E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

সাতক্ষীরার কুমিরায় পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশের চার মাসেও বন্ধ হয়নি এমএনবি ব্রিকস

২০২১ জানুয়ারি ০১ ১৭:১৭:৪১
সাতক্ষীরার কুমিরায় পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশের চার মাসেও বন্ধ হয়নি এমএনবি ব্রিকস

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার তালা উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের সরস্বতীঘাট এলাকায় পরিবেশ ধ্বংসকারি মেসার্স নূর ব্রিকস বন্ধ করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর নির্দেশ দেওয়ার চার মাসে তা কার্যকর হয়নি। ফলে ওই এলাকার পাঁচ শতাধিক পরিবার দুর্বিসহ জীবন যাপন করছে।

কুমিরা গ্রামের শাহজাহান বিশ্বাস, আলমগীর বিশ্বাস, যুগল দত্ত ও পরিতোষ গাইনসহ কয়েকজন জানান, ২০০৩ সালে চারদলীয় জোট সরকারের সময় স্থানীয় একটি অসাধু চক্র কুমিরা সরস্বতী মন্দিরের প্রায় ২০ বিঘা কৃষি জমি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ১০ বিঘা কৃষি জমি নিয়ে সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করেই মেসার্স নূর ব্রিকস(এমএনবি) ইটভাটা নির্মাণ করেন। ওই ভাটার উত্তর দিকে ৫০০ পরিবার বসবাস করে থাকে।

এ ছাড়াও তিন ধারে রয়েছে শতাধিক জনবসতি। ভাটার ২৫ গজের মধ্যে রয়েছে সার্বজনীন দুর্গা, কালি ও শিব মন্দির। ৫০০ মিটারের মধ্যে রয়েছে তিনটি বিদ্যালয়, একটি মহাবিদ্যালয়, একটি মাদ্রাসা, একটি মক্তব, পাঁচটি মসজিদ ও আরো তিনটি মন্দির। ২০১০ সাল থেকে ভাটার মালিকানা পান কুমিরা গ্রামের খায়রুল ইসলাম মনু। ২০১৩ সাল থেকে ওই ভাটা ঝিকঝাক ভাটায় রুপান্তরিত করা হয়। চিমনি দিয়ে কালো ধোঁয়া নির্গত হওয়ায় এলাকায় বাড়তে থাকে বায়ু দূষণ।

কৃষি জমির মাটি কেটে ওই ভাটার ইট বানানো হয়। চিমনি দিয়ে নিগত গরম ছাই ধানের জমিতে পড়ে ফসল পুড়ে যায় স্পার্শ্ববর্তী নারিকেল গাছ, কাঁঠাল ও আম গাছে ফলন কমে গেছে। ভাটার ট্রাক, ট্রাক্টর ও ট্রলি চলাচলের ফলে রাস্তায় পড়া মাটির উপর কুয়াশা ও সামান্য বৃষ্টিতেই ঘটছে দুর্ঘটনা। ট্রলির বিকট শব্দে শিক্ষার্থীদের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। বায়ুদূষণের ফলে শিশু ও বৃদ্ধরা শ্বাসকষ্ট ও এলার্জী জাতীয় রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ভাটার শ্রমিকরা প্রসাব পায়খানা করে মন্দিরের পরিবেশ নষ্ট করছে।

হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্মশানের যাওয়ার রাস্তা, সরকারি রাস্তা ও খাল নিশ্চিহ্ন করে ভাটার মধ্যে ঢোকানো হয়েছে। প্রতিকার চেয়ে গত ১৯ জুলাই পরিবেশ, বণ ও জলবায়ু পরিবর্তণ মন্ত্রালয় ও সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কাছে তারাসহ চার শতাকি নারী পুরুষের সাক্ষর সম্বলিত গণদরখাস্ত করা হয়। দরখাস্তের সঙ্গে সাংসদ অ্যাড. মুস্তাফা লুৎফুল্লাহ ও কুমিরা ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আজিজুল ইসলাম এর প্রত্যয়ন জমা দেওয়া হয়।

পরিবেশ অধিদপ্তরের সাতক্ষীরা শাখার সহকারি পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম তদন্ত করে গত ৮ সেপ্টেম্বর ভাটা মালিককে কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানানোর জন্য নির্দেশ দেন। এর ব্যত্তয় হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের এনফোর্সমেন্ট টিম কর্তক মামলা দায়ের, মালামাল বাজেয়াপ্ত ও জরিমানা আদায়সহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে ওই আদেশে বলা হয়।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, আদেশের প্রায় চার মাস পেরিয়ে গেলেও বন্ধ হয়নি পরিবেশ নষ্টকারি ওই ইটভাটা। পরিবেশ অধিদপ্তর বা জেলা প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয়নি। বাধ্য হয়ে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কাছে আবারো অভিযোগ করা হয়।

জানতে চাইলে এমএনবি ব্রিকস এর মালিক খায়রুল ইসলাম মনুর মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

পরিবেশ অধিদপ্তর সাতক্ষীরা জেলা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম বলেন, রোববার অফিসে যেয়ে কাগজপত্র দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(আরকে/এসপি/জানুয়ারি ০১, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test