E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কন্যা শিশুর বাবা-মাকে পুরস্কৃত করে পুলিশ কর্মকর্তা আলোচনায়

২০২১ জানুয়ারি ০৭ ১৭:৫৫:০১
কন্যা শিশুর বাবা-মাকে পুরস্কৃত করে পুলিশ কর্মকর্তা আলোচনায়

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : যুগ পাল্টেছে, পাল্টেছে সমাজের চিন্তা-চেতনা। এক সময় কন্যা শিশুর জন্মকে অচ্ছুৎ-অপয়া হিসেবে দেখা হত। একবিংশ শতাব্দিতে এসে অগ্রসরমান বাঙালির সে মানসিকতার অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। কন্যা শিশু আজ আর বোঝা নয়- আশির্বাদ। তারপরও কন্যা শিশুর জন্মকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের অনেক পরিবার সহজভাবে গ্রহণ করে না।  

‘কন্যা শিশু মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ পুরস্কার’ এ ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করতে টাঙ্গাইলের কাগমারি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. মোশারফ হোসেন একধাপ এগিয়ে এসেছেন। কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়া বাবা-মাকে নিজ খরচে তুলে দিচ্ছেন পুরস্কার। তার অফিস কক্ষে এ সংক্রান্ত ফেস্টুনও ঝুঁলিয়েছেন। কন্যা শিশুর প্রতি এমন মমত্ববোধ প্রদর্শন করার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়ে ব্যাপক আলোচিত হয়েছেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।

টাঙ্গাইল পৌরসভার সন্তোষস্থ কাগমারি পুলিশ ফাঁড়ির আওতাভুক্ত এলাকায় বসবাসরত সাধারণ মানুষের কন্যা সন্তানের জন্ম নেওয়ার পর ফোন দিলেই পুলিশ পরিদর্শক মো. মোশারফ হোসেনর পক্ষ থেকে উপহার সামগ্রী মিলছে। পুলিশ কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেন তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘কন্যা সন্তান সমাজের বোঝা নয়, আর্শিবাদ। কন্যা সন্তান আল্লাহ তা’আলার শ্রেষ্ঠ পুরস্কার। কন্যা সন্তান মা-বাবার জান্নাতের সুসংবাদ নিয়ে দুনিয়ায় আগমন করে’ মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) রাতে এমন স্ট্যাটাস দিয়ে উপহারের ঘোষণা দেন। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। বুধবার(৬ জানুয়ারি) ঘোষণার প্রথমদিনেই চার কন্যা শিশুর বাবা-মা ওই পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন। উপহার সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে ‘কন্যা সন্তান আল্লাহ তা’আলার শ্রেষ্ঠ পুরস্কার’, ‘নবজাতকের আগমনে মা আপনাকে শুভেচ্ছা’ লেখা স্মারক, বেবি ডায়াপার ও লোশন।

পুলিশ ফাঁড়িতে উপহার নিতে আসা মাসুদা খাতুন নামে এক কন্যা শিশুর মা জানান, ২১ ডিসেম্বর তিনি প্রথম কন্যা সন্তানের মা হয়েছেন। ওই পুলিশ কর্মকর্তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে উপহারের বিষয়টি দেখে তিনি পুলিশ ফাঁড়িতে আসেন। উপহার পেয়ে তিনি খুবই আনন্দিত। তার প্রথম সন্তান মেয়ে। মেয়ে হওয়ার জন্য তার পরিবার খুশি হয়নি, কিন্তু তিনি ও তার স্বামী অনেক খুশি।

গোলাম রাব্বানী রাসেল নামে এক কন্যা শিশুর বাবা জানান, চলতি মাসের ১ জানুয়ারি তিনি দ্বিতীয় কন্যা সন্তানের বাবা হয়েছেন। কন্যা সন্তান জন্ম নেওয়ায় তার পরিবারের বয়োবৃদ্ধরা সন্তুষ্ট হতে না পারলেও তিনি ও তার স্ত্রী অনেক খুশি। পুলিশ কর্মকর্তার ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখে পুলিশ ফাঁড়িতে তিনি উপহার নিতে এসেছেন। উপহার সামগ্রী পেয়ে তিনি খুবই আনন্দিত। তার এ উদ্যোগ টাঙ্গাইলের পশ্চিমের চরাঞ্চলের চিরায়ত ধারণাকে অনেকটাই পাল্টে দেবে। তিনি পুলিশ কর্মকতাকে ধন্যবাদ ও তার এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান।

পুলিশ পরিদর্শক মো. মোশারফ হোসেন জানান, তিনি চাকুরি সূত্রে বিভিন্ন চরাঞ্চল ও গ্রাম পর্যায়ে ঘুরেছেন। ওইসব এলাকায় কন্যা সন্তান জন্ম হলে মায়েদের নানা বিড়ম্বনায় পড়তে দেখেছেন। বিষয়টি তার কাছে খুবই খারাপ লেগেছে। সেই খারাপ লাগা থেকে তিনি মূলত: চরাঞ্চলের চিরায়ত ধ্যান-ধারণা পরিবর্তনে শরীক হতে কাগমারি পুলিশ ফাঁড়ি এলাকায় নবজাতক কন্যা সন্তানের সকল মা’দের পুরস্কৃত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। সে লক্ষেই ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়ে ঘোষণা দেন।

তিনি জানান, মোবাইল ফোনে অনেকেই প্রশংসা করছেন। সচেতন মহল সাধুবাদও জানাচ্ছেন। প্রথম দিনে চার কন্যা সন্তানের বাবা-মাকে সামান্য উপহার দিতে পেরে তিনি খুবই আনন্দ পেয়েছেন। এ উপহার সামগ্রী প্রদান অব্যাহত থাকবে।

(আরকেপি/এসপি/জানুয়ারি ০৭, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test