E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অভিযোগকারী চম্পা মণ্ডলকে চম্পা হাজরা বলে চালানোর চেষ্টা

সাতক্ষীরা সিটি কলেজে জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত ২১ শিক্ষকের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত

২০২১ ফেব্রুয়ারি ২৮ ১৭:৩৮:৫০
সাতক্ষীরা সিটি কলেজে জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত ২১ শিক্ষকের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা সিটি কলেজে জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত ও এমপিওভুক্ত হওয়া ২১ শিক্ষকের বিরুদ্ধে আবারো তদন্ত শুরু হয়েছে। গত মঙ্গলবার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি সিটি কলেজে এসে এর তদন্ত করেন। অভিযোগ, অভিযোগকারী চম্পা রানী মণ্ডলের পরিবর্তে ওই কলেজের শিক্ষিকা চম্পা রানী হাজরাকে পদবী পরিবর্তন করিয়ে সাক্ষ্য দিয়ে অনিয়ম ও দূর্নীতির ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছেন অধ্যক্ষ আবু সাঈদ।

আশাশুনির কামালকাটি গ্রামের চম্পা রানী মল্ডল বলেন, ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই দু’দকের ১০৬ হট লাইনে প্রায় চার কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্যে কলেজ পরিচালনা পরিষদের তৎকালীন সভাপতি, কলেজ অধ্যক্ষ আবু সাঈদ ও মাউশির মহাপরিচালক, মাউশির খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক, জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে এই অনিয়মের অভিযোগ আনেন তার স্বামী ২০১১ সালের ২৬ মে সিটি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে নিয়োগপ্রাপ্ত বিধান চন্দ্র দাস। তিনিও ওই বছরের ১৫ জুলাই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক বরাবর একই বিষয়ে অভিযোগ করেন। তার স্বামীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের পহেলা আগস্ট দুদকের উপ-পরিচালক এনফোর্সমেন্ট মোঃ মাসুদুর রহমান সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং প্রতিবেদন প্রেরণপূর্বক কমিশনকে অবহিতকরণের নির্দেশ প্রদান করেন।

পরে এই অভিযোগের পক্ষে প্রমাণপত্রসহ লিখিত অভিযোগ চাওয়া হলে প্রভাষক বিধান চন্দ্র দাস গত বছরের ৫ আগস্ট ৬ পৃষ্ঠা বর্ণিত অভিযোগ ও শতাধিক পৃষ্ঠার তথ্যপ্রমাণসহ দুদক চেয়ারম্যান বরাবর ফের আবেদন করেন। যা হটলাইনে করা অভিযোগের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। এ বিষয়ে একাধিক বিস্তারিত প্রতিবেদন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

বিধান চন্দ্র দাসের অভিযোগ অনুযায়ি গত ১১ জানুয়ারি সাতক্ষীরা সিটি কলেজের অধ্যক্ষকে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক(প্রশাসন) ও অনুসন্ধানী কর্মকর্তা প্রবীর কুমার দাশের দেয়া চিঠিতে অধ্যক্ষ আবু সাঈদসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ, বিধিবহির্ভূতভাবে রেজুলেশন জালিয়াতি করে শিক্ষক নিয়োগ ও অনিয়মের মাধ্যমে ১৬ শিক্ষককে এমপিওভুক্তি করার বিষয়টি তদন্তের জন্য ২১ শিক্ষককে ১৭ জানুয়ারি থেকে ২৭ জানুয়ারির মধ্যে ঢাকায় তলব করে প্রতিদিন দু’জন করে শিক্ষকের লিখিত জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। এরমধ্যে পাঁচজন শিক্ষকের কাগজপত্র জাল বলে প্রাথমিক ভাবে প্রমাণিত হয়।

