E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দূর্নীতির দায়ে বরখাস্ত হতে পারেন মেয়র ও সচিব

কুড়িগ্রাম পৌরসভার ১৩ কর্মচারীর নিয়োগ আদেশ বাতিল

২০২০ ডিসেম্বর ২৯ ১৮:৩৭:৫২
কুড়িগ্রাম পৌরসভার ১৩ কর্মচারীর নিয়োগ আদেশ বাতিল

রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : কুড়িগ্রাম পৌরসভার বিভিন্ন ক্যাটাগরির ১৩টি পদে জনবল নিয়োগ আদেশ বাতিল করে চিঠি দিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. ফারুক হোসেন। চিঠিতে এ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পৃথক দুটি চিঠিতে পৌর মেয়র আব্দুল জলিলকে পদ থেকে অপসারণ ও পৌর সচিব এসএম রেজাউল করিমকে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়। এ তথ্য ফাঁস হলে কুড়িগ্রামে তোলপাড় শুরু হয়। একই সঙ্গে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্তরা আতংকিত হয়ে পড়েছে চাকুরী হারানোর ভয়ে।

স্থানীয় সরকার বিভাগ পৌর-১ শাখা’র উপসচিব মোহাম্মদ ফারুক হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে নিয়োগ ও বাছাই কমিটির সভাপতি কুড়িগ্রাম পৌরসভার মেয়র আব্দুল জলিলকে স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯এর ধারা ৩২(১)(ঘ) অনুসারে মেয়রের পদ হতে কেন অপসারণ করা হবে না তা জানতে চেয়ে তিন কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা চেয়েছেন। একইভাবে অপর এক চিঠিতে নিয়োগ ও বাছাই কমিটির সদস্য সচিব ও কুড়িগ্রাম পৌরসভার সচিব এসএম রেজাউল করিমকে পৌলসভার চাকুরী বিধিমালা, ১৯৯২ এর বিধি ৪১(খ)(ঈ) অনুসারে চাকুরী হতে কেন বরখাস্ত করা হবে না তা পত্র প্রাপ্তির তিন কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে পৌরসচিব এসএম রেজাউল করিম মন্ত্রনালয় থেকে বরখাস্ত সংক্রান্ত পত্র ২৭ ডিসেম্বর পাওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, ২৯ডিসেম্বর মঙ্গলবার মন্ত্রনালয়ে স্বশরীরে হাজির হয়ে জবাব দিয়েছি। নিয়োগে কোন অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়নি। অসাবধনতা বশত: এ নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুরণ না করায় মন্ত্রণালয় অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ চিঠি দেয়। নিয়োগ বোর্ডে অন্যান্য সকল সদস্য মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুরণে নিয়োগ কমিটির সভাপতি পৌরমেয়র আব্দুল জলিলকে সুপারিশ করলেও তার একঘোয়ামীর কারণে তা করা যায়নি।

বিষয়টি নিয়ে পৌর মেয়র আব্দুল জলিল জানান, চিঠি পেয়ে সোমবার ইমেইলের মাধ্যমে এবং মঙ্গলবার (২৯ডিসেম্বর) ডাকযোগে মন্ত্রণালয়ে কারণ দর্শানো পত্রের জবাব দিয়েছি। পত্রে অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য দু:খ প্রকাশ করেছি। প্রকৃত পক্ষে ২০১৪ সালে সাবেক মেয়র নুর ইসলাম নুরু’র সময় নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০১৬ সালে আমি পৌরসভার দায়িত্ব নিয়ে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে সকল বিধিবিধান মেনে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে নিয়োগ প্রদান করা হয়। নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব ছিলেন পৌরসভার সচিব।

এছাড়া জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি হিসেবে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ প্রক্রিয়া দেকভাল করেন। সরকারি আইন-কানুন তাদের জানবার কথা। তাদের অবহেলা ও খামখেয়ালিপনার কারণে অনিচ্ছাকৃত ভুলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ করা যায়নি। অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে পরীক্ষার ফলাফলে দ্বিতীয় হন মুক্তিযোদ্ধার কন্যা মোনালিসা বেগম ঝুমুর। পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকারীকে নিয়োগ প্রদান করা হয়। মোনালিসা বেগম ঝুমুর পরবর্তীতে অভিযোগ দাখিল করলে এ পদে নিয়োগের জন্য ঢাকাস্থ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন চেয়ে পত্র পাঠানো হয়। গত প্রায় এক বছরে অনুমোদন মেলেনি। অনুমোদন পেলে এ মুক্তিযোদ্ধা কন্যাকে নিয়োগ দেয়া সম্ভব হবে।

মেয়র আব্দুল জলিল আরো জানান, একই সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মোতাবেক সদ্য নিয়োগকৃত ১৩ কর্মচারীর বরখাস্তের আদেশ ২৭ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে।

উল্লেখ্য, কুড়িগ্রাম পৌরসভার আলোচিত এ নিয়োগ বাণিজ্যের ঘটনা ঘটে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপ এবং উৎকোচের ডিমান্ড ফুলফিল করতে না পারায় এর আগে একাধিকবার নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ বদল করা হয়। নিয়োগ কার্যক্রম বাতিল চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার ঘটনাও ঘটে। সব পক্ষকে ম্যানেজ করে চাকুরী প্রার্থী ভেদে ১৫ লাখ থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত উৎকোচ নিয়ে ডিসেম্বর মাসে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।

এ সংক্রান্ত সংবাদ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ এবং মুক্তিযোদ্ধার কন্যা মোনালিসা বেগম ঝুমুরসহ ৪জন মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আবেদন করে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় দীর্ঘ তদন্ত শেষে নিয়োগ সংক্রান্ত বিধি বিধান যথাযথভাবে অনুসরণ না করে অসদাচরণ, দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন পদে ত্রুটিপূর্ণ নিয়োগের প্রমাণ পান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ১৩ জনের এ নিয়োগ বাতিলের আদেশ দেন। একই সঙ্গে পৌর মেয়রকে অপসারণ ও পৌর সচিবকে বরখাস্ত করা হবে মর্মে পত্র দেন।

(পিএস/এসপি/ডিসেম্বর ২৯, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test