E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

সাতক্ষীরার ঝাউডাঙা জগন্নাথদেবের মন্দিরের জমি আবারো নিয়ম বহির্ভুতভাবে ডিসিআর

২০২০ ডিসেম্বর ২৫ ১৬:১৬:৪০
সাতক্ষীরার ঝাউডাঙা জগন্নাথদেবের মন্দিরের জমি আবারো নিয়ম বহির্ভুতভাবে ডিসিআর

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙা জগন্নাথদেবের মন্দিরের জায়গা  বেআইনিভাবে খাস করার বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও নিয়ম বহির্ভুতভাবে ডিসিআর দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি এ ডিসিআর দেওয়ায় মন্দির ও বাজার কর্তৃপক্ষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

ঝাউডাঙা জগন্নাথদেব মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুবীর কুমার ঘোষ জানান, বাংলা ১২০১ সালে জমিদার প্রাণনাথ রায় চৌধুরী ওয়ারিয়া মৌজার সাবেক ৫৪/৫৫ খতিয়ানের ১০০৯ দাগে এক একর দুই শতক জমির উপর ঝাউডাঙা বাজারে ঐতিহ্যবাহি জগন্নাথ দেব মন্দির নির্মাণ করেন। সেখান থেকে ওই মন্দিরকে ঘিরে জগন্নাথ দেবের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী, স্নানযাত্রা, রথযাত্রা ও জন্মাষ্টমী কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে।

এসএ রেকর্ডে ৯০ শতক জমি প্রাণনাথ রায় চৌধুরীর ছেলে যদুনাথ রায়, ছয় শতক পূর্ব পাকিস্তানের খুলনা কালেক্টরেট, এক শতক ঝাউডাঙার দেড়কড়ি রায় এর ছেলে দীননাথ রায় ও তার সহোদর অমূল্য রতন রায় এর নামে, দু’ শতক ওয়ারিয়া গ্রামের প্রতাপ ঘোষ এর ছেলে মাদার ঘোষ ও রাজেন্দ্র নাথ ঘোষের নামে দু’শতক জ্যোতিষ চন্দ্র ঘোষের ছেলে অনিল কুমার ঘোষের নামে এবং বাকী এক শতক ব্যক্তি মালিকানায় দেওয়া হলেও ভলিউম ছেড়া থাকায় নাম জানা যায়নি। ওই জমি কৃষি দেখিয়ে ২০ ধারায় ১৯৮৫ সালের ২৫ আগষ্ট ২৪/৮৪-৮৫ নং কেস মূলে সরকার নিয়ম বহির্ভুতভাবে পেরিফেরিভুক্ত করে।

তবে এর মধ্যে ২৩ শতক মন্দিরের নামে চিহ্নিত করা হয়। মন্দিরের সমুদয় সম্পত্তি সরকার খাস করায় মন্দির কমিটির সভাপতি সন্তোষ কুমার ঘোষ ২০১২ সালে আদালতে জেলা প্রশাসকসহ আটজনকে বিবাদী করে দেওয়ানী ৩২২/১২ মামলা দায়ের করেন। ২০১৫ সালের ৩১ জনিুয়ারি জগন্নাথ দেবের মন্দির পূণঃপ্রতিষ্ঠা করে উদ্বোধন করা হয়। আদালতের নির্দেশে আইনজীবী কমিশনার হিসেবে অ্যাড. সঞ্জয় কুমার সাধু ২০১৭ সালের ৮ মে ওই জমি মন্দিরের দখলে বলে প্রতিবেদন দাখিল করে। এ

রপরও জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান, সহকারি জিপি শম্ভুনাথ সিংহ(বর্তমানে জিপি) ও ভূমি কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে পাথরঘাটা গ্রামের আবু সাঈদ, হাফিজউদ্দিন, একরামুল কবীর মিন্টু, হাসান তারেক, নাজুমুল,হোসেন, রেজোয়ান আলী, মহিউদ্দিন, বাবলু আহম্মেদ, আনারুল ইসলাম ও আরিফ হোসেন নিয়ম বহির্ভুতভাবে ওই জমির মধ্যে সাপ্তাহিক হাট হিসেবে ব্যবহৃত পাঁচ শতক ডিসিআর নিয়ে দখলে যাওয়ার চেষ্টা করে। প্রতিবাদ করায় ৩ জুন দুপুরে মন্দির কমিটি, বাজার কমিটি ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সদর সহকারি ভূমি কমিশনার দেবাশীষ চৌধুরীর (বর্তমানে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) এক জরুরী বৈঠক হয়। সরকার পক্ষের আইনজীবী শম্ভুনাথ সিংহ ও বন্দোবস্ত গ্রহীতারা আর্থিক সুবিধা নিয়ে তথ্য গোপন করে এ কাজ সম্পন্ন করেছে বলে প্রতীয়মান হওয়ায় মন্দির কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ৫ জুন আরডিসি মঈনুল ইসলাম এক আদেশে বন্দোবস্ত কার্যক্রম স্থগিত করেন।

