E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নির্বাচনী সহিংসতাকে কেন্দ্র করে শৈলকুপা পৌর এলাকায় আতংক নীরবতা

২০২১ জানুয়ারি ১৪ ১৬:৫৫:৫২
নির্বাচনী সহিংসতাকে কেন্দ্র করে শৈলকুপা পৌর এলাকায় আতংক নীরবতা

অরিত্র কুণ্ডু, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহের শৈলকুপা পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচনী সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। ৫ ঘন্টার ব্যবধানে এক কাউন্সিলর প্রার্থীর লাশ উদ্ধার ও অপর প্রতিদ্বন্দ্বি কাউন্সিলর প্রার্থীর ভাই নিহত হওয়ায় আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। পাল্টাপাল্টি ঘটনা সংঘটিত হওয়ায় ভোটারদের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা দেখা দিয়েছে। 

নির্বাচন কমিশন একটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের ভোট স্থগিত করেছে। আগামী শনিবার (১৬ জানুয়ারি) শৈলকুপা পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ভোটের দুই দিন আগে বুধবার রাতে প্রার্থীসহ দুই জন নিহত হন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে শৈলকুপার কবিরপুর এলাকায় ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী শওকত হোসেনের ভাই আওয়ামী লীগের উমেদপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ডিস ব্যবসায়ী লিয়াকত হোসেন বল্টু (৫০) ছুরিকাঘাতে নিহত হন। তিনি শৈলকুপা উপজেলার ষষ্টিবার গ্রামের মৃত মসলেম উদ্দীনের ছেলে। বল্টু পৌর এলাকার কবিরপুর এলাকায় প্রচারণা চালাতে গিয়ে ছুরিকাঘাতের শিকার হন।

প্রতিদ্বন্দ্বি পাঞ্জাবী প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী আলমগীর হোসেন বাবুর সমর্থক বাপ্পির নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী বল্টু ও তার ভাই শওকতকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় বল্টুকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ৯টার দিকে মারা যান। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে শৈলকুপা পৌর এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার দিন রাতেই নিহত বল্টুর উপর হামলাকারী কবিরপুর গ্রামের সামছুদ্দিনের ছেলে বাপ্পি (৩০) অজ্ঞাত ব্যক্তির হাতে আহত হয়ে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে আসে।

এদিকে সহিংসতা ও ভাংচুর এড়াতে গোটা শহরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। রাত যত গভীর হতে থাকে ততই আতংক ও পিন পতনের নীরবতা নেমে আসে। বল্টু নিহত হওয়ার ৫ ঘন্টা পর খবর আসে একই ওয়ার্ডের স্বতন্ত্র কমিশনার প্রার্থী আলমগীর হোসেন বাবুর লাশ কুমার নদে পড়ে আছে। আশ্চর্য্য জনক হলেও সত্য নদীর ভেতরে দাঁড়ানো অবস্থায় ছিল তার মৃতদেহটি। কিভাবে মৃত্যু হয়েছে এই কমিশনার প্রার্থীর তা নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। বল্টু নিহত হওয়ার পেছনে বাবুর সমর্থকদের দায়ী করা হচ্ছিল। বিষয়টি প্রমানণিত হয় হামলাকারী বাপ্পি আহত হয়ে হাসপাতালে আসার পর। কারণ বাপ্পি ছিল বাবুর সমর্থক। ফলে নদীতে বাবুর লাশ পাওয়া ও বাপ্পির উপর হামলা একই সূত্রে গাঁথা বলে অভিযোগ করেন বাবুর স্ত্রী ফজিলতুন্নেছা ইতি।

তিনি বলেন, এটা পরিকল্পিত হত্যাকান্ড।বল্টু নিহত হবার পর বাবু তার স্ত্রীকে ফোন করে জানিয়েছিলো “আমি নিরাপদে যাচ্ছি” কেও বাড়ি এসে দরজা খুলতে বললে যেন না খোলে”। এটাই ছিল স্ত্রীর সঙ্গে বাবুর শেষ কথা।

এর কিছুক্ষন পরই বাবুল লাশ মেলে বরইপাড়া এলাকার কুমার নদে।প্রাথমিকভাবে পুলিশ এটিকে পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা ধরে এর পিছনে নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে।

একদিনে আওয়াামী সমর্থক দুই ব্যক্তির লাশ পাওয়ার ঘটনা পৌর নির্বাচনকে আরো সংঘাতময় ও উত্তপ্ত করে তুলতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। অনেক মনে করেন একটি ঘটনার জের ধরে আরেকটি ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে কমিশনার প্রার্থী আলমগীর হোসেন বাবুর সমর্থক ও পরিবার দাবি করছেন পরিকল্পিত ভাবে বাবুকে হত্যা করা হয়েছে।

শৈলকুপা থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম জানান, দুটি মৃত্যুর ঘটনায় এখনো কেও মামলা করেনি। তাই গ্রেফতারও নেই। আইনশৃংখলা পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। শহরের কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

এদিকে প্রার্থীসহ দুই জনের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিরা এখনো গ্রেফতার না হওয়ায় দুটি পরিবারের স্বজনরা হতাশায় রয়েছেন।

(একে/এসপি/জানুয়ারি ১৪, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

০৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test