E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরা সদর রিসোর্স সেন্টারের সহকারি ইনসট্রাক্টর ইয়াছিন আলীর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ

২০২০ নভেম্বর ২৮ ১৫:১৬:২৩
সাতক্ষীরা সদর রিসোর্স সেন্টারের সহকারি ইনসট্রাক্টর ইয়াছিন আলীর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : আশাশুনি উপজেলার বড়দল গ্রামের মৃত আবু বক্কর ছিদ্দিকের ছেলে ইয়াছিন আলী বর্তমানে পেশাগত কারণে শহরের মুনজিতপুরে বসবাস করেন। তার ভাই আব্দুল আজিজ উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি।  দারা মৃত ইয়ার আলী  ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ে উপজেলা পিস কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মা জবেদা খাতুন চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে জামায়তের মহিলা রোকন প্রার্থী ছিলেন। তাদের বাড়িতে নিয়মিত জামায়তের বৈঠক বসতো। 

২০১৫ সালের ১২ জুলাই থেকে সাতক্ষীরা সদর রিসোর্স সেন্টারে সহকারি ইনসট্রাক্টর হিসেবে কর্মরত। তিনি কখনো নকল দাঁড়ী, কখনো ক্লিন সেফ, কখনো মাথা মুড়িয়ে টাকা করে, কখনো নকল চুল লাগিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম করে থাকেন। ১৯৯৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করাকালিন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে যেয়ে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়ে জেলে যান। এ তথ্য গোপন রেখে তিনি বেনাপোল কাষ্টমস অফিসে যোগদান করলে পরবর্তীতে অনিয়ম ও দূর্ণীতির কারণে তার চাকুরি যায়। এ তথ্য গোপন রেখে তিনি ২০০৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বাগেরহাট জেলার মোল্লারহাট রিসোর্স সেন্টারে দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মচারি হিসেবে যোগদান করেন। অনিয়ম ও দূর্ণীতির কারণে ২০০৯ সালের ২২ এপ্রিল তাকে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে শাাস্তিমূলক বদলী করা হয়।

বছর পার হওয়ার আগেই প্রভাব খাটিয়ে তিনি ২০১০ সালের ১৪ জুন সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা রিসোর্স সেন্টার ও ২০১৫ সালের ১২ জুলাই সাতক্ষীরা সদর রিসোর্স সেন্টারে সহকারি ইনসট্রাক্টর (মাস্টার ট্রেইনার) হিসেবে বদলী হয়ে আসেন। সেখান থেকে দীর্ঘ পাঁচ বছর একই স্থানে চাকুরি করার সুবাদে বিগত কর্মস্থলসহ বর্তমানে কর্মস্থলের বেশ কয়েকজন শিক্ষক, শিক্ষিকা, তাদের আত্মীয়স্বজন, আইনজীবী, আদালতের কর্মচারী- কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা ও সাংবাদিকদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে নিজেকে বড় মাপের সরকারি কর্মকর্তা ও আইনজীবী পরিচয়ে অফিস ফাঁকি দিয়ে, বা অফিসে হাজিরা দিয়ে বিদ্যালয় পরিদর্শণের নামে নিজের মামলা পরিচালনা করে বিভিন্ন সরকারি বিল তুলেছেন। তার সরকারি অফিস যেন বিচারপ্রার্থীদের কাছে আইনজীবীর চেম্বার।

নিজের বাকচাতুর্যে চাকুরীজীবী, ব্যবসায়ি, রাজনীতিবিদ ও বিত্তশীলদের বিভিন্ন নারী দিয়ে মোবাইলে প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলে টাকা আদায় করে থাকেন। এজন্য তিনি কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করালিন কনিষ্ট ও জ্যেষ্ঠ প্রশাসনে কর্মরত ভাইদের ব্যবহার করে থাকেন।

কাস্টমস এ চাকুরি করাকালিন সময়ে বড়দল গ্রামের নুরজ্জামান শেখের মেয়ে মরিয়মকে ও ধোনা সরদারের মেয়ে তানজিলাকে ভারতের বোম্বে পতিতালয়ে বিক্রি করে দায়ভার অন্যের উপর চাপানোর অভিযোগ রয়েছে ইয়াছিন আলীর বিরুদ্ধে।১৯৯৬ সালে একজন ভিক্ষুককে হত্যা এবং ২০১৮ সালে আবুবকর সিদ্দিক সানার ছেলে তৌহিদ সানাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে জেল থেকে জামিন নিয়ে বাড়িতে আসলে ভাড়াটিয়া লোক দিয়ে পিটিয়ে হত্যার দায়ভার অন্যের উপর চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ইয়াছিন আলীর বিরুদ্ধে।

