E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

রাজারহাট ঠাটমারী বধ্যভূমিতে স্মৃতি স্তম্ভ হলেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পায়নি শহীদরা

২০২১ ফেব্রুয়ারি ২৮ ১৭:০৬:৫৯
রাজারহাট ঠাটমারী বধ্যভূমিতে স্মৃতি স্তম্ভ হলেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পায়নি শহীদরা

প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ঠাটমারী বধ্যভূতি স্মৃতি স্তম্ভের স্থানে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় লোমহর্ষক স্মৃতি বিজড়িত থাকলে আজো মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পায়নি শহীদরা। সেই সময় পাকবাহিনীরা রেলযোগে এসে ঘাঁটি তৈরি করে এ অঞ্চলের মানুষের উপর জুলুম নির্যাতন করে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে ব্যানট খ্ুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। এমন লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন এলাকার কিছু প্রত্যক্ষদর্শী মানুষ। 

প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে বলরাম (৭৪), আকবর আলী(৬৭), হাসেন আলী (৭৫) বলেন, ৭১ এর যুদ্ধের সময় এলাকার হিন্দু-মুসলিম পরিবারগুলোর উপর পাকবাহিনীরা যেভাবে অত্যাচার করছিল সেসব কথা বলতে গেলে চোখে পানি আসে, লোম শিউরে উঠে। বিশেষ করে হিন্দুদের উপরই নিযার্তনের খড়গ বেশী মাত্রায় পড়েছিল। পাকবাহিনীরা এ এলাকার বহু লোকের বাড়ি-ঘর লুট করে পুড়িয়ে দিয়েছে। মা-বোনদের বিবস্ত্র করে প্রকাশ্যে ইজ্জিত লুন্ঠন করেছে।

তাদের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠছিল। পাকবাহিনীরা রেলযোগে এসে ঠাটমারীতে ব্রীজের পাশে ক্যাম্প স্থাপন করে। সেখান থেকে রাজাকারদের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে গিয়ে বাড়িঘর লুট করে গরু-ছাগলের সাথে লোকদের ধরে নিয়ে এসে ক্যাম্পে নির্যাতন করে গুলি করে হত্যা করতো। বহু মা-বোনকে ওই ক্যাম্পে নিয়ে এসে ইজ্জত লুটিয়ে নিয়ে মেরেও ফেলেছে তারা। কেউ লাশের হদিস পায়নি। ৭১ সালের জ্যেষ্ঠ মাসের শেষের দিকে বৃহস্পতিবার ঠাটমারী বাজেমুজরাই এলাকার সাবেদ আলী(৫৫) রেললাইনের ধার দিয়ে গরু চড়াতে গিয়েছিল। ঠিক সেই সময় রেলযোগে পাকবাহিনীরা এসে সাবেদ আলীকে গুলি করে হত্যা করে। ওই এলাকায় রামগোপাল ও রাম কুমার নামে দুই ভাই ছিল। তাদেরকেও পাকবাহিনীরা ধরে নিয়ে গিয়ে সেখানে নির্মমভাবে নিযার্তন করে মেরে ফেলে। তাদের লাশও ফেরত দেয়নি জানান তারা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঠাটমারী ব্রীজের নিচে অসংখ্য মানুষের কঙ্কাল পড়েছিল। সেগুলো আমরা দেখেছি। সেখানে এখন শহীদদের স্মৃতি স্তম্ভ তৈরি হয়েছে।

ওই এলাকার রাম গোপালের স্ত্রী ননিবালা(১২০) আক্ষেপ করে বলেন, ‘যুদ্ধ হবার ৫০ বছর পার হয়া গ্যালো। মোর স্বামী-দেবর এই দ্যাশটার জন্য পাকবাহিনীর হাতত মরি গেল, কিন্তু মোর ছাওয়াগুলা আজ না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে সরকার একনা চোখ তুলিও দ্যাখে না। মোক একনা বয়ষ্ক কাট করি দিছে তাকে দিয়া মুই কোনমতে চলছং।’

এদেরকে মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রকাশ্য দিবালোক হত্যা করা হলেও তাদের নাম মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের তালিকায় লিপিবদ্ধ না হওয়ায় এলাকার প্রত্যক্ষদর্শী অনেকে ক্ষোভ করেন।

এছাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি আজগার আলী বলেন, আমার ভাই আজিজুল হককে ৭১এর যুদ্ধের সময় পাকবাহিনীরা বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে এই ঠাটমারী ব্রীজের নিচেই নির্যাতন করে হত্যা করেছিল। যা শুধু শহীদ আজিজুল হক স্মরণে রাজারহাট বাজারে একটি রাস্তা নামকরণ রয়েছে। এ রকম অসংখ্য মানুষজনের নাম না জানা লাশ এ ঠাটমারী বধ্যভূমিতে রয়েছে।

রাজারহাট উপজেলা মুক্তিযোদ্ধার সাবেক কমান্ডার মোঃ রজব আলী বলেন, পাকবাহিনীরা অনেককেই এখানে ধরে নিয়ে এসে হত্যা করেছে। আমি তখন এ এলাকায় ছিলাম না। তবে খবর পেয়েছি।

(পিএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test