E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

ইউএনওকে দেখে নেওয়ার হুমকি যুবলীগ নেতার

২০২১ ফেব্রুয়ারি ১০ ১৭:১০:৫২
ইউএনওকে দেখে নেওয়ার হুমকি যুবলীগ নেতার

রাণীশংকৈল প্রতিনিধি : নির্ধারিত সময় পেরিয়ে নির্বাচনী পথ সভা করতে বাধা দেওয়ায় ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবিরকে প্রকাশ্যে জনতার সামনে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে জেলা যুবলীগের নেতারা। গত মঙ্গলবার রাতে উপজেলা পরিষদ মার্কেটের সামনে এ ঘটনা ঘটেছে। বর্তমান পৌর শহর জুড়ে থম থম অবস্থা বিরাজ করছে।

রাণীশংকৈল পৌরসভায় আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারী ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এখানে মোট ভোটার ১৪ হাজার ৭শত ০২ জন ভোটার। এতে মেয়র পদে আ’লীগের ৭ বিদ্রোহীসহ ৮ জন বিএনপির ১ বিদ্রোহীসহ ২জন জাতীয় পার্টির-১ নির্দলীয় ১ প্রার্থীসহ মোট ১২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৩ সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এ দিন দুপুরে বন্দরস্থ আ’লীগ দলীয় কার্যালয়ে পৌর নির্বাচনে আ’লীগ মনোনীত মোস্তাফিজুর রহমানের সমর্থনে উপজেলা যুবলীগের বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি রয়েলের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তৃতা করেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জসীম মাতব্বুর। এছাড়াও সাবেক এমপি সেলিনা জাহান লিটা কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহ-সম্পাদক আরিফ হোসেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের একাধিক নেতাসহ জেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুল মজিদ আপেল সম্পাদক সমির দত্ত উপজেলা আ’লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ সইদুল হক সম্পাদক তাজউদ্দীন মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান উপজেলা ও পৌর যুবলীগের নেতৃবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

তারা দলীয় অফিসে সভা শেষে পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে পথসভা করেন। পরিশেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শিবদিঘী উপজেলা পরিষদ মার্কেটের সামনে পথসভা করার লক্ষে উপজেলা আ’লীগের নেতা প্রভাষক প্রশান্ত কুমার বসাক হ্যান্ড মাইকে বার বার ঘোষনা দিয়ে বলছিলেন কিছু সময়ের মধ্যে এই স্থানে জেলা যুবলীগের নেতৃবর্গ পথসভা করবেন। আপনারা সবাই আমন্ত্রিতসহ বিভিন্ন কথায় পথসভার প্রচারণা করছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, তারা রাত ৮টায় পথ সভা শুরু করে। পথসভা শুরুর কিছু সময়ের মধ্যে ইউএনও সোহেল সুলতান জুলকার নাইন উপজেলা পরিষদ থেকে তার সরকারী গাড়ীযোগে আচরণবিধি লঙ্গণ করছেন কিনা তা পর্যবেক্ষণে টহল দেওয়ার জন্য বের হয়ে দেখেন। তার পরিষদের সামনে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণার জন্য নির্ধারিত সময়ের পরেও পথসভা চলছে।

স্থানীয় মানুষের বরাতে জানতে পারেন এটি নৌকার সমর্থনে আ’লীগের নেতাকর্মিরা পথসভা করছেন। পরে তিনি উপস্থিত উপজেলা আ’লীগের সম্পাদক ত্জাউদ্দীনকে প্রচারণার নির্ধারিত সময় শেষ অবগত করে। বিশ মিনিটের মধ্যে সভা সমাপ্তের আহবান জানিয়ে তিনি পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে বেরিয়ে পড়েন।

প্রায় ৪০ মিনিট পর পূনরায় উপজেলা পরিষদে এসে দেখেন সভা চলছেই। পরে তিনি নিজে গিয়ে সভা বন্ধ করতে বলায় তার উপর চটে যান জেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুল মজিদ আপেল কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহ-সম্পাদক আরিফ হোসেনসহ যুবলীগের নেতারা। পরে সাবেক সাংসদ সেলিনা জাহান লিটাসহ আ’লীগ যুবলীগ নেতারা ইউএনওকে সভাস্থল থেকে সরিয়ে উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটকের কাছে নিয়ে যায়। এদিকে নির্বাচনী পথসভা বন্ধ না করে বক্তৃতা চালিয়ে যান জেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুল মজিদ আপেল। অবস্থার বেগতিক দেখে ইউএনও থানায় ফোন দিলে ওসি তার সঙ্গিয় র্ফোস নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন।

এদিকে জেলা যুবলীগের সভাপতি আপেল প্রায় নয়টায় দিকে বক্তৃতা শেষ করেই। উপস্থিত সাধারণ মানুষের সামনে বলতে থাকেন, ইউএনও’র এত সাহস কি করে হয়, আমার সভা বন্ধ করার। বেটা নৌকার সভা বন্ধ করতে আসে, ইউএনওকে বিএনপি জামায়াতের এজেন্ট আখ্যায়িত করে বলেন, একে আমি দেখে নিব। এর একটা বিহিত করেই আমি যাবো, তিনি এসময় আরেকজন যুবলীগ নেতাকে বলতে থাকেন এই ফোন লাগা, ফোন লাগা চেয়ারম্যানকে ফোন লাগা, এছাড়াও তিনি নিজেও সেখান থেকে ডিসি’কে জানিয়েছেন বলে বার বার সাধারণ মানুষের সামনে বলছিলেন। তাছাড়াও আরো বিভিন্ন হুমকি ধামকি মূলক কথা বলে। পরিশেষে তিনি বলেন, এখানে যদি নৌকা হারে তাহলে দেখে নেব ইউএনও’কে।

এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে গতকাল বুধবার বেলা ২টা ২৮ মিনিটে একাধিকবার ফোন দিলেও তাতে সাড়া দেননি জেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুল মজিদ আপেল।

উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন বলেন, এখানে যদি নৌকা হারে, ইউএনও’র কারণেই হারবে। ইনি নৌকার প্রত্যেক সভায় বাধা দিচ্ছে। গতকালের ঘটনাটাও একই ধারাবাহিকতায় তিনি ঘটিয়েছেন। পথসভা বাধা দেওয়ায় ইউএনওর সাথে নেতাকর্মিদের একটু কথা কাটাকাটি হয়েছে এর থেকে বেশি কিছু না।

থানা পরিদর্শক এস এম জাহিদ ইকবাল বলেন, ঘটনাটি জানার পরে আমি তাৎক্ষনিক সেখানে গিয়েছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছি,বর্তমানে আইনশৃঙ্গলার অবস্থা ভালো রয়েছে। হুমকি প্রসঙ্গে বলেন, এ বিষয়ে আমি জানি না। হুমকির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, নিয়মের বাইরে তারা সভা করছিল। তাই বাধা দিয়েছিলাম,পরে তারা একটু হট্রগোল করেছে। বিষয়টি আমি উর্দ্বধন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, যে যতই ক্ষমতাবান হোক পৌর নির্বাচনে কেউ প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন না। নির্বাচন হবে অবাধ সুষ্ঠ নিরপেক্ষ।

(কেএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test