E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দেউলিয়া হওয়ার পথে কর্ণফুলীর আবুল কালাম!

৩ বছর ধরে জ্বালানি তেল পরিবহনে যুক্ত নেই ‘এমটি মনোয়ারা’

২০২০ ডিসেম্বর ২৩ ১৪:২৪:৩৪
৩ বছর ধরে জ্বালানি তেল পরিবহনে যুক্ত নেই ‘এমটি মনোয়ারা’

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : তেলবাহী জাহাজ ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠান যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড ৩ বছর আগে জ্বালানি তেল পাচারের অভিযোগ তুলেছিলেন ‘এমটি মনোয়ারা’ নামক একটি ট্যাঙ্কার জাহাজের বিরুদ্ধে। পরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) এর নিজস্ব তদন্ত কমিটি, র‌্যাব-পুলিশ ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযোগটি তদন্ত করেন।

তদন্তে ঘটনার সত্যতা মেলেনি। বরং এটাই উঠে আসে ট্যাঙ্কার জাহাজটি তেল পাচারের সাথে জড়িত ছিল না। পরবর্তীতে অভিযুক্তরা আদালত থেকে খালাসও পেয়েছেন। কিন্তু মুক্ত হয়নি ‘এমটি মনোয়ারা’ নামক ট্যাঙ্কার জাহাজটি। এত সবকিছু স্পষ্ট হওয়ার পরেও বিষয়টি নিষ্পত্তি না করে এখনো ঝুঁলিয়ে রাখার অভিযোগ ওঠেছে উল্টো যমুনা অয়েল কোম্পানী লিমিটেডের বিরুদ্ধে।

ঘটনার ৩৬ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলো। তবুও যমুনায় জ্বালানি তেল পরিবহন শাখায় যুক্ত হয়নি ট্যাঙ্কার জাহাজটি। ফলে প্রায় ১০ কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন বলে দাবি করছেন জাহাজের মালিক চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার ব্যবসায়ি আবুল কালাম। তিনি দাবি করেন মিথ্যা অভিযোগের ফাঁদে পড়ে তাঁর ট্যাঙ্কারটি। যে কারণে জ্বালানি তেল পরিবহন শাখা থেকে ছিঁটকে পড়ায় দেউলিয়া হওয়ার পথে এখন মালিকপক্ষ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিয়াস উদ্দীন আনচারী বলেন, বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যমুনার কোম্পানীর নিয়ম অনুযায়ী এমটি মনোয়ারার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগটি নিষ্পত্তি করা হবে।’

সূত্রে বলছে, মূলত ‘এমটি মনোয়ারা’ নামক ট্যাঙ্কারটি তেল পাচারের সাথে জড়িত নয় সেটি যমুনার অনেকেই জানতেন। এরপরেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে অভিযোগটি তুলেছিল যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড এর কিছু অসাধু কর্মকর্তা। কেনোনা এসব কর্মকর্তাদের দলাদলি, কোন্দল, একগুয়েমী সিদ্ধান্ত আর দায়িত্ব অবহেলায় তিন বছর ধরে আজ ট্যাঙ্কারটি তেল পরিবহন থেকে বঞ্চিত।

এদিকে, অভিযোগ ভিত্তিহীন প্রমাণিত হওয়া সত্বেও যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তাদের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও মন্থর গতির পদক্ষেপের কারণে বড় লোকসানের মুখে পড়ে আবুল কালাম অয়েল সাপ্লাইয়াস। ফলে গত তিন বছর ধরে ট্যাঙ্কারটির ২২ জন নাবিকদের প্রতি মাসে মাসে বেতন-ভাতা প্রদান করতে হচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে বিপুল অংকের ঋণের বোঝা নিয়ে এমটি মনোয়ারা’র মালিক আবুল কালাম দেউলিয়া হওয়ার পথে বলে জানা যায়।

আবুল কালাম অয়েল সাপ্লাইয়ার্স এর অন্যতম মুখপাত্র মোহাম্মদ ফোরকান জানান, যমুনা অয়েল কোম্পানিকে উচ্চ আদালত ‘এমটি মনোয়ারা’কে আজ থেকে এক বছর আগে পরিবহন বহরে যুক্ত করতে আদেশ দেন। এরপরেও অদৃশ্য কারণে বিষয়টি সমাধা না করে ঝুঁলিয়ে রেখেছেন। ফলে মানা হচ্ছে না উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও।

