E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শুটকি আহরণে সুন্দরবনের দুবলায় ছুটেছে ১৫ হাজার জেলে

২০২০ নভেম্বর ০৫ ২২:৪৭:২১
শুটকি আহরণে সুন্দরবনের দুবলায় ছুটেছে ১৫ হাজার জেলে

শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট : বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলার চরে শুটকি আহরন মৌসুমের প্রথম দিনে বৃহস্পতিবার ভোররাত থেকে ট্রলার- নৌকায় জালসহ চরে অস্থায়ী বসতি গড়ার সরঞ্জাম নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে। প্রথম দিনে প্রায় ১৫ হাজার জেলে ও মহাজন বাগেরহাটের মোংলা ও শরণখোলা উপজেলার লোকালয় থেকে ৭৫ নটিক্যাল মাইল দূরে বঙ্গোপসাগর উপকূলে পাঁচটি চরে সুন্দরবনের সামুদ্রিক মাছের সর্ববৃহৎ শুটকি পল্লীর উদ্যেশে নৌপথে রওনা দিয়েছে। নৌ-যাত্রার আগে তারা সেরে নিয়েছেন ধর্ম অনুযায়ী নৌকায় মিলাদ ও পূজার আনুষ্ঠানিকতাও। সুন্দরবন বিভাগের কাছ থেকে সরকারী অনুমতি (পাস পারমিট) নিয়েছেন বলে জানিয়েছে বন বিভাগ। সাথে নিয়েছেন সুন্দরবন বিভাগের সরকারী অনুমতি পত্র। সুন্দরবন বিভাগ এতথ্য নিশ্চিত করেছে ।

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, দুবলারচর, আলোরকোল, নারকেল বাড়ীয়া, শেলারচর ও মেহেরআলীর চরের সামুদ্রিক মাছ শুটকি অস্থায়ী পল্লীতে এবার জেলে-মহাজনদের করোনা স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে অনুমিত দেয়া হয়েছে। প্রথম দিনে প্রায় ১৫ হাজার জেলে ও মহাজন বাগেরহাটের মোংলা ও শরণখোলা উপজেলার লোকালয় থেকে বৃহস্পতিবার ভোররাত থেকে রওনা দিয়ে সন্ধ্যায় ৭৫ নটিক্যাল মাইল দূরে বঙ্গোপসাগর উপকূলে এসব শুটকি পল্লীতে পৌছাবে। প্রতিবছর নভেম্বর থেকে মার্চ পযর্ন্ত চলে এই এই অস্থায়ী পল্লী সামুদ্রিক মাছ শুটকির কাজ। ১৫ থেকে ২০ হাজার জেলে ও বহরদারা সুন্দরবন বিভাগের কাছ থেকে নির্ধারিত রাজস্ব দিয়ে অস্থায়ী শুটকি পল্লীতে অস্থায়ী ঘর করে সামুদ্রিক সাদা মাছসহ চিংড়ি ও কাঁকড়া আহরণ করে। সুন্দরবনের দুবলার চরের শুটকি পল্লীর জেলেরা কম-বেশি ৩০ প্রকার জাল ব্যবহার করে মাছ রোদে শুকিয়ে বিদেশে রপ্তানির জন্য উপযোগী করে তোলে।

সুন্দরবনের প্রান-প্রকৃতির কোন প্রকার ক্ষতি না কারাসহ করোনা বিধির বিষয়টি গুরুত্বেও সাথে দেখা ও ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দুবলা ফিসারম্যান গ্রুপের নেতৃবৃন্দদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও শুটকি আহরন মৌসুমে দুবলায় একটি অস্থায়ী চিকিৎসা কেন্দ্র থাকবে। গত ২০১৮-১৯ শুটকি আহরন মৌসুমে জেলেদের আহরিত ৪১ হাজর ৫৪ কুইনন্টাল শুটকি থেকে বন বিভাগ ২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ও ২০১৯-২০ মৌসুমে ৪৪ হাজর ৭১৩ কুইনন্টাল শুটকি থেকে বন বিভাগ ৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। আর এবার শুটকি খাত থেকে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট ধরাছে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। তবে আবহাওয়ার উপর নির্ভর করবে রাজস্ব আদায় কম-বেশি হতে পারে বলে জানিয়েছে তিনি।

বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার চাঁদপাই গ্রামের জেলে রহমত আলী (৫০) ও শরণখোলার হেদায়েত হোসেন (৪৮) মুঠোফোনে জানান, আমাদের মতো হাজার-হাজার জেলে নিয়ে মহাজনরা এবারও সুন্দরবনের শুটকি পল্লীতে যাচ্ছি। সেখানে সমস্যা অনেক। যেমন সেখানে কোন হাসপাতাল নেই, আমাদের কেউ অসুস্থ্য হলে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। কেউ অসুস্থ্য হওয়ার পর শরণখোলা ও মোংলা আনতে আনতে পথেও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আমরা চাই সেখানে একটি হাসপাতাল করা হোক। আসছে শীত মৌসুমের পুরাটাই জেলেদের থাকতে হবে সাগর ও সুন্দরবনের শুটকি পল্লীতে। তাই সেখানে করোনার প্রকোপ বাড়লে আমাদের পড়তে হবে চরম বিপদে। তাই চরে হাসপাতাল কিংবা চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র স্থাপনের দাবী আমার মতো সব জেলেদের।

জেলেদের এ যৌক্তিক দাবীর বিষয়ে সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই দুবলা চরের অস্থায় শুটকি পল্লীর ১৫ থেকে ২০ হাজার জেলে ও বহরদারা মাছ আহরণ ও শুটকি তৈরির কাজ করতে জড়ো হবে। সেখানে যেহেতু অনেক লোকের সমাগম ঘটবে তাই তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে সেখানে ভাসমান স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র স্থাপন জরুরী বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, তা না হলে ওখানে যে কোন একজন কোনভাবে সংক্রমিত হলে তা ছড়িয়ে যাবে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মাঝে।

(এসএকে/এসপি/নভেম্বর ০৫, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test