E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মন্দিরের বেদি ভাঙচুর, চারজনকে পিটিয়ে জখম : তিন দিনেও মামলা হয়নি 

২০২১ ফেব্রুয়ারি ২৪ ২২:৪৪:০৯
মন্দিরের বেদি ভাঙচুর, চারজনকে পিটিয়ে জখম : তিন দিনেও মামলা হয়নি 

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : বেড়া দেওয়ার সময় মণষা মন্দিরের বেদি ভাঙচুর ও দু’ কলেজ ছাত্রীসহ দলিত পরিবারের চারজনকে পিটিয়ে জখম করার ঘটনায় তিন দিনেও মামলা নেয়নি পুলিশ। সোমবার সকাল ১১টার দিকে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা চাঁচাই গ্রামে এ হামলার ঘটনা ঘটে। অভিযোগ পুলিশ কর্মকর্তারা হামলাকারিদের পক্ষ নিয়ে মামলা রেকর্ড না করে এজাহার তুলে নেওয়ার জন্য নির্যাতিত ও তাদের স্বজনদের চাপ দিচ্ছেন।

কালিগঞ্জ উপজেলার চাঁচাই ঋষিপাড়ার জয়ন্তী দাস জানান, তার ঠাকুরদাদা বিষ্ণুপদ দাস ও খইয়ে দাস ২০ বছর আগে একই গ্রামের কুদ্দুস গাজী ও পারুলগাছা গ্রামের আনছার আলী, ইছা গাজী ও মুসা গাজীর কাছে এক বিঘা জমি বিক্রি করেন। বর্তমান মাঠ পড়চায় এক বিঘা জমি তাদের নামে রেকর্ডও হয়েছে। ঠাকুরদাদা মারা যাওয়ার পর তার বাবা জয়দেব দাস পাঁচ শতক জমি ও মণষা পুজার স্থানটি মালিকানা পান। স্বাধীনতার পর থেকে ওই স্থানে প্রতি বছর মণষা পুজা করা হয়।

জয়ন্তী দান আরো বলেন, তার ঠাকুর দাদার কাছ থেকে কেনা জমি ব্যতীত দু’শতক জমির উপর থাকা মণষা পুজার স্থানটি তার বলে দাবি করে আসছিল কুদ্দুস গাজী। এ নিয়ে ইতিপূর্বে কয়েকবার মারপিটের ঘটনাও ঘটেছে। আড়াই মাস আগে বিষ্ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজউদ্দিন ও ইউপি সদস্য আফছার আলীর মধ্যস্ততায় আমিন ডেকে মাপ জরিপ করা হয়। সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তার বাবা জয়দেব দাস ও মা নীলা দাস মণষার পূজা বেদীর চারপাশ বেড়া দিয়ে ঘিরছিলেন।

এমন সময় কুদ্দুস গাজী, ছেলে আনারুল গাজী, ফেরদৌস গাজী ও জামাতা চট্ট্রগ্রামে কর্মরতত সেনা সদস্য নাজমুল, আব্দুর রাজ্জাক ও খোকন টাপালীসহ কয়েকজন বাঁশের লাঠি দিয়ে বাবা ও মাকে মারপিট শুরু করে। খবর পেয়ে সেসহ বোন পিয়া ছুঁটে এসে বাবা ও মাকে রক্ষায় এগিয়ে এলে তাদেরকেও এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করা হয়। তারসহ বোন পিয়া, মায়ের পরিহিত পোশাক টেনে হিঁচড়ে ছিঁড়ে ফেলা হয়। কেটে ফেলা হয় মন্দিরের জমির কয়েকটি গাছ। ভেঙে ফেলা হয় বাঁশের বেড়া।

ট্রিপল নাইনে ফোন করলে কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক মোকাদ্দেস আলীর নেতৃত্বে পুলিশ এসে তাদেরকে উদ্ধার করে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। ওই দিন সন্ধ্যায় তার মা বাদি হয়ে সেনা সদস্য নাজমুলকে প্রধান আসামী করে ছয় জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি এজাহার দাখিল করেন। রাতেই মামলা রেকর্ড হওয়ার ব্যাপারে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হুসেন তাদেরকে আশ্বস্ত করেন। পরদিন সকালে উপপরিদর্শক সঞ্জীবসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে আসেন। তারাও মামলা রেকর্ড হওয়ার ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে চলে যান।

থানায় যেয়ে উপপরিদর্শক সঞ্জীব তাদের পাড়ার অসিত দাস, মামাত ভাই ভোলা নাথ দাসসহ কয়েকজনকে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কালিগঞ্জ সার্কেলের ভারপ্রাপ্ত সার্কেল অফিসান ইয়াছিন আলীর বরাত দিয়ে মীমাংসার জন্য থানায় যেতে বলেন। তারা না যাওয়ায় মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে থানা ভারপ্রাপড্ত কর্মকর্তা তাদেরকে জানান যে সার্কেল সাহেব বুধবার দুপুর দু'টোয় হামলার স্থল পরিদর্শণে যাবে।

দুপুর ৫টার দিকেও তারা না আসায় স্থানীয়রা সাপ্তাহিক কুশুলিয়ায় চলে যান। সাড়ে ৫টার দিকে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সার্কেল অফিসার ঘটনা স্থলে মনসা বেদীর জায়গা ঘিরে দেওয়া ও কুদ্দুসের ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে মীমাংসা করে নিতে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেন। একপর্যায়ে তার কাছে এসেও মীমাংসা করে নিয়ে এজাহার তুলে নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে দীর্ঘক্ষণ পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের বাড়ির পাশে অপেক্ষা করেন।

জানতে চাইলে কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হুসেন বলেন, কোন চাপ নয়, দু’পক্ষ অভিযোগ করেছে । অভিযোগের তদন্ত চলছে।

কালিগঞ্জ সার্কেলের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইয়াছিন আলী কারো পক্ষ নিয়ে মীমাংসা করার জন্য নির্যাতিত পরিবারকে চাপ সৃষ্টির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তারা মন্দিরের জায়গা ঘিরে দিয়ে হামলাকারিদের ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে মীমাংসার কথা বলে শান্তি স্থাপন করতে চেয়েছেন।

জয়ন্তী দাস মীমাংসার ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বাড়িতে আসা পর্যন্ত সময় নিয়েছে। তবে এ ঘটনায় কেবলমাত্র নীলা দাস অভিযোগ করেছে, উভয়পক্ষ নয়।

(আরকে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test