্টেরহাট বালুমহালে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছে,স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু, সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি বীরগঞ্জের কাশিপুর বালুমহাল (খানসামায় চলছে,কার্যক্রম) এবং খানসামার গোবিন্দপুর (সরকারের ইজারা ছাড়াই) বালু মহালে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে পুরোদমে বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনকে স্থানীয় এলাকাবাসী,পরিবেশবিদ ও গণমাধ্যমকর্মীরা বার বার অভিযোগ করেও কোন ফল পাচ্ছেন না। প্রশাসন যেনো, কানে দিয়েছে তুলো এবং পিঠে বেঁধেছে কুলো” পথ অবল্বন করছে। এতে,স্থানীয় প্রশাসনকে নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করছেন,সচেতন মহল। বলছেন প্রশাসনের হপ্তা বেড়ে যাওয়ায় তারা নিশ্চুপ রয়েছেন।

নদী থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে, কখনো নদীর পার কেটে, আবার কখনো আবাদী জমি থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করছে, এক শ্রেণীর স্বার্থান্বেষী মহল।এতে নদী তার গতিপথ হারাচ্ছে, ভাংছে, পাড়, নদীতে বিলিন হচ্ছে, ফসলী জমি,ঘর-বাড়ি ও গাছ-পালা। প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই বীরগঞ্জ উপজেলার কাশিপুর বালু মহাল এবং খানসামার গোবিন্দপুর (সরকারি ইজারা ছাড়াই) বালু মহালেল অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রকাশ্যে বালু উত্তোলন চলছে। কাশিপুর বালু মহলটি বীরগঞ্জ উপজেলার আওতাধীন হলেও বালু উত্তোলন চলছে খানসামা উপজেলা এলাকায়। সেই ইজারাদার এবং তার সাথে অবৈধভাবে যুক্ত থাকা স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি খানসামা গোবিন্দপুর বালু মহালেও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। এই বালু মহলটি এবার সরকার কোন ইজারা প্রদান করেনি।তারপরও চলছে, ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রকাশ্যে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন।

শুধু তাই নয়, কিছু মহা সড়কে চলাচলে অনুমোদন প্রাপ্ত ১০ চাকার ভারি যান (ট্রাক) এই বালু বহনে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে এলাকার রাস্তা-ঘাট ভেঙে যাচ্ছে।চলসচলে অনুপযোগী হয়ে পরছে, খানসামা উপজেলার রাস্তা-ঘাট। এমন অভিযোগ এলাকার সর্বসাধারণের। স্থানীয় খানসামা উপজেলা চেয়ারম্যান আবু হাতেম উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিক হওয়ার আগে এই ১০ চাকার ট্রাক চলাচলের বিষয়ে প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ করলেও বর্তমানে নিশ্চুপ রয়েছেন। তার নীরবতার পেছনে রয়েছে, বিতর্কিত ওই বালু মহাল দু’টি’র সাথে তার এক ছেলেও জড়িত আছন।এমন অভিযোগ এলাকাসীর।

এলাকাবাসী জানায়,আব্দুল গফুর নামে এক ব্যক্তি কাশিপুর বালু মহাল সরকারিভাবে ইজারা গ্রহণ করলেও তার সাথে জড়িয়ে পড়েছে,স্থানীয় উপজেলার চেয়ারম্যানের ছেলে, রিএনপি’র একজন বিতর্কিত ঠিকাদার-ভাটার মালিকসহ আরো কয়েকজন। স্থানীয় ও জেলা পর্যায়ের কতিপয় ব্যক্তিবিশেষ অবৈধ ওই বালু মহাল থেকে সাপ্তাহিক উৎকোচ পাওয়ায় তা প্রকাশ্যে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলনের মহাযজ্ঞ।

এ বিষয়ে খানসামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.মাহবুবুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এর আগে তাদের ড্রেজার মেশিন জব্দ করে জরিমানা করেছি। কিন্তু, পড়ে তারা জানাচ্ছে, ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনে অনুমোতি রয়েছে ঠিকাদার তুহিনের।

পরে এ প্রতিবেদক ইউএনও মো.মাহবুবুল ইসলামকে অনুযোগ করেন, ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের কোন অনুমোদন নেই,তাছাড়া ঠিকাদার তুহিন ওই বালু মহালে ইজাদার নয়।ইজারাদার আব্দুল গফুর। শুধু তাই নয়,গোবিন্দপুর বালু মহালের কোন সরকারি ইজারা না হওয়া সত্বেও কিভাবে বালু উত্তোলন হয় ? তখন ইউএনও জানায়,“বালু উত্তোলন হচ্ছে,বীরগঞ্জ উপজেলার কাশিপুর ঘাটে। ও্টা দেখবে বীরগঞ্জ ইউনও আমি নয়। এবিষয়ে বেশি কিছু জানার থাকলে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে,জানলেই ভালো হয়।”

পরে এ বিষয়ে বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.আব্দুল গফুরের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান,আমি নতুন এসেছি। জায়গাটা জানিনা। আপনি বলেনতো,কোন জায়গায় ? আমি সময় মতো ব্যবস্থা নেবো।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো.মাহাবুবুল আলমের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি তা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আমরা জেলার বেশকিছু বালু মহাল থেকে সরকারের রাজস্ব আয়ের ব্যবস্থা করেছি। যা আগে ছিলো না। অবৈধ বালু উত্তোলনে কঠোর প্রদক্ষেপ নেয়ার জন্যে স্থানীয় ইউএনওদের বলা আছে।ইতোমধ্যে অনেক বালু মহাল থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ এবেং ড্রেজার মেশিন আগ্রন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া ও জরিমাননা করা হয়েছে। আমাদের এ অভিযান অব্যাহত আছে। পর্যায়ক্রমে করা হচ্ছে। অবৈধ কোনটাকের ছাড় দেয়া হবে না।,

সরেজমিনে দেখা গেছে, এই অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদী তার গতিপথ হারাচ্ছে। বিপর্যয় ঘটছে পরিবেশের। জীব-বৈচিত্র্য বিনষ্ট হচ্ছে। ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করায় নদীতে চোরাই খাদ সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে গোসল করতে নেমে এই চোরাই খাদে পড়ে প্রাণ হারাচ্ছে অনেকেই। জেলার কয়েকটি নদীতে গত ৫ বছরে এভাবেই প্রাণ হারিয়েছে, ২৭ জন তরতাজা তরুণ-যুবক। শুধু তাই নয়, অবৈধ পদ্ধতিকে বালু উত্তোলণের ফলে মারাত্মক ভাবে বিপর্যয় ঘটছে, পরিবেশের।

জেলার বেশ কয়েকটি স্থানে নদী থেকে ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে অবাধে চলছে বালু উত্তোলনের মহাযজ্ঞ। শুধু নদী থেকেই নয়; কোথাও নদীর পাড় কেটে, কোথাও নাম মাত্র টাকা দিয়ে, আবার কোথাও জোড়পূর্বক অন্যের ফসলি জমি কেটে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

(এস/এসপি/সেপ্টেম্বর ২২, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test