E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বরিশালে ৪০ দিনের প্রকল্পের সরকারি টাকা লোপাটের ফোনালাপ ভাইরাল

২০২১ ফেব্রুয়ারি ১১ ১৭:৩৭:৫৭
বরিশালে ৪০ দিনের প্রকল্পের সরকারি টাকা লোপাটের ফোনালাপ ভাইরাল

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : জেলার উজিরপুর উপজেলার অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (৪০ দিন) প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নিতীর অভিযোগ উঠেছে। সুবিধাবঞ্চিত অতিদরিদ্র শ্রমিকদের পরিবর্তে ড্রেজার, ভটভটি, ভ্যেকু ও চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক দিয়ে প্রকল্পের নামমাত্র বাস্তবায়ন দেখিয়ে অর্থ লোপাটের মহোৎসব চালাচ্ছেন জনপ্রতিনিধিরা।

স্থানীয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজশে প্রকল্পে লাগামহীন দুর্নীতি করে উপজেলার জল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য সদস্যরা কিভাবে অর্থ লোপাট করেছেন তার একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

সরকারী কাজে দুর্নীতি ও অনিয়ম করে ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে টাকা ভাগাভাগির ওই ফোনালাপের রেকর্ড বুধবার বিকেলে “মোঃ জুনায়েদ সিদ্দিক” নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করা হয়। মুহুর্তের মধ্যে তা ভাইরাল হওয়ায় সর্বত্র তোলপাড় শুরু হয়েছে। এমনকি ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেবী রানী হালদারসহ অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে গোটা উপজেলাজুড়ে চলছে তীব্র সমালোচনা।

ভাইরাল হওয়া ১৯ মিনিট ৫৬ সেকেন্ডের অডিও রেকর্ডটি সাংবাদিকদের হাতে আসার পর খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার একাধিক সরকারী কর্মকর্তাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরন করেন জল্লা ইউনিয়নের ৪,৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের নারী সদস্য দিপালী হালদার। এমন অভিযোগে অতিসম্প্রতি নারী সদস্য দিপালী হালদারের বিরুদ্ধে ইউপি চেয়ারম্যান বেবী রানী হালদারসহ সকল সদস্যরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অনাস্থা দিয়েছিলেন। কয়েকদিন পরেই স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে তাকে (দিপালী) কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় গত কয়েক সপ্তাহ আগে নারী সদস্য দিপালী হালদার তার বিরুদ্ধে দেয়া অনাস্থা সম্পর্কে জানতে চেয়ে চেয়ারম্যান বেবী রানী হালদারের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে (০১৭৪০-৬৭০৫৩৭) কল করে কথা বলেন।

ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া অডিও রেকর্ডটি সেই ফোনালাপের। এতে নারী সদস্য দিপালী হালদার তার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অনাস্থা দেয়া সম্পর্কে ইউপি চেয়ারম্যান বেবী রানী হালদারকে প্রশ্ন করে বলেন, আপনি যে টাকা চাইছেন আমার কাছে, আমি দিছিনা আপনাকে, ৭০ হাজার টাকা দিছি, আগেরবার কর্মসূচির ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি। আমি কি আপনারে কম টাকা দিয়েছি। উত্তরে চেয়ারম্যান বলেন, ৭০ হাজার দেও, আর তুমি ৯০ হাজার টাকা দেও, সেটা কোনো বিষয় না। তোমার আসবে কতো, হিসাব থাকতে হবে কতো টাকায় কতো আসবে। চেয়ারম্যান বলেন, উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা (পিআইও) অয়ন সাহা লিখে দিছে, চেয়ারম্যানের প্রজেক্টে ১ লাখ ১০ হাজার, আর তোমার প্রজেক্টে দিছে ৯০ হাজার।

দিপালী আরও বলেন, আমি একবার ৭০ হাজার টাকা, পরে ৫০ হাজার টাকা দিছি। ওই কাজে আমি মোট ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিছি, আর কতো দিবো। এ কথা শুনেই চেয়ারম্যান ক্ষুব্ধ হয়ে ওই সদস্যকে বলেন, আমি চেয়ারম্যান হইয়া ৭০ হাজার টাকা দিতে পারছি, আমার স্বামী (নিহত চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ হালাদার নান্টু) এতো টাকা দেনা রেখে গেছেন। আমি সেগুলো দিতে পারছি, আর তোমরা মেম্বার হইয়া দিতে পারবানা, তোমরা উপজেলায় গিয়া বুঝবা। উপজেলা প্রশাসন এক টাকাও কম নেবে না।

দীর্ঘ ফোনালাপের মধ্যে এই দুই জনপ্রতিনিধি স্থানীয় রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়েও কথা বলেন। একপর্যায়ে রাগান্বিত হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান বেবী রানী হালদার অশ্লীল ভাষায় বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি’কে নিয়েও আপত্তিকর মন্তব্য করেন। এসব বিষয়ে জল্লা ইউপি চেয়ারম্যান বেবী রানী হালদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিষদের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা নারী সদস্য দিপালী হালদারকে ব্যবহার করে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। এ ঘটনাও ষড়যন্ত্রের অংশ। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে নিয়ে ফোনালাপের মধ্যে আপত্তিকর মন্তব্যের বিষয়টি অস্বীকার করে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি চেয়ারম্যান বেবী রানী হালদার।

অপরদিকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) অয়ন সাহা বলেন, আমার বরাত দিয়ে অন্য কেউ ঘুষ চাইলে সে জন্য আমি দায় নিবোনা। তবে এ ধরনের ঘটনার সু-নির্দিষ্ট প্রমান পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ এনে জল্লা ইউপির চেয়ারম্যান বেবী রানী হালদারের কাছে ঘুষের দুই লাখ টাকা দাবীর বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণতি বিশ্বাস বলেন, চেয়ারম্যান সম্পূর্ন মিথ্যা এবং বানোয়াট কথা বলেছেন। তার সাথে ওই প্রকল্প নিয়ে কোনো কথা হয়নি। তাছাড়া কোনো কাজেই অনিয়ম মেনে নেওয়া হবেনা। তিনি আরও বলেন, ভাইরাল হওয়া ফোনালাপের অডিও রেকর্ডটি সম্পর্কে আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথমপর্যায়ে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (৪০ দিন) প্রকল্পে উজিরপুর উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে ৩ হাজার ৫৭ জন শ্রমিকের কাজের জন্য ২ কোটি ৫৯ লাখ ১৬ হাজার ৩৭৩ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের ২ অক্টোবর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের তৎকালীন উপ-পরিচালক (কাবিখা-৩) সঞ্জীব সূত্রধর স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ বরাদ্দ হয়। উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের মোট ৬৬টি প্রকল্পের জন্য সরকারের ওই বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। এরমধ্যে জল্লা ইউনিয়নের সাতটি প্রকল্প বাস্তবায়নে ৩৪১ জন শ্রমিকের কাজের জন্য ২৭ লাখ ২৮ হাজার টাকা ব্যয় হয়।

তবে অভিযোগ রয়েছে, ওই ইউনিয়নের সবগুলো প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করে বরাদ্দের সিংহভাগ টাকা জনপ্রতিনিধিরা লোপাট করেছেন।

(টিবি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

০৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test