E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সালিশের নামে যুবককে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন, ইউপি চেয়ারম্যানসহ গ্রেফতার ২

২০২১ জানুয়ারি ২৫ ১৭:৩২:০৪
সালিশের নামে যুবককে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন, ইউপি চেয়ারম্যানসহ গ্রেফতার ২

স্টাফ রিপোর্টার : রাজবাড়ীর কালুখালি উপজেলার সাওরাইল ইউনিয়নের চরপাতুরিয়া গ্রামের ভ্যান চালক মোঃ রাশেদ আলীকে সালিশে সাজার নামে মধ্যযুগীয় কায়দায় অমানবিক নির্যাতন করেছে সাওরাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম আলীসহ তার শালিসদারগণ, এমন অভিযোগ উঠেছে। 

২৪ জানুয়ারি বিকেলে কালুখালী থানাধীন চর পাতুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে ৭ নং সাওরাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব মোঃ শহিদুল ইসলাম (আলী) এর নেতৃত্বে একটি গ্রাম্য সালীস বৈঠকের আয়োজন হয়।ভিকটিম মোঃ রাশেদ আলীর অপরাধ তার প্রথম স্ত্রী থাকা অবস্থায় দ্বিতীয় বিয়ে করা।

উল্লেখিত সালিশ বৈঠকে রাশেদুল শেখকে দোষী সাব্যস্থ করে শাস্তি স্বরুপ মধ্যযুগীয় কায়দায় তার পুরুষাঙ্গে রশি দ্বারা ইট বেধে ঝুলিয়ে তাকে বিদ্যালয়ের মাঠে প্রদক্ষিণ করায় এবং মারপিট করে তার শরীরের বিভিন্নস্থানে নিলাফুলা জখম করে।এর ফলে মোঃ রাশেদুল শেখ এর পুরুষাঙ্গ থেকে রক্তপাত হতে থাকে। তখন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য গ্রাম্য ডাক্তার দ্বারা ইনজেকশন প্রদানের মাধ্যমে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং বিষয়টি পুলিশ কে না জানানোর জন্য রাশেদুল শেখকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয়। এছাড়াও চেয়ারম্যান তার লোকজন দিয়ে রাশেদুল শেখকে বাড়ীতে আবরুদ্ধ রেখে তাকে উন্নত চিকিৎসা হতে বঞ্চিত করেন।.

পরবর্তীতে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে সংবাদ প্রাপ্ত হয়ে কালুখালী থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এ সালিশে ভিকটিমকে ২০ হাজার টাকা জরিমানাসহ পুরুষাঙ্গে ২টি ইট বেধে ২১ কদম হাটায় এবং ১শ’ জুতার বারি জরিমানা করা হয়। রাশেদ আলীর পুরুষাঙ্গে ২টি ইট বেধে ২১কদম হাটাতে তার পুরুষাঙ্গ দিয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। এতে ওই যুবক অসুস্থ হয়ে পরলে স্থানীয়রা রাতে রাশেদ আলীকে পাংশা উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রাশেদের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় হাসাপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক এ অবস্থা বলে জানিয়েছেন।

সাওরাইল ইউনিয়ন সূত্রে জানা যায়, চরপাতুরিয়া গ্রামের ইমান আলীর ছেলে ভ্যান চালক রাশেদ তার প্রথম স্ত্রী ও সন্তান থাকা অবস্থায় প্রথম স্ত্রীর অনুমতি না নিয়ে,তিনি গত ৩-০১-২১তারিখে একই গ্রামের একটি মেয়েকে বিয়ে করে। এতে প্রথম স্ত্রী ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শহিদুল ইসলাম আলীর কাছে বিচার দেয়। চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য শালিসদারগণ দ্বিতীয় বিয়ে করার অপরাদে আসামী রাশেদকে দোষী সাব্যস্ত করে উপরোক্ত সাজা প্রদান । উক্ত বিষয় মোঃ রাশেদুল শেখের পিতা ইমান আলী শেখ বাদী হয়ে থানায় এজাহার দিলে নিয়মিত মামলা রুজু করতঃ কালুখালী থানা পুলিশ সাওরাইল ইউপি চেয়ারম্যান সহ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট আরো ০১ জন কে গ্রেফতার করে। সালিশের নির্যাতনের দায়ে সাওরাইল ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শহীদুল ইসলাম আলীকে কালুখালি থানা পুলিশ রবিবার রাতে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেছে।

