E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শাহজাদপুরের এলজিএসপি প্রকল্পের টাকা হরিলুট !

২০১৪ আগস্ট ১৭ ১৫:৩৫:১৩
শাহজাদপুরের এলজিএসপি প্রকল্পের টাকা হরিলুট !

শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি : শাহজাদপুর উপজেলার এলজিএসপি- ২ প্রকল্পের  আওতায় ইউনিয়ন পরিষদের অনুকুলে প্রদত্ত বেসিক ব্লাক গ্রান্ট (বিপিজি), পারফরম্যান্স ব্লাক গ্রান্ট (পিবিজি) এর আওতায় ২০১৩-১৪ অর্থ বছরের অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর বেশীর ভাগই কাজ না করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তবে এ অভিযোগ প্রকল্পের সভাপতিরা অস্বীকার করেছে। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ১২টি ইউনিয়নে এই প্রকল্পের অধিনে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কমিউনিটি হাসপাতালে আসবাবপত্র ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, যাত্রী ছাউনি, রাস্তায় কালভার্ট নির্মাণ ও রাস্তা নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়নমুলক কাজের জন্য এ অর্থ বরাদ্ধ দেওয়া হয়। এ প্রকল্পগুলোর সভাপতিরা হলেন স্ব-স্ব ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যগন।
উপজেলা নির্বাহী অফিস সুত্রে জানা গেছে, এ উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের টিয়ারবন্দ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পোরজনা ইউনিয়নের পোরজনা এম,এন উচ্চ বিদ্যালয় ও বাশুরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৭নং হাবিুল্লাহনগর ইউনিয়নের হামলাকোলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন কাজের জন্য ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, উক্ত বিদ্যালয়গুলোর নামে বরাদ্দকৃত টাকা নাম মাত্র কাজ করে হরিলুট করা হয়েছে।

