E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নালিতাবাড়ীর কৃষকদের আর্তি : সাহায্য নয়, বাঁধটা ঠিক কইরা দেন

২০১৪ আগস্ট ২০ ১৭:৫৭:১৬
নালিতাবাড়ীর কৃষকদের আর্তি : সাহায্য নয়, বাঁধটা ঠিক কইরা দেন

শেরপুর প্রতিনিধি : শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার খালভঙ্গা এলাকার ভোগাই পারের কৃষক আলী হোসেন (৬২)। কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে তিনি বালির আস্তরণ পড়া আমন ক্ষেতের দিকে তাকিয়ে কেবলই দীর্ঘশ্বাস ফেলছিলেন। একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘ঢলের পানিতো নামলে, কিন্তু বুকের ভেতর যে পাথর চাপা কষ্ট এটা কিবাই নামবো।’ তিনি বলেন, পাহাড়ি ঢলে ভোগাইর বাঁধ ভাইঙ্গা বালু পইরা সব আবাদ খাইয়া দিছে।

এই জমিনে আর কোন ফসল অবোনা। ২ একর ২ কাঠা জমি ৪০ হাজার টাকায় এক বছরের জন্য মেদি (বন্ধক) নিছিলাম। বোরোর আবাদ এক ফসল করছি। আর এখন আমন লাগাইছিলাম। ভাবছিলাম এই আমনের ফসল বেইচ্চা যেই টাকা পামু ওই টাকা দিয়া ফিরবার আরো এক বছরের জন্য জমিডা মেদি নিমু। কিন্তু সব শেষ। আমার স্বপ্নটা বালুর নীচেই চাপা পইরা গেলো।
ফসলি জমিতে বালির আস্তরন পড়ায় কেবল এই ক্ষুদ্র কৃষক পরিবারটিই নয়, আরও বেশ কয়েকটি প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষক পরিবারের স্পœ ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, পাহাড়ি ঢলে খালভাঙ্গা এলাকায় ভোগাই নদীর তীররক্ষা বাঁধ কাম রাস্তা ভেঙ্গে বালির আস্তরন পড়া জমিতে কোন ফসলই হবেনা। তাদের চোখেমুখে এখন একরাশ হতাশা। কথা প্রসঙ্গে ওই এলাকার ক্ষুদ্র কৃষক নিজাম উদ্দিন বলেন, পাহাড়ি ঢলে আমার ২ কাঠা জমির (৫ শতাংশ ১ কাঠা) আবাদ করা আমন ধান ক্ষেত বালুর চাপা পড়েছে। তিনি জানান, ওই এলাকার আব্দুল হালিমের এক একর, জাহেদ আলীর ৭ কাঠা, এমদাদ হোসেনের ৪ কাঠা, স্বপন পালের ৫ কাঠা, প্রশান্ত পালের ২ কাঠা, রশিদ মিয়ার ১০ কাঠা, আব্দুল মোতালেবের ১০ কাঠা পাহাড়ি ঢলে জমিতে বালির আস্তরন পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব কৃষকরা জানান, ঢলের পানি আসলেই আমাদের খালভাঙ্গা এলাকায় বাঁধ কেবলই ভাঙ্গে। ইতোমধ্যে অনেকের ঘরবাড়ী নদীতে ভেঙ্গে পড়ছে। ঘরবাড়ী হারিয়ে কেউ কেউ এলাকা ছেড়ে বউ-পোলাপান নিয়ে অন্য এলাকায় চলে গেছে। আরো অনেকেরই ঘর বাড়ি ভাঙ্গনের হুমকির মুখে রয়েছে। আমরা এর একটা স্থায়ী বিহিত-ব্যবস্থা চাই। খালভাঙ্গা এলাকার কৃষক আলী হোসেন, আব্দুল হালিম ও নিজাম উদ্দিন বলেন, আমগরে ফসল-আবাদ, ফসলি জমি ক্ষতি যা হবার হইছে। কিন্তু আর যাতে ক্ষতি না হয় এর জন্য ভোগাই নদীর পারটি সিমিটের ব্লক করে বাঁধ দেওয়া হোক। আমরা সাহায্য চাইনা। বানডা ঠিক কইরা দেন। সরকারের কাছে, নেতাগরে কাছে, প্রশাসনের কাছে এইডাই আমগর দাবি।
কয়েকদিনের টানাবর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গত ১৫-১৮ আগষ্ট নালিতাবাড়ীতে ভোগাই নদীর তীররক্ষা বাঁধের তিনটি ভাঙন অংশ দিয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকে প্রায় শতাধিক হেক্টর জমির রোপা আমন আবাদ তলিয়ে যায়। ঢলের পানি নেমে গেলেও প্রায় ১০ হেক্টর আবাদি জমিতে বালির আস্তরন পড়ে অনাবাদি হয়ে পড়ে। উল্লেখ্য অবিরাম বর্ষনের ফলে াগত ৭ জুলাই ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নালিতাবাড়ী পৌরসভার খালভাঙ্গা এলাকার ভোগাই নদীর তিনটি অংশে ৩০০ মিটার বাঁধ কাম সড়ক ভেঙে যায়। এছাড়া, শুক্রবার ঢলের পানিতে চেল্লাখালি নদীর সন্নাসীভিটা এলাকায় নদীর বাঁধের ৫০ মিটার ভেঙে যায়। ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর পানি উজানে কমতে থাকায় দ্রুত বাঁধ সংস্কারের দাবী জানিয়েছে এলাকাবাসী।
নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফ ইকবাল জানান, পাহাড়ি ঢলে এখনও প্রায় ৭০ হেক্টর জমির আমন আবাদ তলিয়ে রয়েছে। দ্রুত পানি না নামলে আবাদের ক্ষতি হতে পারে। তবে বালির আস্তরন পড়া প্রায় ৭ হেক্টর জমিতে আর কোন ফসল হবেনা। এসব আবাদি জমি অনাবাদি হয়ে যাবে। পাহাড়ি ঢল ক্ষতিগ্রস্ত ভোগাই নদীর বাঁধ কাম রাস্তার বিষয়ে জানতে চাইলে শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান জানান, ভোগাই বাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন নয়। তবে চেল্লাখালী নদীর পানি কমে গেলে ওই বাঁধের ভাঙন অংশ দ্রুত সংস্কার করা হবে।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা প্রকৌশলী আনোয়ার পারভেজ বলেন, ভোগাই বাঁধটির ভাঙন অংশ পৌরসভার এলাকার মধ্যে। এ ব্যাপারে তারা উদ্যোগ নেবেন। তবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর বরাদ্দ পেলে উপজেলা পরিষদের অনুমোদন সাপেক্ষে এ ব্যাপারে প্রয়োজনী পদক্ষেপ নেওয়া যাবে। নালিতাবাড়ী পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হোসেন জানান, ইতোপূর্বে খালভাঙ্গা এলাকায় প্রথম ভাঙনের পর সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো। এজন্য মাটি চেয়েছিলাম, কিন্তু এলাকাবাসী মাটি দেয় নাই। যে কারণে হয় নাই। পানি কমলে বাঁধটি সংস্কার করা হবে।
(এইচবি/এএস/আগস্ট ২০, ২০১৪)



পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test