E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বগুড়ায় আ. লীগ থেকে আব্দুল মান্নান আকন্দকে অব্যাহতি

২০২১ ফেব্রুয়ারি ২৪ ১৮:৪৩:৩১
বগুড়ায় আ. লীগ থেকে আব্দুল মান্নান আকন্দকে অব্যাহতি

স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়া পৌরসভায় মেয়র পদের বিদ্রোহী প্রার্থী পৌর আওয়ামী লীগের ৪নং ওয়ার্ড কমিটির সদস্য আব্দুল মান্নান আকন্দকে সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন উষ্কানীমূলক বক্তব্যসহ আওয়ামী লীগের সিনিয়র একাধিক নেতৃবৃন্দকে গালিগালাজের অভিযোগ রয়েছে।

মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) আওয়ামী লীগ বগুড়া পৌর কমিটির সভাপতি রফি নেওয়াজ খান রবিন এবং সাধারণ সম্পাদক আবু ওবায়দুল হাসান ববি স্বাক্ষরিত যৌথ বিবৃতিতে অব্যাহতির বিষয় জানানো হয়। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য বগুড়া পৌরসভা সাধারণ নির্বাচন-২০২১ এ মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির পৌর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু ওবায়দুল হাসান ববি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা না করে স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থী হিসেবে জগ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আব্দুল মান্নান আকন্দ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্বাচন, রাজনীতি, বিশেষ ব্যক্তিত্বসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিগত সময়ে লাগাতার অশালীন ও উষ্কানীমূলক বক্তব্য প্রচার করে আসছেন আব্দুল মান্নান আকন্দ।

আওয়ামী লীগ বগুড়া পৌর কমিটির সভাপতি রফি নেওয়াজ খান রবিন বলেন, আব্দুল মান্নান আকন্দ দলের সদস্য হয়েও পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া তিনি নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে আওয়ামী লীগের সিনিয়র একাধিক নেতৃবৃন্দকে গালিগালাজ করছেন।

তিনি আরও বলেন, আব্দুল মান্নান আকন্দের সংগঠন বিরোধী এসব কর্মকাণ্ডের বিষয় দলের কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানানো হয়েছে। কেন্দ্রের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে পৌর আওয়ামী লীগের ৪নং ওয়ার্ড কমিটির দলীয় পদ ও প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার আর কোন সম্পর্ক থাকবে না। দলীয় পর্যায়ের সকল নেতাকর্মীকে তার সঙ্গে দলীয় কোন সম্পর্ক না রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। নির্দেশ অমান্যকারীর বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ঘটনার পরম্পরায় জানা যায়, ইতপূর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্পর্কে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করার অভিযোগে আবদুল মান্নান আকন্দ ওরফে ফেম মান্নানের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সিনিয়র জুশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আলাদা মামলা করেন নন্দীগ্রাম উপজেলা যুবলীগের সদস্য এফএমএ বারী ও শিবগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুম পারভেজ মুকুল। মামলার এজাহারে দণ্ডবিধির ৪৯৯/৫০০ ধারা উল্লেখ করা হয়েছে। শুনানী শেষে শিবগঞ্জ আমলী আদালতের বিচারক শরিফুল ইসলাম শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এবং নন্দীগ্রাম আমলী আদালতের বিচারক আহসান হাবিব পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি বগুড়া ক্যাম্পের ওসিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দখিলের নির্দেশ দেন।

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুম পারভেজ মুকুল শিবগঞ্জ আমলী আদালতে এজাহারে উল্লেখ করেন, “আসামি আবদুল মান্নান আকন্দ দুর্দান্ত বহুরূপী, ঠককারী, ধান্দাবাজ, মানহানীকর কার্যাকলাপে জড়িত। তিনি ফেসবুক ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, দায়িত্বশীল মন্ত্রী ও নেতাদের সম্পর্কে মানহানীকর মন্তব্য করছেন। গত ২০১৭ সালের ১ ডিসেম্বর নিউজ দা ভিউজ বগুড়া ডটকমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনাকে এশিয়া মহাদেশের মধ্যে ‘হিংস্র' নেত্রী আখ্যায়িত করেন। এতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে।”

“ওই বছরের ১৭ ডিসেম্বর এক সাক্ষাৎকারে তিনি (আকন্দ) বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগে ১৫৩ জন জাকাতের এমপি আছেন।’ ওই বছরের ৩০ এপ্রিল বিকেল ৪টা ৫৭ মিনিটে তার ফেসবুক আইডিতে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে হারবাল চিকিৎসক আখ্যায়িত করেন। তিনি (মন্ত্রী মহোদয়) বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের সঙ্গে পরামর্শ করে মিডিয়ায় কথা বলেন, যা জারি গানের মত মনে হয়।” এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, “১৮ আগস্ট শহরের জামিল শপিং সেন্টারে রোটারী ক্লাব আয়োজিত নিরপদ সড়ক চাই, শীর্ষ গোলটেবিল বৈঠকে আবদুল মান্নান আকন্দ বলেন, ‘নামের আগে ও পরে শেখ লাগানো থাকলে আর কিছুর প্রয়োজন হয় না। এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলহাজ্ব মমতাজ উদ্দিনকে সন্ত্রাসীদের মুলহোতা বলেছেন।’

