E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আশাশুনিতে ঘেরে বোমা ফেলে চিংড়ি লুট, আ. লীগ অফিস ভাঙচুর

২০২০ সেপ্টেম্বর ২৯ ১২:০২:১৬
আশাশুনিতে ঘেরে বোমা ফেলে চিংড়ি লুট, আ. লীগ অফিস ভাঙচুর

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়নের খাসটিয়া বিলের একটি চিংড়ি ঘেরে বোমা ফাটিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে মাছ লুটের অভিযোগ উঠেছে। সোমবার ভোর তিনটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে অহিদুল ও কুদ্দুসের পক্ষে রউফ মোড়লের নেতৃত্বে কাপষণ্ডা বাজারে আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করলে আওয়ামী লীগ নেতা রমজানের সহযোগী মহিরুদ্দিনের নেতৃত্বে হামলা প্রতিহত করার চেষ্টা করা হয়। রউফ ও রায়হানউদ্দিন খোকার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে চারটি বোমা ফাটানো হয়। ইটের আঘাতে এক নারীসহ উভয়পক্ষের চারজন আহত হয়। পুলিশ চলে যাওয়ার পর রাত ১১টার দিকে রউফ মোড়লের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ অফিস ও ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল চালকদের অফিস ভাঙচুর করা হয়।

এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, আগামি ২০২১ সালের খাজরা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে অহিদুল ও কুদ্দুস গ্রুপের লোকজন কাপষণ্ডা গ্রামের মিজানুর রহমানের খাসটিয়া বিলের ঘেরে এ বোমা হামলা চালিয়ে পরিকল্পিকভাবে মাছ লুটপাট করেছে। ভাঙচুর করা হয়েছে আওয়ামী লীগ অফিস।

কাপষণ্ডা গ্রামের মিজানুর রহমান জানান, শ্রীউলা গ্রামের বদরউদ্দিন চৌধুরীর কাছ থেকে পবনারদহ খালের পাশে ১৮ বিঘা জমি লীজ নিয়ে ১৯৯৫ সাল থেকে তিনি আনুলিয়া ইউনিয়নের খাসটিয়া বিলে চিংড়ি চাষ করে আসছেন। প্রতিদিনের ন্যয় তিনি রোববার রাতে ঘেরের বাসায় অবস্থান করিছেলেন। রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তার জামাতা পার্শ্ববর্তী ঘের থেকে পবনারদহ খালের বেড়িবাঁধে বেশ কয়েকটি টর্চ লাইটের আলো দেখতে পেয়ে মোবাইলে তাকে জানায়। তিনি উঠে টর্চের আলো দেখতে পান। একপর্যায়ে তিনি ঘুমিয়ে পড়লে সোমবার ভোর তিনটার দিকে তার ঘেরের বাসার পাশে একটি বোমা বিষ্ফোরনের শব্দে জেগে ওঠেন।

পরে আরো একটি বোমা তার ঘেরের বাসার পাশে কাদায় পড়ে বিষ্ফোরিত হয়নি। একপর্যায়ে তিনি আতঙ্কে পবনারদহ খাল পার হয়ে পরিতোষ সানার বাড়িতে যান। এরপরপরই সন্ত্রাসীরা তার ঘের থেকে জাল টেনে মাছ লুট করে নিয়ে যায়। তবে কাউকে তিনি চিনতে পারেননি। বিষয়টি তিনি পরিতোষ সানার মোবাইল থেকে তার এলাকার ইউপি সদস্য আরিফ বিল্লাহকে অবহিত করেন। খবর পেয়ে উপপরিদর্শক হাসানের নেতৃত্বে পুলিশ সোমবার ভোর ৫টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন।

এদিকে খাজরা এলাকার সাহেব আলী, আদর আলীসহ কয়েকজন জানান, গদাইপুরে আওয়ামী লীগ নেতা শরবৎ হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে খাজরা ইউনিয়নে নতুন করে রাজনৈতিক মেরুকরণ শুরু হয়। মামলার প্রধান আসামী খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিম পলাতক থাকায় তার প্রভাব ক্ষুন্ন করতে গদাইপুরের বাসিন্দা খুলনায় বসবাসকারি ঠিকাদার অহিদুল ও খাজরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান রুহুল কুদ্দুস যৌথভাবে কাজ শুরু করেন। এরমধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা কাপষণ্ডা গ্রামের রমজান আলী নিজেকে আগামি ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দিলে নতুন করে জল্পনা কল্পনা শুরু হয়। রমজানকে ডালিম চেয়ারম্যানের পক্ষের লোক হিসেবে মনে করে তাকে পরাস্ত করতে মিথ্যা মামলায় জড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। ইতিমধ্যে রমজানকে একটি মামলায় ২৫ নং আসামী শ্রেণীভুক্ত করা হয়।

