E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সৌন্দর্য বাড়াতে কুদালিছড়ায় লাগানো হবে হাজারো হিজল-করচ 

২০২১ ফেব্রুয়ারি ০৭ ১৭:৪৭:৪৪
সৌন্দর্য বাড়াতে কুদালিছড়ায় লাগানো হবে হাজারো হিজল-করচ 

মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : নদী মাতৃক বাংলাদেশে বর্ষায় হাওরের শান্ত জলে সারিবদ্ধভাবে আপন করে দাঁড়িয়ে থাকে হিজল। শুষ্ক মৌসুমে হাওরের পানি যখন শুকিয়ে যায়, তখনো একইভাবে দাঁড়িয়ে থাকে হিজল। এটি হাওর অঞ্চলের ঐতিহ্যগত নৈসর্গিক দৃশ্য। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পানিতেই জন্মে হিজল। প্রাকৃতিক দুর্যোগে কিংবা তীব্র খরাতেও আপন মহিমায় টিকে থাকে হিজল। হিজল আমাদের আধুনিক ও মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্য ভান্ডারে স্থান করে নেয়ার কারনে সাহিত্য প্রেমীদের কাছে এর পরিচিতি বেশ সমৃদ্ধ। প্রকৃতির শান্ত জলে যেভাবে স্থান করে নিয়েছে হিজল সেভাবেই স্থান করে নিয়েছে সাহিত্যে নানা শাখা কিংবা কবিতায়-গানে। 

কালজয়ী বাংলা সাহিত্যে জায়গা করে নেয়া হাজারো হিজল-করচ এবার লাগানো হবে কুদালিছড়া খালের দু’পাড়ের বাঁধের উপর ড্রেসিং করা কাচা রাস্তায়। কুদালিছড়া খালের দু’পাড়ে হিজল-করচ লাগানো হলে খালের দুই দিকের হাওরের প্রকৃতিতে তৈরি হবে এক ভিন্ন মাত্রা। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া কুদালিছড়া ফিরে পাবে তাঁর পূর্বেকার ভরা যৌবন আর নৈসর্গিক সৌন্দর্য,এমন ধারনা প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার গিয়াসনগর,মোস্তফাপুর ও নাজিরাবাদসহ তিনটি ইউনিয়নের কয়েকহাজার কৃষকের কাছে হৃৎপিন্ডের মত কুদালিছড়া খাল। এই তিন ইউনিয়নের কৃষকদের সেচ কাজের একমাত্র অবলম্বন এ্ই খাল। খালটি দীর্ঘ কয়েকযুগ ধরে খনন না করার কারনে ধীরে ধীরে হারাতে থাকে তাঁর অতীত ঐতিহ্য। বর্ষায় একদিকে শহর আর অপরদিকে পাহাড়ের উঁচু টিলা থেকে নেমে আসা পানি-বর্জে হাওর আর খাল কালের পরিক্রমায় একাকার হতে শুরু করে। হাওরজুড়ে তৈরি হওয়া জলাবদ্ধায় নষ্ট হয় কৃষকের কষ্টের ফসল। ক্ষতিগ্রস্থ হয় কয়েকহাজার কৃষক। খালটি অযতœ আর অবহেলায় পড়ে থাকে বছরের পর বর্ছ।

এই হাওরের অতীত ঐতিহ্য বেশ সমৃদ্ধ। একটা সময় ছিল,যখন ভরা যৌবনে ভরপুর এই কুদালিছড়া দিয়ে নৌকা চালিয়ে বর্তমান সময়ে বিলুপ্ত প্রায় নানান রকমের দেশীয় মৎস আহরণ করে নিজেদের খাবারের প্রয়োজন মেটাতেন এঅঞ্চলের কৃষক পরিবার গুলো। বর্ষাকালে নৌকা দিয়ে এক গ্রামের মানুষের সাথে অন্য গ্রামের মানুষের যোগাযোগের গল্পও শুনা যায় লোকমুখে,যা বর্তমান প্রজন্মের কাছে শুধুই ইতিহাস আর নিজ চোখে দেখা বয়স্কদের কাছে কেবলই স্মৃতি।

