E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

দিনাজপুরে সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রীর নির্দেশে বন্ধ হলো অবৈধ বালু উত্তোলনের মহাযজ্ঞ

২০২০ সেপ্টেম্বর ২৫ ১৩:২৬:০৭
দিনাজপুরে সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রীর নির্দেশে বন্ধ হলো অবৈধ বালু উত্তোলনের মহাযজ্ঞ

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর : আবশেষে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এমপি’র কঠোর নির্দেশে বন্ধ হয়েছে দিনাজপুরের খানসামায় ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলনের মহাযজ্ঞ।

চলতি বছরের শুরু থেকেই করোনার পরিস্থিতির মধ্যেও বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা উপেক্ষা করে প্রকাশ্যে খানসামায় চলছিলো ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। এতে আত্রাই নদীর ভু-প্রাকৃতিক ও পরিবেশ মারাত্মক হুমকির সম্মুখিন হয়ে পড়ে। এ নিয়ে উত্তরাধিকার ৭১ নিউজসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এমপি’র দৃষ্টি গোচর হয়।

তিনি এ বিষয় নিয়ে স্থানীয় খানসামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.মাহবুবুল ইসলাম, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ কামাল হোসেন এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক সাইফুল আযম চৌধুরী লায়নের সাথে কথা বলেন। তারা উভয়ে বাস্তবচিত্র তুলে ধরেন। বিশেষ করে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ কামাল হোসেন এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক সাইফুল আযম চৌধুরী লায়ন খানসামাকে বাঁচাতে খানসামায় ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলনের মহাযজ্ঞ বন্ধের জন্য জোর ভুমিকা রাখেন। ফলে খানসামায় ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলনের মহাযজ্ঞ বন্ধে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এমপি আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে কঠোর নিদের্শ প্রদান করেন।

বালু উত্তোলনের বেশ কয়েকটি ড্রেজার মেশিন, ক্রেং মেশিন অসংখ্য পাইপ, ড্রাম এবংঅবৈধভাবে স্থাপিত টোল আদায়ের ঘর সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন। খানসামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.মাহবুবুল ইসলাম এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ কামাল হোসেন তাৎক্ষনিকভাবে বিষয়টি অবৈধ বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের অবগত করে মালামাল সরিয়ে ফেলতে বলেন।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০ টার মধ্যে তিনটি ড্রেজার মেশিন, বেশকিছু পাইপ,ড্রাম সরিয়ে ফেলা হলেও এখনো কয়েকটি ড্রেজার মেশিন, এবং ক্রং মেশিন এবং অবৈধভাবে স্থাপিত টোল আদায়ের ঘর রয়েছে। তা আগামীকাল শুক্রবার বেলা ১২টার মধ্যে সরিয়ে ফেলা হবে বলে জানিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ কামাল হোসেন।

প্রসঙ্গতঃ দিনাজপুরের খানসামাতে কিছুতেই বন্ধ হচ্ছিলোনা অবৈধ পদ্ধতিতে বালু উত্তোলন। বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা উপেক্ষা করে প্রকাশ্যে খানসামায় চলছিলো ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। বীরগঞ্জের কাশিপুর বালুমহাল (খানসামায় হতো বালু উত্তোলন কার্যক্রম) এবং খানসামার গোবিন্দপুর (সরকারের ইজারা ছাড়াই) বালু মহালে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে পুরোদমে চলছিলো বালু উত্তোলনের মহাযজ্ঞ।

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০-এর ধারা ৫-এর ১ উপধারা অনুযায়ী, পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। ধারা ৪-এর (খ) অনুযায়ী, সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ। আইন অমান্যকারী দুই বছরের কারাদন্ড ও সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।

সেই সাথে এই অবৈধ বালু উত্তোলন এবং বিপণন সম্পূর্ণ বন্ধে চলতি সেপ্টেম্বর মানেই ৬৪ জেলা প্রশাসককে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে নির্দেশনা পত্র দেয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব তৌহিদ এলাহী স্বাক্ষরিত চিঠিটি ভূমি মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (জননিরাপত্তা বিভাগ) সচিব ও ৬৪ জেলার ডিসিদের পাঠানো হয়েছে।এতে বলা হয়েছে, ‘সম্প্রতি বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত সংবাদে দেখা যাচ্ছে, সরকারের বালুমহাল হিসেবে ঘোষিত এলাকা থেকে ড্রেজার মেশিন ব্যবহার করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আবার অনুমোদিত ইজারাদাররাও বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ অনুসরণ না করে বালু উত্তোলন করছেন। ফলে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতিসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় নদীভাঙন বৃদ্ধি পাচ্ছে; গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। সে কারণে অবৈধ বালু উত্তোলন এবং বিপণন সম্পূর্ণ বন্ধ করা প্রয়োজন।’

বলা বাহুল্য, বালু উত্তোলনের আধা কিলো মিটারের মধ্যেই খানসামা উপজেলা শহর, থানা, প্রশাননিক ভবন, সকল স্থাপনা, রাস্তাঘাট, সেতু রয়েছে। কিন্তু,ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে নেয়া হয়নি কোন পদক্ষেপ। এই অবৈধ বালু ইত্তোলনের ফলে আত্রাই নদী তার গতিপথ হারাচ্ছে, ভাংছে, পাড়, নদীতে বিলিন হচ্ছে, ফসলী জমি, ঘর-বাড়ি ও গাছ-পালা।

শুধু তাই নয়, কিছু মহা সড়কে চলাচলে অনুমোদন প্রাপ্ত ১০ চাকার ভারি যান (ট্রাক) এই বালু বহনে ব্যবহার করা হয় সেখানে। এতে এলাকার রাস্তা-ঘাট ভেঙে গেছে।চলসচলে অনুপযোগী হয়ে পরছে,খানসামা উপজেলার রাস্তা-ঘাট। এমন অভিযোগ এলাকার সর্বসাধারণের। স্থানীয় খানসামা উপজেলা চেয়ারম্যান আবু হাতেম উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিক হওয়ার আগে এই ১০ চাকার ট্রাক চলাচলের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ করলেও বর্তমানে নিশ্চুপ রয়েছেন। তার নীরবতার পেছনে রয়েছে,বিতর্কিত ওই বালু মহাল দু’টি’র সাথে তার এক ছেলেও জড়িত আছেন। এমন অভিযোগ এলাকাসীর।

এলাকাবাসী জানায়, আব্দুল গফুর নামে এক ব্যক্তি কাশিপুর বালু মহাল সরকারিভাবে ইজারা গ্রহণ করলেও তার সাথে জড়িয়ে পড়েছে, স্থানীয় উপজেলার চেয়ারম্যানের ছেলে,রিএনপি’র একজন বিতর্কিত ঠিকাদার ও ভাটার মালিকসহ আরো কয়েকজন। স্থানীয় ও জেলা পর্যায়ের কতিপয় ব্যক্তিবিশেষ অবৈধ ওই বালু মহাল থেকে সাপ্তাহিক উৎকোচ পাওয়ায় তা প্রকাশ্যে চলে অবৈধ বালু উত্তোলনের মহাযজ্ঞ।

(এস/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test