E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ধর্ষিতার ভাইকে অপহরণের পর নির্যাতন : ১১ দিনেও গ্রেপ্তার নেই

২০২০ নভেম্বর ২৮ ১৫:২৭:১৪
ধর্ষিতার ভাইকে অপহরণের পর নির্যাতন : ১১ দিনেও গ্রেপ্তার নেই

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ধর্ষিতার ভাইকে অপহরণের পর শরীরে বিষাক্ত ইনজেকশান পুশ করে হাত, পা ও মুখ বেঁধে নির্যাতনের পর বস্তায় ভরে হত্যার চেষ্টার ঘটনায় ১১ দিনেও কোন আসাামীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। উপরন্তু আসামী  আবু বক্করের ভি হাফিজুল ইসলাম, সুকুমারের ভাই মনোজ মণ্ডলসহ কয়েকজন ভিকটিম পরিবারের সদস্যদের হুমকি দিচ্ছে। তারা  ঘেরের মাছ লুটপাট করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। র‌্যাব-৬ এর কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর ও শফিকুল ইসলাম শুক্রবার বিকেলে ভিকটিমের বাড়িতে যেয়ে পরিবারের সদস্য ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেয়ে ভিকটিমের সঙ্গে কথা বলেছেন। তার  চিকিৎসা সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়েছেন।

এদিকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই যুবকের অবস্থার ক্রমশঃ অবনতি হচ্ছে। ইতিমধ্যেই তাকে মেডিসিন ওয়ার্ড থেকে সার্জিকাল বিভাগে স্থানান্তর করা হয়েছে।

মামলার বিবরণে জানা যায়, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার যাদবপুর গ্রামের আবু বক্কর ছিদ্দিক একই গ্রামের এক নারীকে বিয়ের নাটক করে অন্তঃস্বতা হওয়ার পর স্ত্রী হিসেবে বাড়িতে নিয়ে যেতে বলায় তাকে ২০১৮ সালের ১১ জুন সাতক্ষীরা কোর্টে এফিডেফিডের কথা বলে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে খুলনার গল্লামারি ভুতের বাড়ি এলাকায় নিয়ে যায় আবু বক্কর ছিদ্দিক, গোলাম মোস্তফা ও সুকুমার মণ্ডল। গর্ভপাত ঘটাতে রাজী না হওয়ায় তাকে একটি ঘরে আটক রেখে ওই তিনজন গণধর্ষণ করে। পরদিন তার গর্ভপাত ঘটানোর কয়েকদিন পর আবু বক্কর ছিদ্দিকের বোন রোজিনার মাধ্যমে বাড়ির পাশে ফেলে রেখে যাওয়া হয়।

এ ঘটনায় ধর্ষিতা ওই নারী ওই তিনজনের নাম উল্লেখ করে ওই বছরের ২৬ জুলাই সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করে। মামলাটি এক বছর যাবৎ (নাঃ শিশু-৪৯/১৮) রায়ের অপেক্ষায় আছে। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আসামীরা বাদি ও তার পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন সময় হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল। সবশেষ গত ১৩ নভেম্বর যাদবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে রহিমের দোকানে ধর্ষিতার ভাইেেক মোবাইলে ডেকে মামলা তোলার জন্য হুমকি দেয় দেবীপুর গ্রামের অমেদ আলীর ছেলে ফজলুর রহমান।

মামলার বিবরনে আরো যানা যায়, ধর্ষিতার ছোট ভাই ১৭ নভেম্বর মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে অসুস্থ মায়ের জন্য ঔষধ কিনে ফকির গাজীর মোড়ে নামার পরপরাই অজ্ঞাতনামা তিনজনসহ ধর্ষণ মামলার মামলার আসামী আবু বক্কর ছিদ্দিক, সুকুমার মণ্ডল ও গোলাম রসুল তার গলায় দা ধরে পার্শ্ববর্তী আজিবরের মেশিন ঘরের পিছনের বাগানে নিয়ে যায়। শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের পর সেখানে গলায় দা ধরে তার বাম হাতে দু’টি ইনজেকশান পুশ করা হয়। এরপর একটি ইঞ্জিনচালিত গাড়িতে করে তাকে সোয়ালিয়াা ব্রীজের পাশে নিয়ে যেয়ে হাত , পা ও মুখ বেঁধে ফেলে দ্বিতীয় দফায় মারপিট করা হয়। পরে তাকে একটি বস্তার মধ্যে ঢুকিয়ে ব্রীজের সাথে ঝুলিয়ে দেওয়ার সময় একটি পিকআপের আলো দেখতে পেয়ে অপহরণকারিরা পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে স্বজনরা মঙ্গলবার দিবাগত রাত দু'টোর দিকে সোয়ালিয়া ব্রীজের পাশ থেকে দু’ হাত, দু’ পা ও মুখ বাঁধা বস্তায় ভরা মুমূর্ষ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে সে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

ধর্ষণের মামলা তুলে না নেওয়ায় ওই যুবককে পরিকল্পিতভাবে অপহরণের পর নির্যাতন চালিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে বলে নির্যাতিত পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ। তবে মামলার তদন্তকাাির কর্মকর্তা শ্যামনগর থানার উপপরিদর্শক মামলার পর থেকে মেডিকেলে চিকিৎসাধীন নির্যাতিত যুবক সম্পর্কে কোন খোঁজ খবর নেননি।
এদিকে র‌্যাব- ৬ এর সাতক্ষীরা শাখার কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর ও শফিকুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার বিকেলে তারা নির্যাতিত যুবকের বাড়িতে যেয়ে ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছেন। ওই যুবকের বাম পা ও হাতের শিরা ক্রমশঃ ফুলে যাচ্ছে। গলায় অত্যাধিক ব্যাথার কারণে সে খাদ্য গিলতে পারছে না বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছে। তবে এ ঘটনায় গত ১১ দিনে কোন আসামী গ্রেপ্তার না হওয়ায় তারা হাতাশা ব্যক্ত করেন।

মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা শ্যামনগর থানার উপপরিদর্শক আইনুনদ্দিন শনিবার দুপুর একটায় এ প্রতিবেদককে জানান, এই মুহুর্তে তিনি সোয়ালিযা ব্রীজের উপর রয়েছেন। স্থানীয় যারা রাতে ওই যবুবকে ফেলে যাওয়া ও উদ্ধার হওয়া সম্পর্কে বলতে পারেন তাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করছেন তিনি। শুক্রবার রাতেই মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। আসামীদের ধরার জন্য অভিযান অব্যহত রয়েছে। এজাহার নামীয় আসামীরা পলাতক রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, ধর্ষিতার ভাইকে অপহরণ করে নির্যাতনের পর হত্যার চেষ্টার ঘটনায় শ্যামনগর উপজেলার যাদবপুর গ্রামের খোকন মণ্ডলের ছেলে সুকুমার মণ্ডল (৩৮), একই উপজেলার দেবীপুর গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে মাদ্রাসা শিক্ষক গোলাম রসুল(৩৯) ও ফুলবাড়ি গ্রামের আব্দুল মোমিনের ছেলে আবু বক্কর ছিদ্দিকসহ(৪০) অজ্ঞাতনামা তিনজনের বিরুদ্ধে ওই যুবক বাদি হয়ে থানায় ২০.১১.২০ তারিখে ২০ নং মামলা দায়ের করেন।

(আরকে/এসপি/নভেম্বর ২৮, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test