বর্তমানে হাওর আর খাল একাকার হয়ে যাওয়া কুদালিছড়া খননের জন্য মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ১২নং গিয়াসনগর ইউনিয়নের ভূজবল অফিস বাজার এলাকা থেকে ছিকরাইল পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার জায়গা জুড়ে খনন কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ৬৪ জেলার ছোট নদী-খাল ও জলাশয় খনন প্রকল্পের মাধ্যমে ১ কোটি ৪লক্ষ টাকা ব্যায়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আরাধনা এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে যেটি বাস্তবায়ন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। গত ২০ জানুয়ারি এই প্রকল্প কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য নেছার আহমদ এমপি ।

এর পর থেকে দ্রুত গতিতে ৩টি এক্সভেটর দিয়ে শুরু হয় খাল খননের কাজ। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এক্সেভেটর দিয়ে খালের ৭ মিটার গভীর থেকে জমে থাকা মাটি তুলে ফেলা হচ্ছে খালের পাড়ে। এই মাটি দিয়েই দু’পাড়ে তৈরি হচ্ছে বাঁধ। পরবর্তীতে বাঁধ ড্রেসিং করে তৈরি হবে কাচা রাস্তা। বর্ষায় বাঁধ যাতে ভেঙ্গে না যায় তার জন্য বাঁধের উপর দিয়ে তৈরি হওয়া রাস্তায় সৌন্দর্য বর্ধণে লাগানো হবে হাজারো হীজল-করচ। খাল খনন,বৃক্ষ রোপণ এবং রাস্তা ড্রেসিং এই তিনটি কাজ বাস্তবায়ন হলে ঐ এলাকারা পুরো চিত্র পাল্টে গিয়ে তৈরি হবে পর্যটনের নতুন সম্ভানাও। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, আগামী ১৫ মার্চ থেকে এপ্রিলের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কথা রয়েছে।

চলতি মাসের গত ২ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় দফা নির্বাচিত হয়েই সাংবাদিকদের নিয়ে সরেজমিন কুদালিছড়া খনন কাজ দেখতে আসেন মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ফজলুর রহমান। এসময় মেয়র বলেন, কুদালিছড়া মৌলভীবাজারের প্রাণ,মৌলভীবাজারের মানুষের হৃৎপিন্ড। এই কুদালিছড়া দীর্ঘদিন যাবত অবহেলা অযতেœ ভরাট হয়নি। সেই কুদালিছড়া বিআইডিসি প্রথমে খনন করে আর পৌরসভার অংশ পৌরসভা খনন করে। আজকে কুদালি ছড়া ভুজবল থেকে হাইলহাওর পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ড খনন করছে। এই খনন কাজ সমাপ্ত হলে কুদালিছড়ার উভয় পাড়ে যে জমি রয়েছে,সেই জমি গুলো বুরো ক্ষেতের আওতায় আসবে,এবং মানুষ পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পাবে।

তিনি বলেন,এই খাল খননের কারনে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা বৃদ্ধি পাবে। আর আমরা যদি মনু নদী থেকে একটি ক্যানেল করে পানি কুদালিছড়ায় দিতে পারি তাহলে কৃষিতে ব্যাপক বিপ্লব সাধিত হবে মৌলভীবাজারে। কারন মোস্তফাপুর,গিয়াসনগর ও নাজিরাবাদ ইউনিয়নের বেশিরভাগ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান ফরহাদ জানান, কুদালিছড়ার সাথে শুষ্ক মৌসুমে মনু নদীর একটা কানেক্টিং সোর্স হবে। মৌলভীবাজার শহরের পৌর এলাকায় যে জলাবদ্ধতা থাকে সেটা নিষ্কাশন হবে এই কুদালিছড়ার মাধ্যমে। এসময় তিনি আরো জানান,কুদালিছড়া খাল খনন শেষে প্রায় পাঁচহাজার হেক্টর কৃষি জমিতে ফসল উৎপাদন হবে। ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড সেচ প্রকল্প গ্রহণের লক্ষে একটি কারিগড়ি কমিটি গঠন করে বোর্ডের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে দীর্ঘ চার কিলোমিটার খাল খনন শেষে বর্ষায় বৃদ্ধি পাবে মৎস উৎপাদন, অপরদিকে কৃষি চাষও বৃদ্ধি পাবে। আর বর্ষা মৌসুমে শহরের যে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, তা দ্রুত নিষ্কাশন হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে আগামী ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে এই খাল খননের প্রয়োজন পড়বেনা বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

(ওএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test