চম্পা রানী মণ্ডল বলেন, তার অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত ও এমপিওভুক্ত ২১ শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রাথমিক তদন্ত করেন। তদন্তকারি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টার দিকে অভিযোগকারি হিসেবে তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে নিশ্চিত হলেও তদন্তকালে তাকে কলেজে ডাকেননি। ফলে ওই কলেজের অধ্যক্ষ আবু সাঈদ কৌশলে ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক চম্পা রানী হাজরাকে চম্পা রানী মণ্ডল বানিয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার সম্পর্ক বক্তব্য তদন্তকারি কর্মকর্তার সামনে উপস্থাপন করান। বিষয়টি তিনি জানতে পেরে ওই দিন রাত ৮টায় তদন্তকারি কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তদন্তকারি কর্মকর্তা তাকে অথবা তার স্বামীর মাধ্যমে অভিযোগের স্বপক্ষে কাগজপত্র তার খুলনা অফিসে পাঠাতে বলেন।

চম্পা রানী মণ্ডল আরো বলেন, দুদকসহ বিভিন্ন দপ্তরের তদন্তকালিন সময়ের মধ্যে কলেজ অধ্যক্ষ আবু সাঈদ ২০১৯ সালের ১২ মার্চের পরিপত্র উপেক্ষা করে অনার্স শাখায় নিয়োগপ্রাপ্ত ১৪টি বিষয়ের ১৯জন শিক্ষককে কাগজপত্র জালিয়াতি করে ডিগ্রীর তৃততীয় শিক্ষক বানিয়ে শিক্ষক কর্মচারিদের তালিকা প্রস্তুতকারক “বেইন বেজ” এ পঠিয়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিটি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক চম্পা রানী হাজরা সাংবাদিকদের বলেন, অধ্যক্ষ আবু সাঈদ তাকে পিওন দিয়ে ডাকিয়ে চম্পা রানী মণ্ডল হিসেবে তদন্তকারি টিমের সামনে হাজির করালেও তিনি অভিযোগকারি নন বলে জানিয়ে তার মোবাইল নং দিয়ে স্বাক্ষর করেছেন। তবে নিজের কিছু সমস্যার কথা তিনি তদন্তকারি টিমের কাছে উপস্থাপন করেছেন।

সিটি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সাঈদ বলেন, তিনি কোন অনিয়ম বাদূর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তিনি ভেবেছিলেন চম্পা হাজরা হয়তো ভুল করে চম্পা মণ্ডল লিখে ফেলেছেন।

বিধান চন্দ্র দাস বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা রাশেদুজ্জামান এর নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি ২০১৭ সালের ৩ ও ৪ এপ্রিল সিটি কলেজে এসে অধ্যক্ষ আবু সাঈদের সময়কালের নিয়োগ ও এমপিও ভুক্তিতে অনিয়ম ওদূর্নীতির বিষয়ে তএন্ত আসেন। এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করেন তারা। আবু সাঈদের ভ্যালকিতে ওই প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি। একইভাবে একই বিষয়ের উপর ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি সিটি কলেজে তদন্তে এলেও প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি।

তিনি আরো বলেন, ২০১৯ সালের ২ অক্টোবর সাতক্ষীরা সিটি কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি ও অধ্যক্ষ আবু সাঈদের যৌথ পরিকল্পনায় তাকে বিতাড়িত করা। এ নিয়মবহির্ভুত কাজের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে গেলে গত বছরের ২৪ নভেম্বর মহামান্য হাইকোর্ট শিক্ষা সচিব, মাউশির মহাপরিচালক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ নয়জনকে এক আদেশে তাকে এক মাসের মধ্যে এমপিওভুক্তিসহ স্বপদে পূর্ণবহালের নির্দেশ দেন। যদিও ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আদালতের আদেশ কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট বিবাদীরা কোন ব্যবস্থা নিয়েছেন কিনা তা তার গোচরে আসেনি।

এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অভিযোগকারি চম্পা রানী মণ্ডল ও চম্পা হাজরা একই নন তা নিশ্চিত হয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

(আরকে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test