E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আগৈলঝাড়ায় মাটি চাপা দেয়া নবজাতকের পরিচয় মিলেছে

২০১৪ এপ্রিল ২০ ১৭:০৮:৩৩
আগৈলঝাড়ায় মাটি চাপা দেয়া নবজাতকের পরিচয় মিলেছে

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : যে শিশু ভূমিষ্ট হবার পর ঠাঁই হওয়ার কথা ছিল মায়ের কোলে, কিন্তু জন্মের পর হত্যার জন্য সেই গর্ভধারিণী মা ও নানী তাকে মাটি চাপা দিল জীবন্ত। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা অলৌকিকভাবে প্রায় ১০ঘন্টা বাঁচিয়ে রাখলেন মাটি চাপা অবস্থায় নবজাতক শিশুটিকে। হাসপতালে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে ঠাঁই হল ওই শিশুটির ছোটমনি নিবাসে। কিন্তু অবশেষে তার পরিচয় পাওয়া গেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে নানী ও গর্ভধারিনী মাকে। শিশুটির পিতৃ পরিচয়ের জন্য করা হয়েছে মামলা। ঘটনাটি বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রাংতা গ্রামের একটি গম ক্ষেত থেকে শুক্রবার উদ্ধার হওয়া চাঞ্চল্যকর নবজাতক মেয়ে শিশুর চাঞ্চল্যকর জন্ম রহস্য।

এজাহার, আগৈলঝাড়া থানার ওসি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর জেলার ডাসার থানার কাজী বাকাই ইউনিয়নের দক্ষিণ ভাউতলী গ্রামের ট্রাক চালক দম্পত্তি আবুল ঢালী ও মনোয়ারা বেগমের পাঁচ মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে মাহমুদা চতুর্থ। পড়ালেখা করছিল স্থানীয় স্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে। স্কুল ছুটি থাকার সুযোগে গত রমজানে বড় দুলাভাই রতন শেখ ও বোন হাজেরা বেগমের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানার উত্তর বনগ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যায়। বেড়ানোর সময় একদিন ঘরে একা পেয়ে দুলাভাইয়ের ছোট ভাই আকবর শেখের ছেলে শামীম শেখ (২৫) মাহমুদাকে ধর্ষণ করে। লোকলজ্জার ভয়ে গ্রাম্য সহজ সরল মেয়ে মাহমুদা পরিবারের কারো কাছেই ঘটনাটি প্রকাশ করেনি। এমনকি প্রকাশ করেনি তার বান্ধবীদের কাছেও। ধর্ষণের ফলে অন্তসত্বা হয়ে পড়ে মাহমুদা। প্রথমে বুঝতে না পারলেও একসময় ঠিকই বুঝতে পারে সে। যখন বুঝেছে তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। অপেক্ষা করতে থাকে সন্তান প্রসবের। এরইমধ্যে ১৭ এপ্রিল মাহমুদা তার মা মনোয়ারা বেগমকে নিয়ে ছোট চাচি নুরুন নাহারের বাবা শাহ আলম মোল্লার আগৈলঝাড়া উপজেলার রাংতা গ্রামের বাড়িতে আসে। সেখানে চাচীকে জানানো হয়; মাহমুদা মহিলা বিষয়ক কিছু সমস্যায় ভুগছে। তাকে ভাল ডাক্তার দেখাতে হবে। ওই দিন রাত তিনটার দিকে মাহমুদা একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান প্রসব করে। লোকলজ্জা আর সামাজিকতার ভয়ে তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ওই শিশুর গর্ভধারিণী মা মাহমুদা ও নানী মনোয়ারা বেগম বাড়ির পাশ্ববর্তি একটি গম ক্ষেতে জীবন্ত মাটি চাপা দেয় ওই কন্যা শিশুটিকে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ! স্রষ্টা যাকে বাচায় তাকে মারার সাধ্য কার ! নিস্পাপ শিশুটির জন্ম রহস্য উদ্ঘাটনের পাশাপাশি নিষ্ঠুর অপরাধীদের শাস্তি দেয়ার জন্যই হয়ত শিশুটিকে অলৌকিকভাবে বাচিয়ে রেখেছেন সৃষ্টিকর্তা ! ১৮ এপ্রিল মাহমুদা ও তার মা মনোয়ারা বেগম নুরুননাহারের বাড়ি থেকে চলে যান। বেলা বারোটার দিকে স্থানীয় আনোয়ার হোসেন ফকির শিশুটির কান্না শুনে এগিয়ে গলা পর্যন্ত মাটি চাপা দেয়া অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করান। স্বল্প সময়েই সম্পূর্ন সুস্থ হয়ে ওঠে শিশুটি। লোক জানাজানি হলে অনেকেই শিশুটিকে পিতা-মাতার স্নেহে লালন পালনের আগ্রহ প্রকাশ করেন। তবে আইনগত বাধ্য বাধকতার কারণে কারো ব্যক্তিগত তত্ত্বাবধানে শিশুটিকে দেয়া সম্ভব হয়নি বলে জানায় প্রশাসন। আগৈলঝাড়া থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন শুরু করেন আইনী তৎপরতা। আন্তরিকতার সাথে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ায় নবজাতক শিশুটির ঠিকানা হয় বরিশাল বিভাগীয় বেবী হোম বা ছোট মনি নিবাস গৈলায়। বেবী হোমের উপ-তত্ত্বাবধায়ক আবুল কালাম আজাদ জানান শিশুটির নাম রাখা হয়েছে ময়না বেগম। বর্তমানে তাদের তত্ত্বাবধানে শিশুটি ভাল ও সুস্থ রয়েছে। এদিকে পুলিশী তৎপরতায় শনিবার দুপুরে রাংতা গ্রাম থেকে মাহমুদার ছোট চাচি নুরুন নাহার ও তার মা মুকলী বেগমকে আটক করে পুলিশ। তাদের স্বীকারোক্তিমতে শিশুটির নানী মনোয়ারা বেগমকে নিজ বাড়ি ভাউতলী থেকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। ওই দিন সন্ধ্যায় শিশুটির গর্ভধারিনী মা মাহমুদাকে নাঠৈ তার দূলাভাইয়ের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। রাতে চলে ব্যপক জিজ্ঞাসাবাদ। জিজ্ঞাসাবাদে মাহমুদা জানায় তার জীবনে ঘটে যাওয়া উপরোক্ত চাঞ্চল্যকর ঘটনাবলী। রাতেই পুলিশের এসআই শহিদুর রহমান বাদী হয়ে ধর্ষক ও শিশুর পিতা শামীম শেখ ও শিশু হত্যা চেষ্টার অভিযোগে মাহমুদার মা মনোয়ারা বেগমকে আসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ সংশোধিত ২০০৩ এর ৯(১) তৎসহ ৩৭১ ধারায় একটি মামলা রুজু করেন। আটক মাহমুদার চাচি ও তার মা মুকুলী বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। রোববার ভিকটিম মাহমুদাকে বরিশাল আদালতে জবানবন্দি প্রদান ও মেডিকেল পরীক্ষার জন্য ও তার মা মনোয়ারা বেগমকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

(টিবি/এএস/এপ্রিল ২০, ২০১৪)








পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test