আরো জানা যায়, ২০১৯ সালে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড বগুড়া শাখা হতে পরস্পর যোগসাজসে প্রতারণা ও জালিয়াতি করে ৩১ কোটি ১৮ লাখ ৪৯ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে দায়েরকৃত দুর্নীতি মামলায় বগুড়া মেসার্স শুকরা এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর মোঃ আব্দুল মান্নান আকন্দ এবং ওই ব্যাংকের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপক (পরবর্তি সময়ে বরখাস্তকৃত) মোঃ রফিকুল ইসলামের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে হাজতি পরোয়ানা মূলে জেল হাজতে প্রেরণ করে। সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড বগুড়া শাখার তৎকালীন ব্যবস্থাপক মোঃ শফিকুল ইসলাম ২০১১ সালের ৩০ নভেম্বর বাদি হয়ে বগুড়া থানায় দুর্নীতির এই মামলা দায়ের করেন।

মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্ত আসামীরা পরস্পর যোগসাজসে প্রতারণা ও জালিয়াতি করে ভুয়া হিসাব সৃষ্টি করে ওই ব্যাংকের টাকা আত্মসাত করেন। মামলা তদন্ত শেষে দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় বগুড়ার তৎকালীন উপ-পরিচালক মোঃ আনোয়ারুল হক ওই ২ আসামী (মোঃ আব্দুল মান্নান আকন্দ এবং মোঃ রফিকুল ইসলাম) সহ ৯ জনকে অভিযুক্ত করে গত ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। চার্জশীটে উল্লেখ করা হয় যে, আসামীরা গত ২০০৮ সালের ২৩ অক্টোবর হতে ২০১১ সালের ৩ নভেম্বরের মধ্যে ওই ব্যাংক হতে জালিয়াতি, প্রতারণা ও বিশ্বাস ভঙ্গ সহ দুর্নীতির মাধ্যমে ৩১ কোটি ১৮ লাখ ৪৯ হাজার টাকা আত্মসাত করেন।

অারো জানা যায়, গত ২১ ডিসেম্বর ২০২০, সোমবার বগুড়া প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে মোঃ আব্দুল মান্নান আকন্দের বিরুদ্ধে বগুড়ার ফল ব্যাবসায়ীকে হত্যার অভিযোগ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে মুনছুর আলম অভিযোগ করেন, রেলওয়ে কল্যাণ ট্রাস্ট মার্কেটের পরিচালনা কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে ঠিকাদার আব্দুল মান্নান আকন্দকে ১২টি দোকানের জন্য ৫৮ লাখ টাকা প্রদান করেন এবং দোকান বুঝে নেন। গত ৮ ডিসেম্বর উক্ত আব্দুল মান্নান ও তার লোকজন ওই দোকানগুলো ভাংচুর করে দখল করতে এলে পুলিশের সহায়তায় প্রতিরোধ করা হয়।

মুনছুর আলম বলেন, “পরে ২০ ডিসেম্বর আব্দুল মান্নান ও তার লোকজন দোকানে এসে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে রড দিয়ে আঘাত করে এবং দোকানের প্রায় ২লাখ টাকার ফল ফেলে দেয়। উপর্যুপরি আঘাতে আমার মাথা, হাত ও পায়ে আঘাত লাগে। আমার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে হামলাকারীরা চলে যাওয়ার সময় আমাকে হত্যার হুমকি দেয়।” এই ঘটনায় বগুড়া সদর থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

এছাড়াও উল্লেখ্য যে, বগুড়া মোটর মালিক গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইতিপূর্বে সংঘটিত সংঘর্ষ সহ সকল ঘটনায় মোঃ আব্দুল মান্নান আকন্দের সক্রিয় অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা গেছে। হাইকোর্টের রায় অবমাননা করে জোরপূর্বক বগুড়া মোটর মালিক গ্রুপের অফিস নিয়ন্ত্রণে রাখা অবৈধ দখলদারের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে উষ্কানীমূলক বক্তব্য প্রচার করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবনেতা জানান, বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অসম্মান করে নিয়মিত উষ্কানীমূলক বক্তব্য/বিবৃতি প্রদানের মাধ্যমে এক শ্রেণির মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন তিনি। বগুড়ার মানুষ ভালোমন্দ চেনে এবং জানে। জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করা এতো সহজ নয়। এবার অন্তত বগুড়া পৌর আওয়ামী লীগ যথার্থ ও যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

(আর/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test