স্থানীয়রা আরো জানান, অহিদুল ও কুদ্দুসের সমর্থকরা কয়েকদিন ধরে রমজানকে শায়েস্তা করার জন্য পরিকল্পনা করে আসছিল। এরই অংশ হিসেবে সোমবার ভোরে কাপষণ্ডার মিজানুর রহমানের খাসটিয়া বিলের ঘেরে পরিকল্পিত বোমা হামলা চালিয়ে রমজান ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নেয়। কাপষণ্ডা গ্রামের কেরামতের ছেলে বোমাবাজ ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দু’ ছেলে শরবৎ হত্যা মামলার আসামী মফিজুল ও হাফিজুল ইসলাম ওই ঘেরে বোমা হামলা চালায় বলে তারা আশঙ্কা করছেন।

তারা আরো জানান, মামলায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে রমজান ও তার কয়েকজন সমর্থক এলাকা ছাড়া হলে সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে অহিদুল ও কুদ্দুসের সমর্থক কাপষণ্ডার রউফ মোড়ল , রায়হানউদ্দিন খোকার নেতৃুত্বে কেরামতের ছেলে বোমাবাজ ইউসুফ আলী, তার দু’ ছেলে শরবৎ হত্যা মামলার আসামী মফিজুল ও হাফিজুল ইসলাম, লাকী বিল্লাহ, বাকী বিল্লাহ, রায়হান বিল্লাহসহ ৪০/৫০ জন কাপষণ্ডা বাজারে আওয়ামী লীগ অফিস ও ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল চালকদের অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে রমজান আলীর পক্ষের ময়নদ্দিনের নেতৃত্বে ২৫/৩০ জন রউফ ও রায়হান গ্রুপের লোকজনদের ধাওয়া করে।

এ সময় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় ইট পাটকেল ছোঁড়া হয়। একপর্যায়ে রউফ মোড়ল আওয়ামী লীগ অফিসের পাশে চারটি বোমা বিষ্ফোরণ ঘটনায়। ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে বাজার ছেড়ে পালানোর সময় রউফ বাহিনীর লোকজন রমজানের বোন হামিদা ও আব্দুল মজিদকে পিটিয়ে আহত করে। এরপরপরই ময়নুদ্দিনের লোকজন রউফ বাহিনীর সদস্য শুভ মোড়ল ও ছাকি মোড়লকে পিটিয়ে জখম করে। খবর পেয়ে সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে যেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ চলে যাওয়ার পর রাত ১১টার দিকে রউফ মোড়লের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ অফিস ও ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল চালকদের অফিস ভাঙচুর করা হয়।

তবে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল কুদ্দুস ও ঠিকাদার অহিদুল সাংবাদিকদের বলেন, মিজানুরের ঘেরে বোমা হামলা ও কাপষণ্ডা বাজারে আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা, ভাঙচুর ও মারপিটের সঙ্গে তাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই।

আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম কবীর বলেন, খাসটিয়া বিলে চকলেট বাজি ফুটিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে মাছ ধরে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। তবে একটি বোমা সাদৃশ্য বস্তু উদ্ধার করা হয়েছে ওই ঘরের বাসার পাশ থেকে। এ ঘটনায় মিজানুর রহমান বাদি হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে সোমবার রাতে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

সোমবার বিকেলে কাপণ্ডা বাজারে দু’পক্ষের ছোঁড়া ইটের আঘাতে চারজন সামান্য আহত হয়েছে বলে তিনি জেনেছেন। সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ অফিসের পাশে কয়েকটি শব্দ শুনেছেন বলে স্থানীয়রা তাকে জানিয়েছে। তবে সেটা বোমা নয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। রাত ১১টার দিকে আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে বলে তিনি শুনছেন।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test