অনুন্ধানে জানা যায়, গত ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর যমুনা অয়েল কোম্পানি চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কোম্পানির মূল ডিপো থেকে খুলনার দৌলতপুর ও নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা ডিপোগামী দুটি জাহাজে পাচারের উদ্দেশ্যে এক লাখ ৫১ হাজার ৮৯০ লিটার অতিরিক্ত তেল ভর্তি করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। দৌলতপুরে যাওয়া জাহাজ এমটি রাইদায় ৫০ হাজার ৯০০ লিটার এবং ফতুল্লাগামী জাহাজ এমটি মনোয়ারায় এক লাখ লিটারের বেশি অতিরিক্ত ডিজেল পাচারের উদ্দেশ্যে বোঝাই করা হয় বলে অভিযোগ ছিল।

ওদিকে, দৌলতপুরগামী এমটি রাইদায় জাহাজটি আটক করে র‌্যাব-৬-এর একটি টিম। এ ব্যাপারে খুলনার দিঘলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় যমুনার এজিএম (টার্মিনাল) নূরউদ্দীন আহমেদ আল মাসুদ, এজিএম (অপারেশন্স) প্রিয়তোষ নন্দী ও ডিউটি অফিসার সমীর কুমার পালসহ ১৭ জনকে আসামি করা হয়। মামলার পরপরই ওই তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

পরে বিপিসি, যমুনা এবং র‌্যাব ও পুলিশের যৌথ প্রতিনিধির সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি করেন খুলনার একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালত। তদন্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এমটি রাইদা থেকে দৌলতপুর ডিপোতে তেল খালাস করা হয়। অন্যদিকে, বিপিসি ও যমুনা কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ফতুল্লা ডিপোতে এমটি মনোয়ারা থেকে তেল খালাস করা হয়। কিন্তু এই জাহাজেও অতিরিক্ত তেল পাওয়া যায়নি।

পরে তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের খালাস দিয়ে মামলা নিষ্পত্তি করে দেন আদালত। বিষয়টি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও অনুসন্ধানে নেমে সত্যতা পান তেল পাচারের কোন ঘটনা ঘটেনি। গত সেপ্টেম্বরে হাইকোর্ট দুই মাসের মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। নির্ধারিত এই সময় পার হয়ে গেলেও বিষয়টি নিষ্পত্তি না করার অভিযোগ যমুনার বিরুদ্ধে।

অয়েল সাপ্লাইয়াস প্রতিষ্ঠানটির মালিক আবুল কালাম বলেন, ট্যাঙ্কারটিকে পরিবহন বহরে যুক্ত করার আবেদন নিয়ে আমরা যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড এর কাছে বার বার ধর্ণা দিয়েছিলাম। কোন পদক্ষেপ নেয়নি দেখে সাংবাদিকদের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। তিনি আরও বলেন, আগামী ১৫ দিনে মধ্যে যমুনা অয়েল কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ‘এমটি মনোয়ারা’কে পরিবহন বহরে যুক্ত না করলে যমুনার কাছে গত তিন বছরের ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

প্রসঙ্গত, বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পেট্রল ও অন্যান্য পেট্রোলিয়াম পণ্য চট্টগ্রামের মূল ডিপো থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বহন করে থাকে এ ট্যাঙ্কার জাহাজগুলো। তেলবাহী জাহাজগুলোর ব্যবহারকারী হচ্ছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন পদ্মা অয়েল কোম্পানি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড ও যমুনা অয়েল কোম্পানি। কোম্পানিগুলো ৪০ বছরের ঊর্ধ্বের জাহাজে জ্বালানি তেল পরিবহন না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সেক্ষেত্রে ‘এমটি মনোয়ারা’ নামক ট্যাঙ্কার জাহাজটি অভিযুক্ত না হলেও গত তিন বছর যাবত পরিবহন থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। যা খুব অমানবিক বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়িরা।

(জেজে/এসপি/ডিসেম্বর ২৩, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test