E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

ধর্ষণের মামলা করে হুমকিতে রয়েছেন কালিগঞ্জের এক দরিদ্র স্কুলছাত্রী

২০২০ ডিসেম্বর ২৯ ২৩:৪১:৪৬
ধর্ষণের মামলা করে হুমকিতে রয়েছেন কালিগঞ্জের এক দরিদ্র স্কুলছাত্রী

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : এক মাদ্রাসা ছাত্র উত্যক্ত করেও সুবিধা করতে না পেরে বিষ পানে আত্মহত্যা ও ছুরি দিয়ে নিজেকে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করেছে ১০ম শ্রেণীর এক স্কুল ছাত্রীকে। বিষয়টি জানাজানি হলে কৌশলে গর্ভপাত ঘটানোয় ধর্ষকও তার স্বজনদের বিরুদ্ধে মামলা করে হুমকিতে রয়েছে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার তেঘরিয়া গ্রামের এক ছাত্রী ও তার অসহায় পরিবার।

মঙ্গলবার সকালে ওই ছাত্রী মুঠোফোনে জানায়, সে স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী। রতনপুর গ্রামে অংকের শিক্ষক আব্দুস সবুরের কাছে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার সময় পার্শ্ববর্তী মসজিদবাটি গ্রামের মাদ্রাসা ছাত্র শেখ আব্দুল্লাহ চাল কালেকশনে যাওয়ার সময় তাকে পথে উত্যক্ত করতো। তাকে বিয়ের প্রস্তাবও দেয়। তাতে রাজী না হওয়ায় চলতি বছরের ২৫ মে রাতে সংযোগ বুঝে তার ঘরে ঢুকে পড়ে বিষের বোতল দেখিয়ে বিয়ে না করলে আত্মহত্যার কথা বলে তাকে ধর্ষণ করে। পরে তার নিজের গলায় ছুরি ধরে আত্মহত্যার কথা বলে আবারো কয়েকবার ধর্ষণ করে।

চলতি বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তার সঙ্গে কয়েকবার শারীরিক সম্পর্ক করলে একপর্যায়ে সে অন্তঃস্বত্বা হয়ে পড়ে। বিষয়টি তার পরিবারের পক্ষ থেকে শেখ আব্দুল্লার অভিভাবকদের জানিয়ে কোন লাভ না হওয়ায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদীকে জানানো হয়। তিনি ছেলে ও মেয়ে নাবালক বলে অ্যাড. হাবিব ফেরদৌস শিমুল এর মাধ্যমে উভয়ে পূর্ণ বয়স্ক হওয়ার পর বিয়ে করবে মর্মে একটি এফিেিডফিড করিয়ে দিতে বলে। সে অনুযায়ি গত ১১ অক্টোবর অ্যাড. হাবিব ফেরদৌস শিমুল সাতক্ষীরার নোটারী পাবলিক অ্যাড. শেখ রেজাউদ্দৌলা বাচ্চুর কাছে নিয়ে যেয়ে ৭৭৮/২০ নং এফিডোফিড করান।

পরবর্তীতে ভিটামিন ট্যাবলেট এর কথা বলে শেখ আব্দুল্লাহ তার বাবা, মা, খালুসহ কয়েকজনের পরামর্শে গর্ভস্ত ভ্রুন নষ্ট করার ট্যাবলেট খাওয়ায়। গত ৫ নভেম্বর কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি থাকা অবস্থায় তার গর্ভপাত হয়। এরপর থেকে শেখ আব্দুল্লাহকে ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়ে তার বাবা ও মা সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে তাদের(ভিকটিম) সাথে। এ ঘটনায় তার মা বাদি হয়ে শেখ আব্দুল্লাহসহ ছয় জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দিলে উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছের লোক বলে পরিচিত সাজু তাকে থানার মধ্যে হুমকি দেয় মামলা তুলে নেওয়ার জন্য। সাতক্ষীরার একজন বড় পুলিশ কর্মকর্তা মামলার তদন্তকর্মকর্তা উপপরিদর্শক জিয়ারত আলীর মাধ্যমে তাকে তার অফিসে ডেকে নিয়ে বিয়ে করে বিষয়টি মিটিয়ে নিয়ে মামলা তুলে নিতে বলা হয়।