আসামিদের আদালতে চালান করেছে কালুখালী থানা পুলিশ। উল্লেখিত যে ১৯৮৮ সালে কথিত এরকম এক সালিশে শোমসের শিকদার ও তার স্ত্রীর প্রতি এ রকম এক অমাববিক অবিচার করা হয়েছিলো সেই ভয়াবহ নির্যাতনের ঘটনায় তারা আজো শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। এমন অনেক অভিযোগ আছে চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম আলীর বিরুদ্ধে। তার রয়েছে নিজেস্ব সন্ত্রাসী আলী বাহিনী, এদের কাছে সাওরাইলবাসি জিম্মি।এই আলী চেয়ারম্যান লাড়িবাড়ী বাজারে সরকারী জায়গা দখল করে চারটা ঘর তুলেছেন। তিনি যে কত মানুষের ক্ষতি করেছেন তার কোন হিসাব নাই।

তিনি যে কত মানুষকে গুম খুন করে গড়াই নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছেন তার কোন হিসাব নাই। এই আলী চেয়াম্যান প্রাভাবশালীদের মেনেজ করে এই অন্যায় অপকর্ম করে থাকেন। এই আলী চেয়ারম্যান একজন চরমপন্থি সন্ত্রাসী সর্বহারা দলের দলনেতা তার এই দলের নাম আলী বাহিনী।সরকারের সাধারণ ক্ষমার পরও সে এখনো তার সন্ত্রাসী কর্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন নিয়মিত। কে এই আলী চেয়ারম্যান এতটাই বেপরোয়া যে তার বিরুদ্ধে কেউ সত্য কথা বলার সাহস পায় না। তিনি একজন চাঁদাবাজ, জমি দখলকারি, ২০০৮ সালে আলী কাদেরের কাছে থেকে দাবীকৃত চাঁদা না পেয়ে, কাদের কে কেটে টুকরো টুকরো করে গড়াই নদীতে ফেলে দেয়। পড়ে তার লাশ ভেসে মস্তকবিহীন হাত পা কাটা লাশ ভেসে ওঠে। এটার প্রতিবাদ করায় রাজ্জাক নামক এক ব্যক্তিকে প্রাণ দিতে হয়েছে।

এসব মাডার মামলার এক নাম্বার আসামী চেয়ারম্যান আলী। তার রয়েছে বিশাল সন্ত্রাসবাহিনী কয়েকজনের নাম যেমন, ১/শহিদুল ইসলাম আলী,২/আব্দুর রহমান খান, ৩? সুজন খান, ৩/ আব্দুর রাহিম, ৪/খায়রুল ইসলাম, ৫/সুরাই মন্ডল, ৬/আমির খান,৭/জামির খান সহ আরো অনেকে।এমন কোন অন্যায় অপকর্ম নাই যে এই আলী চেয়ারম্যান দ্বারা হয় না।কালুখালী থানার অফিসার ইনর্চাজ বলেন,আইন কেউ নিজের হাতে তুলে নিবেন না। এ ধরনের কার্যকালাপ থেকে সবাইকে বিরত থাকার অনুরোধ করছি। ধর্ষণ, বাল্য বিবাহ, ইভটিজিং, মাদক, জঙ্গি, হত্যা সহ কোন ধরণের ফৌজদারী অপরাধ স্থানীয় ভাবে নিষ্পত্তি করা হলে বা তথ্য গোপন করলে সংশিষ্ট পক্ষের বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(একে/এসপি/জানুয়ারি ২৫, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test