E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সন্তানের মুখে আহার তুলে দিতে মায়ের মাথার চুল বিক্রি!

২০২০ নভেম্বর ০৩ ২২:৪৫:১৯
সন্তানের মুখে আহার তুলে দিতে মায়ের মাথার চুল বিক্রি!

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : সন্তানের মুখে আহার তুলে দিতে নিজের মাথার চুল বিক্রি করে দিয়েছে, এক হতদরিদ্র মা।আর করোনা পরিস্থিতির কারণে অভাবী সংসারে চাহিদা মেটাতেই ঘটেছে এ ঘটনা। গল্পের মতো মনে হলেও বাস্তবেএ ঘটনাটি ঘটেছে দিনাজপুরে হাকিমপুর উপজেলায়। স্পটঃ হিলির পালিবটতলী গুচ্ছগ্রাম। মাত্র সাড়ে ৩০০ টাকায় মা নিজের মাথার সব চুল বিক্রি করে দিয়েছে। আর সেই টাকা দিয়ে সন্তানদের খাবার কিনে দিয়েছেন তিনি।

হৃদয়ে নাড়া দেয়ার মতো এ সংবাদ পেয়ে মধ্যরাতে খাদ্যসামগ্রি নিয়ে ওই অভাগা মায়ের বাড়িতে ছুঁটে যান হাকিমপুর (হিলি) উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রাফিউল আলম। শুধু তাই নয়, তাদের স্বামী-স্ত্রীর জন্য একটি কাজেরও ব্যবস্থা করে দেন তিনি (ইউএনও)।

এলাকাবাসী জানায়, ২৫ বছর বয়সী সোনালী বেগম একজন নবমুসলিম। তার বিয়ে হয়েছে, ৮ বছর আগে। তার এক ছেলে এক মেয়ে, স্বামী সোহাগ মিয়া এখন বেকার। আগে হোটেলে কাজ করতো। করোনার প্রাদুর্ভাবের ফলে হোটেলে চাকরি হারিয়ে সোহাগ সম্পূর্ণ বেকার হয়ে পড়েন। অনেক চেষ্টা করেও কোনো কাজ মেলাতে পারেননি সে। অভাব অনটনের সংসারে তাই কিছুদিন ধরে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের।গত দু’দিন সোনালী ভাতের হাড়িচড়াতে পারেনি চুলায় । নিজের ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে পারলেও ৭ ও ৪ বছরের দুই সন্তানের ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে এলাকায় চুল কিনতে আসা ব্যবসায়ীদের কাছে নিজের মাথা ন্যাড়া করে সমস্ত চুল মাত্র ৩০০ টাকায় বিক্রি করে দেন। চুল ব্যবসায়ী যখন বুঝতে পারলেন, অভাবের কারণে তিনি এই চুল বিক্রি করেছেন তখন তিনি আরো ৫০ টাকা বেশি দেন এই মাকে।

এ সংবাদ পেয়ে প্রাায় ১০ কিলোমিটার দূরের পালিবটতলী গ্রামে খাদ্যসামগ্রীর বোঝা নিয়ে মাঝরাতে হতদরিদ্র পরিবারটির কাছে ছুটে যান ইউএনও রাফিউল আলম।

এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় নবমুসলিম মা সোনালীর। তিনি জানান, ৮ বছর আগে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে মুসলমান হয়ে সোহাগকে বিয়ে করে। সংসারে তাদের এক ছেলে এক মেয়ে। স্বামীর স্বল্প উপার্জনে সন্তানদের নিয়ে, আর দুঃখ-সুখ ভাগাভাগি করে জীবন সংসার কাটিয়ে দিচ্ছিলেনতারা। কিন্তু,করোনার কারণে বেকার হয়ে পরেন স্বামী। কর্মবিমুখ হয়ে পড়া স্বামী অনেক কাজ খুঁজেছেন। কিন্তু,কোনো কাজ পায়নি তিনি । গত কয়েক দিন ধরে চুলায় ভাতের হাড়ি চড়েনি তাদের। তাই,সন্তানদের কষ্ট সহ্য করতে পারেননি তিনি। কোনো উপায় না পেয়ে চুলগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন। বিক্রি’র টাকা দিয়ে শান্তি মতো খেয়েছেন।

তিনি আরো জানান, সেদিন রাতে ইউএনও স্যার আমাদের বাড়িতে এসে ৮ দিনের খাবার দিয়ে গেছেন। আজকে আমাকে তিনি একটি সেলাই মেশিন এবং আমার সংসার আর সন্তানদের লালন-পালনের জন্য আমার স্বামীকে একটা ফুচকার দোকান করে দিয়েছেন। এমন দুর্দিনে স্যার যদি আমাদের পাশে না দাঁড়াতেন তাহলে বাচ্চাদের নিয়ে না খেয়ে থাকতে হতো।

ফুচকার দোকান পেয়ে সোহাগ আনন্দে উৎফুল্য হয়ে বলেন, আমি কোনো দিন ভাবতে পারিনি যে, স্যার এভাবে আমাদের পাশে দাঁড়াবেন? কয়েক মাস থেকে আমি বড় বেকারত্ব জীবন-যাপন করছিলাম। আজ থেকে আমি এই ফুচকার ব্যবসা শুরু করলাম। আমি আর বেকার থাকবো না। হাটে-ঘাটে আর বাজারে ঘুরে ফুচকা বিক্রি করবো। আমার সংসারে আর কোনো অভাব হবে না।

তিনি বলেন, ফুচকার গাড়িসহ সকল সরঞ্জাম এবং ফুচকা বানানোর জিনিসপাতি কিনে দিয়েছেন স্যার। সাথে কিছু অর্থ হাতে দিয়েছেন। আমার স্ত্রীকে একটা সেলাই মেশিনও দিয়েছেন। সে সেলাইয়ের কাজ করতে পারে। আমরা দু’জন মিলে কাজ করবো এবং সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করব।

এ বিষয়ে হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রাফিউল আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, গত কয়েকদিন আগে রাতে আমি জানতে পারি উপজেলার পালিবটতলী গচ্ছগ্রামে একটি অসহায় পরিবার সন্তানদের নিয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন এবং সন্তানদের মুখে আহার দিতে মা তার মাথার চুল বিক্রি করেছেন। এমন সংবাদ পাওয়ার পর আমি নিজে ওই পরিবারের জন্য কয়েকদিনের খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছি। যথা সাধ্য কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থাও করে

তিনি আরো বলেন, গত সোমবার (২ নভেম্বর) বিকেলে আমি ওই নবমুসলিম নারীকে একটি সেলাই মেশিন এবং তার স্বামীকে একটা ফুচকার গাড়িসহ সকল সরঞ্জাম কিনে দিয়েছি। এছাড়াও নবমুসলিম নারীকে উপজেলায় দর্জি কাজের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করে দিয়েছে।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ০৩, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test