সুবীর ঘোষ আরো বলেন, ডিসিআর খারিজ হয়ে যাওয়ার পরও বসে ছিল না ওই চক্রটি। তারা সাতক্ষীরার এক বড় মাপের জনপ্রতিনিধি, সদর সহকারি ভূমি কমিশার ও ঝাউডাঙা ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে গোপনে আবারো ডিসিআর নেওয়ার প্রক্রিয়া চালিয়ে সফল হয়। সম্প্রতি নাজমুলসহ ওই চক্রটি ডিসিআর মূলে মন্দিরের ওই বিরোধপূর্ণ পাঁচ শতক জমি ডিসিআর নেয়।

সুবীর ঘোষ অভিযোগ করে বলেন, মন্দির কমিটির দায়েরকৃত মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ আদালতের নির্দেশের মুখে জবাব দাখিল করলেও শুনানীসহ কাগজপত্র দাখিলের নামে এ পর্যন্ত পাঁচ বার সময় নিয়েছে। মামলা বিলম্বিত করতে ওই আদালতের পেশকার জাভেদ আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ছয় মাসের বেশি সময় পার করে ধার্য দিন দিয়ে থাকেন। চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি এ নিয়ে বাদিপক্ষ প্রতিবাদ করায় পেশকার জাভিদ নিজেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রির লোক দাবি করে তাকে কেউ কিছু করতে পারবে না বলে এক বছর পাঁচ মাস পর অর্থাৎ ২০২১ সালের ২৭ জুলাই পরবর্তী জবাব শুনানীর(এসডি) দিন ধার্য করেন। ওই জমি দখল নিয়ে বারবার হুমকি আসায় তারা আদালতে নিষেধাজ্ঞার আবেদন জানালেও আজো আদেশ মেলেনি। উপরন্তু অনিয়ম ও দূর্ণীতির মাধ্যমে ১০ জনের দখল দেখিয়ে পাঁচ শতক জমি আবারো ডিসিআর দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার সকালে ঝাউডাঙা হাটের বস্ত্র ব্যবসায়ি আব্দুর রহমান, সমীর ঘোষ ও জুয়েলসহ কয়েকজন জানান, হাটের জায়গা ডিসিআর দিলে এখানে তারা আর ব্যবসা করতে পারবেন না। ফলে তাদেরকে পরিবআর পরিজন নিয়ে পথে বসতে হবে।

ডিসিআরকে ঘিরে হতাশা প্রকাশ করেছেন জগন্নাথ দেব মন্দিরের পুরোহিত ভোলানাথ রায়, রঞ্জন কুমার পাল ও অবারিত দাস।

ঝাউডাঙা বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হোসেন বলেন, মন্দিরের জায়গায় সোমবার ও শুক্রবার দু’দিন হাট বসে। সেখানে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ি ব্যবসা করে তাদের জীবন যাত্রা নির্বাহ করে। মন্দিরের জায়গার কারণে ট্রাক স্টাণ্ডে জ্যাম হয় না। সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার করে অনিয়মের মাধ্যমে মন্দিরের নামীয় জমি যেভাবে খাস খতিয়ান ভুক্ত করে আদালতে বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করে ডিসিআর দেওয়া হচ্ছে তা মেনে নেওয়া হবে না। মন্দির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে থেকে বাজার কমিটি অবৈধ ডিসিআর গ্রহীতা ও ঘুষখোর সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিদের প্রতিহত করা হবে।

সাতক্ষীরা সদর সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, তার যোগদানের পূর্বে সহকারি কমিশনার (ভূমি) রণি আলম এ বন্দোবস্ত দিয়ে গেছেন। বিষয়টি নিয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(আরকে/এসপি/ডিসেম্বর ২৫, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test