এদিকে গত শনিবার সরেজমিন শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ডের টিয়ারবন্দ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে এ বিদ্যালয়ের নামে এলজিএসপি-২ প্রকল্পের বরাদ্দকৃত ১ লাখ টাকা ব্যয়ে আসবাবপত্র সরবরাহের কথা থাকলেও সেখানে কোন আসবাবপত্র সরবরাহ না করে এ বিদ্যালয়ে ২টি সিলিং ফ্যান ও ১টি টিউবওয়েল মেরামত অসমাপ্ত রেখেই প্রকল্পের সভাপতি ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল মমিন পুরো টাকাই আত্মসাৎ করেছেন। এ বিষয়ে প্রকল্পের সভাপতি ইউপি সদস্য আব্দুল মমিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, প্রকল্পের সিংহভাগ টাকা চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন অফিসে দিতে হয়েছে। পোতাজিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম তালুকদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন স্ব-স্ব প্রকল্পের টাকা ওই প্রকল্পের সভাপতির ব্যাংক হিসাবে সরাসরি জমা হওয়ায় এ প্রকল্পের টাকা চেয়ারম্যাদের আত্মসাতের কোন সুযোগ নেই। এ বিষয়ে টিয়ারবন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল জলিল জানান, আসবাবপত্রের পরিবর্তে বিদ্যালয় ভবনসহ ল্যাট্রিন ও টিউবওয়েল মেরামতের কথা বলে আব্দুল মমিন মেম্বর বিদ্যালয়ের প্যাডে ১ লাখ টাকার আসবাবপত্র বুঝিয়া পাওয়া গেছে এই মর্মে একটি প্রত্যয়ন পত্র নিয়েছেন। এই প্রত্যয়ন পত্র নেওয়ার পর ওই প্রকল্পের সভাপতি আমার বিদ্যালয়ে ২টি সিলিং ফ্যান, ১টি টিউবওয়েল আংশিক মেরামত ও ১টি টয়লেট মেরামত করে দিয়ে প্রকল্পের সভাপতি আব্দুল মমিন মেম্বর আর কোন যোগাযোগ রাখেননি। তিনি আরো জানান, এবিষয়ে উক্ত প্রকল্পের ইউনিয়ন সমন্বয়কারী নাইমুল ইসলাম উজ্জলকে বিস্তারিত জানানো হলেও তিনি কোন পদক্ষেপ নেননি। এদিকে একই অর্থ বছরে উপজেলার পোরজনা ইউনিয়নের ৫ নং বাশুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জানালাসহ আসবাবপত্র নির্মাণের জন্য ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও কোন কাজ না করেই ওই প্রকল্পের সভাপতি সংরক্ষিত সাবেক মহিলা ইউপি সদস্য মাজেদা বেগমের বিরুদ্ধে কোন কাজ না করে পুরো টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে ওই বিদ্যালয়ের সদ্য বিদায়ী প্রধান শিক্ষক আতাহার আলী ও বর্তমানে বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনোয়ারা বেগমের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়, পোরজনা ইউনিয়নের সাবেক ইউপি মহিলা সদস্য ও প্রকল্প সভাপতি মাজেদা বেগম এ যাবৎকাল বিদ্যালয়ে কোন আসবাবপত্রই সরবরাহ করেননি।
এ বিষয়ে প্রকল্পের সভাপতি ইউপি মহিলা সদস্য মাজেদা বেগমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা হয়েছে সুবিধামত কোন এক সময় আমি আসবাবপত্র সরবরাহ করব। তবে ওই বিদ্যালয়ের সদ্য বিদায়ী প্রধান শিক্ষক আতাহার আলী ও বর্তমানে বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনোয়ারা বেগমের সাথে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তারা জানান, ওই মহিলা ইউপি সদস্য আসবাবপত্র সরবরাহ না করেই বিদ্যালয়ের প্যাডে মালামাল সরবরাহ করা হয়েছে এই মর্মে তিনি প্রত্যয়ন পত্র চাইলে বিদ্যালয় থেকে তা না দেওয়ায় প্রকল্পের সভাপতি বিদ্যালয়ের সাথে আর কোন যোগাযোগ রাখেননি। এদিকে একই ইউনিয়নের পোরজনা এম,এন উচ্চ বিদ্যালয়ে আসবাবপত্র সরবরাহের জন্য ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলে মাত্র ২৭ জোড়া স্কুল বেঞ্চ সরবরাহ করে ওই প্রকল্পের সভাপতি ১নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য এবং উক্ত বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি আমজাদ হোসেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নিকট থেকে সম্পুর্ন টাকার প্রত্যয়ন নিয়েছেন। এ বিষয়ে পোরজনা এম,এন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওয়ারেছ আলীর সাথে কথা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য আমজাদ আলীর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান বরাদ্দকৃত অর্থের সম্পুর্ন টাকার আসবাবপত্র সরবরাহ করা হয়েছে। এদিকে হাবিবুল্লাহনগর ইউনিয়নের হামলাকোলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসবাবপত্র সরবরাহের জন্য ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলে প্রকল্প সভাপতি ৫ নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য জালাল উদ্দিন মাত্র ১১ জোড়া বেঞ্চ সরবরাহ করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নিকট থেকে ১৮ জোড়া বেঞ্চ বুঝিয়া পাওয়া গেলে এই মর্মে একটি প্রত্যয়ন নিয়েছেন। এ বিষয়ে উক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লিটন আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য জালাল উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান যতটুকু বরাদ্দ ছিল তার সবটুকুই দিয়েছি। এ বিষয়ে এলজিএসপি-২ ও ইউপিজিপি প্রকল্পের জেলা সমন্বয়কারী মুক্তি রানী চক্রবতীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ অনিয়ম সম্পর্কে আমাদের জানা নাই । তিনি আরো জানান, প্রতিটি প্রকল্পের আওতাধিন স্ব-স্ব ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যদের সভাপতি করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা আছে এবং এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অধিনে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের কারিগরী বিষয়ে অভিজ্ঞদের নিয়ে একটি তদারকি কমিটি গঠন করা আছে। তিনি আরো জানান, প্রকল্পের সভাপতি এবং ইউপি চেয়ারম্যানের সমন্বয়েএ অর্থ যথাযথ ভাবে প্রকল্প কাজে ব্যয় করতে বলা হয়েছে। শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান , প্রথম ধাপের বরাদ্দের সময় আমি দায়িত্বে না থাকায় বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। তবে যদি কেউ কোন অভিযোগ করে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। চেয়ারম্যানগন জানান, প্রকল্পগুলোর কাজ এলজিএসপি-২ ও ইউপিজিপি প্রকল্পের ইউনিয়ন সমন্বয়কারী নাইমুল ইসলাম উজ্জলের সাথে সমন্বয় করেই করা হয়ে থাকে। উপজেলা পরিষদে গিয়ে এলজিএসপি-২ ও ইউপিজিপি প্রকল্পের ইউনিয়ন সমন্বয়কারীর কোন পদ আছে বলে জানা যায় নাই তবে নাইমুল ইসলাম জানানা তিনি এই প্রকল্পের সমন্বয়কারী। নাইমুল ইসলাম উজ্জলকে নিয়ে উপজেলা ব্যাপি মুখরোচক কথা রয়েছে যে, ৫’শ টাকার ছাগলে কোটি টাকার বাগান খেয়ে ছয়লাব করছে।
(এআরপি/এএস/আগস্ট ১৭, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test