E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাদ্রাসা মাঠে ধান চাষ! খেলাধুলা বঞ্চিত কয়েক হাজার শিশু কিশোর

২০২০ নভেম্বর ০৬ ১৭:৫৮:৫৮
মাদ্রাসা মাঠে ধান চাষ! খেলাধুলা বঞ্চিত কয়েক হাজার শিশু কিশোর

সৈয়দ নুহু উল আলম নবীন, আমতলী (বরগুনা) : বরগুনার আমতলী উপজেলার পূর্ব পাতাকাটা মেহের আলী দাখিল মাদ্রাসা মাঠে খেলাধুলা বন্ধ করে ধান চাষ করেছে মাদ্রাসা সুপার মাওলানা মোঃ আব্দুল হাই ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আমান তালুকদার। মাঠে ধান চাষ করায় খেলাধুলা ও বিনোদন বঞ্চিত হচ্ছে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও এলাকার সহস্রাধিক শিশু ও কিশোর। খেলাধুলা বঞ্চিত হওয়ায় শিশু ও কিশোররা বিপদগামী হওয়ায় আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা। প্রভাবশালী আমান তালুকদার ও সুপার আব্দুল হাইয়ের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না এলাকাবাসী। তবে এ ঘটনায় এলাকার ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

জানা গেছে, উপজেলার তালুকদার বাজারে ১৯৮২ সালে পূর্ব পাতাকাটা মেহের আলী দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা হয়। ওই মাদ্রাসা সম্মুখে এক একর জমির খেলার মাঠ রয়েছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ওই মাঠে মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও এলাকার শিশু ও কিশোর খেলাধুলা করে আসছে। চাওড়া ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী একমাত্র মাঠে প্রতিদিন কয়েকশত শিশু ও কিশোর খেলাধুলায় মত্ত হয়। কিন্তু মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে ওই মাঠে খেলাধুলা বন্ধের পায়তারা করে আসছে কিন্তু এলাকাবাসীর চাপে ব্যর্থ হয়।

এ বছর প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের অজুহাত দেখিয়ে মাদ্রাসা সুপার মাওলানা মোঃ আব্দুল হাই ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোঃ আমান তালুকদারের যোগসাজসে মাঠে খেলাধুলা বন্ধ করে দেয়। এতে গত চার মাস ধরে ওই এলাকার শিশু ও কিশোর খেলাধুলা ও বিনোদন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে ওই মাঠে সুপার ও সভাপতি ধান চাষ করে। এতে পুরোপরি খেলাধুলা বন্ধ হয়ে যায়। মাঠে খেলাধুলা বন্ধ হওয়ায় এলাকার শিশু ও কিশোররা বিপদগামী হওয়ার আশঙ্কা করছেন অভিভাবকরা।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, মাঠে ধান চাষ করায় খেলাধুলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কিশোররা মাদক সেবনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এদিকে মাঠে ধান থাকায় মাদ্রাসা খুলে দিলে শিক্ষার্থীদের শরীরচর্চা ও জাতীয় সঙ্গিত পরিবেশনে সমস্যা হবে বলে ধারনা করছেন অভিভাবকরা। প্রভাবশালী আমান তালুকদার ও সুপার আব্দুল হাইয়ের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না এলাকাবাসী। তবে এ ঘটনায় এলাকার ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, মাদ্রাসা মাঠে ধানের চারা বেড়ে উঠছে। মাঠে ধান থাকার এলাকায় শিশু - কিশোররা খেলাধুলা করতে পারছে না।

মাদ্রাসার শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম, আতিকুল রহমান, আব্দুল্লাহ ও রোকনুজ্জামান রাফি বলেন, করোনাকালিন সময় মাদ্রাসা বন্ধ। এ সময় খেলাধুলা করে সময় পার করতাম কিন্তু মাদ্রাসা মাঠে ধান চাষ করায় আমরা খেলাধুলা করতে পারছি না, অলস সময় কাটাচ্ছি।

স্থানীয় কিশোর মঞ্জিল মিয়া বলেন, মাঠে ধান চাষ করায় খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। এই মাঠে প্রতিদিন অন্তত কয়েকশত শিশু ও কিশোর খেলাধুলা করতো। এখন খেলাধুলা করতে না পারায় শিশু ও কিশোররা বিপদগামী হচ্ছে। দ্রুত মাঠ পরিস্কার করে স্বাভারিক অবস্থা ফিরে আনার দাবী জানাই।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ জাকির হোসেন মৃধা বলেন, মাদ্রাসা মাঠে খেলাধুলা না করতে পারায় শিশু ও কিশোররা বিপদগামী হচ্ছে। চাওড়া ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী তালুকদার বাজারের এ খেলার মাঠ দ্রুত পূর্বের অবস্থানে ফিরিয়ে আনার দাবী জানাই।

মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য মোঃ জব্বার মল্লিক বলেন, মাদ্রাসা মাঠে ধান চাষ করা অন্যায়। আমি কমিটির সদস্য হয়েও ধান চাষ করার বিষয়টি জানিনা।

মাদ্রাসার সুপার মোঃ আব্দুল হাই বলেন, মাদ্রাসার নামে ৬.১৮ একর জমি রয়েছে। ওই সকল জমি বে-দখল। তিনি আরো বলেন, মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আমার তালুকদার ওই মাঠে ধান চাষ করেছে। এটা একদিকে অন্যায় আবার অন্যদিকে ন্যায় করেছে।

মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোঃ আমান তালুকদার মাঠে ধান চাষ করার কথা স্বীকার করে বলেন, বহিরাগত ছেলেরা এসে মাঠে আড্ডা দেয় এবং মাদক সেবন করে, বিধায় খেলাধুলা বন্ধ করে ধান চাষ করেছি।

আমতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ জিয়াউল হক মিলন বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাঠে ধান চাষ করা বে-আইনী। বিষয়টি তদন্ত করে প্রমানিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(এন/এসপি/নভেম্বর ০৬, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test