বাবা জমি বিক্রি করলেও তা অস্বীকার করে সবুর মালির বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে ওই জমি জবরদখলের অভিযোগ রয়েছে ইয়াছিনের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া নিজ গ্রামের নজরুল ইসলাম থানায় প্রতারণার অভিযোগ করায় ২০১৭ সালে তাকে পুলিশ ক্লাবের সামনে থেকে উপপরিদর্শক নাজমুল হোসেনকে দিয়ে মারতে মারতে থানা লকআপে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে ইয়াছিনের বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও নিজ গ্রামের মুর্শিদা খানমের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। খুলনা শহরের তিনটি স্থানে পাঁচ কাঠা করে ১৫ কাঠা জমি পাঁচ কোটি টাকারও বেশি দিয়ে স্বনামে- বেনামে কিনেছেন তিনি। সাতক্ষীরা ও খুলনায় এক কোটি ৩২ লাখ টাকার চেক ডিজঅনারের ১৩টি মামলা নিজে অথবা ভাড়াটিয়া লোক দিয়ে পরিচালনা করে আসছেন তিনি।

এ ছাড়াও ২০০৮ সাল থেকে তিনি খুলনা, পাইকগাছা ও সাতক্ষীরা আদালতে তিনি নিজে আসামী হয়ে বা বাদি হয়ে ছুটি না নিয়েই স্কুল ভিজিট দেখিয়ে আরো ২৭টি মামলা পরিচালনা করে থাকেন। ২০১৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর দৈনিক সাতনদী পত্রিকায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের কর্তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ শিরোনামে” বিদ্যালয় পরিদর্শনের নাম করে ভয়ভীতি দেখিয়ে সহকারী ইন্সট্রাক্টর ইয়াছিন আলী টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়। তাকে থানা ও আদালত পাড়ায় বেশী দেখা যায়সহ বিভিন্ন খবর প্রকাশিত হয়।

খুলনা, পাইকগাছা, সাতক্ষীরা ও আশাশুনি এলাকার কিছু ভাড়াটিয়া দালালের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সরলতার সুযোগে সুদে টাকা খাটিয়ে, সরকারী খাস জমি দখল, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপ-সচিব জনাব আ.ন.ম তরিকুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হলের ছোট ভাই, বড় ভাই ও কর্মচারীদের নাম ভাঙ্গিয়ে ৯০’মাট জরিপে নাম বসিয়ে দেওয়ার নাম করে, এনজিও, ব্যাংকের ম্যানেজার ও লোন কর্মকর্তার নাম ভাঙ্গিয়ে লোন করিয়ে দেওয়ার নাম করে তাদের কাছ থেকে কৌশলে ফাঁকা চেক, নন জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্প, জমির মূল দলিল, এন আইডি ও ছবি সংগ্রহ করে পরবর্তীতে সেই সকল ফাঁকা চেক ও ষ্ট্যাম্পে মাজা ঘোষা, জাল-জারিয়াতি করে নিজের ইচ্ছামত টাকার অংক বসিয়ে নিজে বাদী /ভাড়াটে দালালের মাধ্যমে বাদী বানিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করে একের পর এক নিরীহ
গরীব মানুষকে দিনের পর দিন হয়রানি করার অভিযোগ রয়েছে ইয়াছিন আলীর বিরুদ্ধে।

তার এনআইডি নং-৪৭৯৫১২৪৪৪৯৪৭৬ ব্যবহার করে (১) সোনালী ব্যাংক লিঃ, সাতক্ষীরা শাখার ২৮১৮১০০২৩২৩০৫ নং হিসাব, (২) সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংক লিঃ, সাতক্ষীরা শাখার ০০২৮১২০০৩৪১৬৬ নং হিসাব, (৩) প্রাইম ব্যাংক লিঃ, সাতক্ষীরা শাখা, (৪) ইসলামী ব্যাংক লিঃ, লোকাল অফিস, মতিঝিল শাখা, ঢাকার ৫৪৫৮৫ নং হিসাব এর মাধ্যমে তিনি অবৈধ ও বিপুল অংকের টাকা লেনদেন করে আসছেন।
তবে জানতে চাইলে ইয়াছিন আলী সাংবাদিকদের বলেন, এ সব অভিযে গের কোন ভিত্তি নেই। প্রতিপক্ষরা তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে সুনাম নষ্ট করছে।

(আরকে/এসপি/নভেম্বর ২৮, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test