E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

আসামি ধর্ষণ করেননি, ধর্ষক সাক্ষী!

২০২০ নভেম্বর ০২ ১৭:১৭:৫২
আসামি ধর্ষণ করেননি, ধর্ষক সাক্ষী!

পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি : বরগুনায় একটি ধর্ষণ মামলার সাক্ষীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে আসামিকে খালাস দিয়েছেন আদালত। রবিবার (১ নভেম্বর) বরগুনার নারী ও শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান এ রায় দেন। একই সঙ্গে দণ্ডিত ব্যক্তিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়।

দণ্ডপ্রাপ্ত এমাদুল হক বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার বাইনচটকি গ্রামের সেকান্দার জোমাদ্দারের ছেলে ও সাবেক ইউপি সদস্য। খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- একই এলাকার খবির গাজীর ছেলে মোহসিন ও অহেদ খানের ছেলে মোয়াজ্জেম।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি এক গৃহবধূ তার কন্যাকে ধর্ষণের অভিযোগে বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা করেন। মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত এমাদুল হক চার নম্বর সাক্ষী ছিলেন।

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, তার মেয়ে ২০১৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টায় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাইরে বের হলে খালাসপ্রাপ্ত আসামিরা পালাক্রমে ধর্ষণ করেন।

বাদী ঘুম থেকে ওঠলে মেয়েকে তার রুমে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করে মেয়ের জুতা ও ওড়নার সন্ধান পান। এরপরে সুপারি বাগান থেকে উদ্ধার করেন তিনি তার মেয়েকে।

তদন্ত শেষে পুলিশ মামলাটির সাক্ষী এমাদুলকে অভিযুক্ত করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। মামলাটির এজাহারে ৪ নম্বর সাক্ষী ছিলেন ওই এমাদুল হক। কিন্তু এই তদন্ত প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় তদন্তের আবেদন করা হলে এমাদুলকে অব্যাহতি দিয়ে পুনরায় চার্জশিটে অভিযুক্ত করা হয় মহসিন ও মোয়াজ্জেমকে।

আদালত সূত্র জানিয়েছে, ওই গৃহবধূর মেয়েকে ধর্ষণ করেন মামলার ৪ নম্বর সাক্ষী এমাদুল। পূর্বশত্রুতার প্রতিহিংসার কারনে এ ধর্ষণের অভিযোগটি চাপিয়ে দেয়া হয় প্রতিপক্ষ মহসিন ও মোয়াজ্জেমের ঘাড়ে। নির্দোষ দু'জনকে ফাঁসাতে সহায়তার হাত প্রসারিত করেন গৃহবধূর দিকে।

সবশেষে বেরোতে থাকে প্রকৃত রহস্য। মামলার বাদী আদালতে অভিযোগ করেন, এ মামলার সাক্ষী এমাদুল তার কন্যাকে ধর্ষণ করেন। এরপর এ ধর্ষণের অভিযোগ তার প্রতিপক্ষ মহসিন ও মোয়াজ্জেমের কাঁধে তুলে দিতে নানাভাবে ভয় দেখানো হয়। তাই তিনি নিরুপায় হয়ে মহসিন ও মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনতে বাধ্য হন। ঘটনা জানাজানির পরে দায়েরকৃত এই মামলায় সাক্ষী এমাদুল আটমাস হাজতবাস করেন। পরে আদালত বাদী ও সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও যুক্তিতর্ক পযার্লোচনা করে এমাদুলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

এ বিষয়ে আসামির আইনজীবী আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, রায়ের কপি হাতে পাইনি। হাতে পেলেই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব।

রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ পিপি মোস্তাফিজুর রহমান তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, ঘটনাটি একটি ঘৃণ্য ও জঘন্যতম ঘটনা। প্রতিবেশীকে ফাঁসাতে একটি স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে নিজে ধর্ষণ করেছেন। আবার পূর্ব শত্রুতার জেরে অন্যদের বিরুদ্ধে ধর্ষিতার মা কে বাদী বানাতে বাধ্য করে মিথ্যা মামলা করেছেন আসামী। এই জঘন্যতম ঘটনায় এমাদুল হককে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়েছেন আদালত।

এ ঘটনায় রবিবার বিকাল থেকে বরগুনা জেলা জুড়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

(এটি/এসপি/নভেম্বর ০২, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test