E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ধলেশ্বরী নদীতে অবৈধ পাঁচ ড্রেজারের দাপটে ঝুঁকিতে আশ্রয়ণ প্রকল্প

২০২০ নভেম্বর ৩০ ১৮:২৭:১৩
ধলেশ্বরী নদীতে অবৈধ পাঁচ ড্রেজারের দাপটে ঝুঁকিতে আশ্রয়ণ প্রকল্প

রঞ্জন কৃষ্ণ পন্ডিত, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইল সদর উপজেলার দাইন্যা ইউনিয়নের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ধলেশ্বরী নদীর চর ফতেপুর থেকে শ্যামার ঘাট পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবৈধ পাঁচটি ড্রেজারে বেপরোয়া বালু উত্তোলনের কারণে আশ্রয়ণ প্রকল্প ও শ্যামারঘাট ব্রিজটি ঝুঁকিতে পড়েছে। আগামি বর্ষায় সরকারের আবাসন প্রকল্পের ১২০টি পরিবারের জন্য নির্মিত ঘর ও শ্যামারঘাট ব্রিজ নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। 

সরেজমিনে জানা যায়, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার দাইন্যা ইউনিয়নের চরফতেপুর গ্রাম থেকে শ্যামারঘাট পর্যন্ত ধলেশ্বরী নদীর প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে পাঁচটি বাংলা ড্রেজার বসিয়ে অবাধে দিনরাত বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

দাইন্যা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার মাদারী ও তার ছেলে রুবেল, স্থানীয় কবির তালুকদার ও কালাম নামে চার বালু ব্যবসায়ীধলেশ্বরী নদীর চর ফতেপুর এলাকায় এবং স্থানীয় লিটন ও ফজলু নামে দুই বালু ব্যবসায়ী শ্যামারঘাটে নির্মিত ব্রিজের পাশ থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছেন। এছাড়া বাঘিল ইউনিয়নের বেপারী পাড়া গ্রামেরধলেশ্বরী নদীর অংশে স্থানীয় সুখচাঁন, শাহজাহান, শফিকুল নামে তিন বালু ব্যবসায়ী বাংলা ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন। ওই বালু ব্যবসায়ীরা এলাকার বাড়ি ও পুকুর ভরাট করার চুক্তি নিচ্ছেন।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, অবৈধ বাংলা ড্রেজারে বালু উত্তোলনের ফলে তাদের ফসলী জমি, বসতবাড়ি ও গাছপালা নদী ভাঙনের কবলে পড়ছে। গত তিন বছর যাবৎ নিয়মিত অবৈধ বাংলা ড্রেজার চালানো হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থায়ীভাবে ড্রেজার বন্ধ করার কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে মাঝে মাঝে পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন এসে ড্রেজারের পাইপ ভাংচুর করলেও পরদিন থেকেই আবার চালু করা হয়। এভাবে নিয়মিত বাংলা ড্রেজার চাণোর ফলে নদী ভাঙনের শঙ্কা তীব্রতর হচ্ছে। তারা জানায়, ৮০ হাজার টাকা চুক্তিতে শ্যামার ঘাট এলাকার সিদ্দিক ফকিরের বাড়ি ভরাটের কাজ নিয়েছেন লিটন ও ফজলু নামে দুই ড্রেজার ব্যবসায়ী। বিভিন্ন উপজেলায় ড্রেজার বন্ধে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও সদর উপজেলায় কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছেনা। এলাকাবাসী স্থায়ীভাবে বাংলা ড্রেজার বন্ধের দাবি জানান।

বক্তব্য রেকর্ড না করার শর্তে বাংলা ড্রেজার ও বালু ব্যবসায়ী লিটন বলেন, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই তারা বালু উত্তোলন ও বিক্রি করছেন। ব্রিজের নিচ থেকে বালু উত্তোলনে অনুমতির উত্তর এড়িয়ে যান তিনি।

ড্রেজার ও বালু ব্যবসায়ী এবং দাইন্যা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য মোতাল্লেব হোসেন মাদারী জানান, বর্তমানে ড্রেজার ব্যবসা পরিচালনা করছে তার ছেলে রুবেল। অবৈধ হওয়ায় গত দুই বছর ধরে তিনি ব্যবসা বন্ধ রেখেছেন। বর্তমানে অন্যরা ব্যবসা করায় তিনি ছেলেকে দিয়ে বালু উত্তোলন শুরু করেছেন। সবার বাংলা ড্রেজার বন্ধ হলে তিনিও বন্ধ করে দেবেন।

সত্যতা নিশ্চিত করে দাইন্যা ইউপি চেয়ারম্যান লাবলু মিয়া জানান, ওয়ার্ড মেম্বার মোতাল্লেব মাদারী, রুবেল, কালামসহ বেশ কয়েকজন নিয়মিত বাংলা ড্রেজারে বালু উত্তোলনের ব্যবসা চালাচ্ছেন। তিনি স্থানীয় প্রশাসনকে একাধিকবার অবগত করার পরও অবৈধ বাংলা ড্রেজারে বালু উত্তোলন করে বিক্রির ব্যবসা বন্ধ হয়নি। বন্ধ না হওয়ায় দাইন্যা সহ আমপাশের ইউনিয়নে ড্রেজার ব্যবসায়ীর সংখ্যা বাড়ছে।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইদুল ইসলাম জানান, খোঁজ নিয়ে অবৈধ বাংলা ড্রেজার বন্ধ করে দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. ছানোয়ার হোসেন জানান, অবৈধ বাংলা ড্রেজার বন্ধে ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

(আরকেপি/এসপি/নভেম্বর ৩০, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test