মামলার পরপরই শেখ আব্দুল্লাহ ও তার মাকে গ্রেপ্তার করা হয়। কৌশলে কয়েকদিন পর ঢাকা থেকে কালিগঞ্জে এনে তদন্তকারি কর্মকর্তা জিয়ারত আলী শেখ আব্দুল্লাহকে গ্রেপ্তার করেন। আব্দুল্লার বাবা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এরপর তাদেরকে মোবাইল ফোনে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য যেভাবে হুমকি ধামকি দেওয়া হচ্ছিল তাতে তারা সিম পরিবর্তণ করতে বাধ্য হয়েছে।

নির্যাতিতা ওই ছাত্রীর আত্মীয় আবুল হোসেন বলেন, তার আত্মীয়া ধর্ষণের ফলে অন্তঃস্বত্বা হয়ে পড়ায় বিচার চেয়েছে উপজেলা সাঈদ মেহেদীর কাছে। এ যেন রাক্ষসের কাছে ছাগল পোষানীর মত। ওই উপজেলা চেয়ারম্যান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান থাকাকালে আশাশুনির শ্বেতপুর গ্রামের অষ্টম শ্রেণীর এক স্কুল ছাত্রীকে পিরোজপুরে তার চিংড়ি ঘেরের বাসায় এনে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করায় সাঈদ মেহেদী আওয়ামী লীগ নেত্রী ও মানবাধিকার কর্মী রিফাত আমিনের কাছে মেয়েটির ১৮ বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত তাকে শহরে রেখে পড়াশুনার খরচ বহন করা ও পরবর্তীতে বিয়ে করার ব্যাপারে লিখিত অঙ্গীকার করেন।

পরবর্তীতে অঙ্গীকার ভঙ্গ করায় এ নিয়ে পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। একপর্যায়ে ওই মেয়ে, তার মা, ও খালাকে শহরের সম্রাট হোটেলে নিয়ে যায় সাঈদ মেহেদী। সেখানে ওই মেয়েকে একটি আলাদা রুমে নিয়ে ঘটনা সঠিক নয় বলে কয়েকটি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে সাক্ষর করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা ও ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়। এ নিয়ে মেয়েটির মা ও খালা চিৎকার করলে স্থানীয়রা ও পুলিশ হোটেলে ঢোকার আগেই সাঈদ মেহেদী পালিয়ে যাওয়ার সময় কোর্টের সামনে গণপিটুনি খান। পরেজ পুলিশ তাকে ধরে থানায় নিয়ে গেলে পরদিন অ্যাড, মোজচাহার হোসেন কান্টুসহ কয়েকজন মুচলেকা দিয়ে সাঈদকে ছাদিয়ে নিয়ে যান। পরে ওই ছাত্রীর দায়েরকৃত মামলা করলে তা বর্তমানে হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। তার কাছেই বিচার চাইলে তিনি তো এ ধরণের বিচারই করবেন।

আবুল হোসেন ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, অ্যাড. হাবিব ফেরদৌস শিমুল কিভাবে এ ধরণের একটি ছেলে ও মেয়ের এফিডেভিট করালেন? তাছাড়া যে রেজাউদদৌলা বাচ্চু নাবালিকা ছাত্রীর এফিডেফিড করালেন তিনি কেন আইনের আওতায় আসবেন না ? যার পরামর্শে এধরণের এফিডেভিট হলো সেই উপজেলা চেয়ারম্যান কি থাকবেন আইনের উর্দ্ধে ?

এ ব্যাপারে কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক জিয়ারত আলী বলেন, ধর্ষিতা ওই মেয়েটির পরিবার খুবই অস্বচ্ছল। সকল হুমকি ধামকির উর্দ্ধে থেকে তারা তাকে ন্যয় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

(আরকে/এসপি/ডিসেম্বর ২৯, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test