E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

টাঙ্গাইলের একটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত!

২০২০ ডিসেম্বর ২২ ১৬:২৪:৪৯
টাঙ্গাইলের একটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত!

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : টাঙ্গাইল সদর উপজেলার আবেদা খানম গার্লস হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার অভিযোগ ওঠেছে। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় অভিভাবক ওবায়দুল্লাহ মাউশি’র মহাপরিচালকের কাছে একটি অভিযোগ দিয়েছেন। 

জানা যায়, ১৯৪১ সালে দেড় একর ভূমির উপর তৎকালীন জমিদার ওয়াজেদ আলী খান পন্নী করটিয়ায় আবেদা খানম গার্লস হাই স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় নারী শিক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রাখে। পরবর্তী সময়ে স্কুলটি উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে রূপান্তর করা হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের স্কুল শাখায় এক হাজার ২১৫জন ও কলেজ শাখায় প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থীর জন্য ৩৪জন শিক্ষক রয়েছেন। এরমধ্যে ২৯ জন এমপিওভুক্ত। এছাড়া ৬জন কর্মচারীর মধ্যে ৩ জন এমপিওভুক্ত।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক শাহজাহান আনছারী ২০০৯-২০১৬ সাল মেয়াদে স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। সভাপতি থাকাকালে ২০১১-১২ সালে শাহজাহান আনছারী তার ভাতিজি রুবি আক্তারকে বিতর্কিত সার্টিফিকেটে (দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটি), ভাতিজার স্ত্রী শামীমা আক্তার(মেয়াদোত্তীর্ণ নিবন্ধন), ভাগ্নের স্ত্রী আশা আক্তারকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। ২০১১ সালের মে মাসে হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগে ৯ জন প্রার্থীর মধ্যে দেওয়ান মো. শামসউদ্দিন সর্বোচ্চ ৩৯ নম্বরধারী হিসেবে নিয়োগ পান। যোগদানের পর তিনি অনত্র চলে যাওয়ায় বিজ্ঞপ্তি ছাড়া একই তারিখে নিয়োগসিটে জালিয়াতির মাধ্যমে একই পদে ১ম, ২য় ও ৩য় না হলেও শফিকুল ইসলাম নামে এক আত্মীয়কে নিয়োগ দেন। ওই নিয়োগে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রভাব বিস্তার করে চরম অনিয়ম করেছেন।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান আনছারী ২০১৯ সালে ওই প্রতিষ্ঠানে পুনরায় সভাপতি নির্বাচিত হন। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের জন্য সম্প্রতি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। নির্ধারিত তারিখের মধ্যে বিভিন্ন পদে ২৩জন প্রার্থীর আবেদন জমা পড়ে। কিন্তু সভাপতি শাহজাহান আনছারী তার আত্মীয়দের নিয়োগ দিতে বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশিত নির্ধারিত তারিখের দুইদিন পর তার ভাগ্নের স্ত্রী ও ভাগ্নের মেয়ের আবেদনপত্র প্রভাব খাটিয়ে গ্রহন করেন।

বৈশ্বিক মহামারী করোনাকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি শাহজাহান আনছারী নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে তার সহযোগী অভিভাবক সদস্য রতন মিয়ার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের বড় বড় ৬০টি গাছ কেটে বিক্রি করেন।

শিক্ষার্থীরা জানায়, প্রতিষ্ঠানের সভাপতি তার যেসব আত্মীয়দের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন তারা পাঠদানের প্রায় অযোগ্য। ক্লাসে গিয়ে তারা শুধু মোবাইল ফোন ও গালগল্পে মেতে থাকেন। তারা কোন বছরই পাঠ্যক্রম শেষ করতে পারেন না।

আবেদা খানম গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. খলিলুর রহমান খোকন জানান, তিনি ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তাই তিনি সব কিছু জানেন না বলে এড়িয়ে যান।

আবেদা খানম গার্লস হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান আনছারী জানান, বিশেষ সুবিধা নিয়ে নয়- আত্মীয়রা নিজেদের যোগ্যতায় চাকুরি পেয়েছেন। নির্ধারিত তারিখের মধ্যেই দুই আবেদনকারী তার কাছে আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন। তিনি নিজের কাছে রেখে পরে কার্যালয়ে জমা করেছেন। প্রতিষ্ঠানের গাছগুলো মরে যাচ্ছিল তাই নিয়ম অনুযায়ীই গাছ কাটা হয়েছে। তিনি কোন অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে আদৌ জড়িত নন।

টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও আইসিটি) আমিনুল ইসলাম জানান, বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া তারিখের পর প্রার্থীদের আবেদন গ্রহনের কোন নিয়ম নেই। প্রতিষ্ঠানে অনিয়মের বিষয়টি তিনি অভিযোগ দেখে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।

(আরকেপি/এসপি/ডিসেম্বর ২২, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

১৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test