E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গ্রেপ্তার হওয়া আসামির স্বজনদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন সাতক্ষীরার রুপ কুমার দাস

২০২১ মার্চ ০১ ১৬:৩৭:৫০
গ্রেপ্তার হওয়া আসামির স্বজনদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন সাতক্ষীরার রুপ কুমার দাস

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের স্বজনদের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বিডিআরের অবসরপ্রাপ্ত হাবিলদার সাতক্ষীরা সদরের লাবসা ইউনিয়নের মাগুরা দাসপাড়ার রুপ কুমার দাস (৭০)। 

রুপ কুমার দাস জানান, যশোরের মনিরামপুর উপজেলার বালিধা পাচাকড়ি গ্রামে জন্ম তার। ১৯৭২ সালে বিডিআরের সিপাহী পদে পিলখানায় চাকুরী জীবন শুরু করেন তিনি। ২০০৮ সালের ১৭ এপ্রিল তিনি হাবিলদার হিসেবে চাকুরিকরাকালিন অবসরে যান। ১৯৭৫ সালে বরিশালের বাবুগঞ্জের খানপুর গ্রামের অনিল দাসের মেয়ে অশ্রু রানী দাসের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ১৯৮০ সালে বদলি হয়ে সাতক্ষীরার তালতলা বিডিআর ৯নং ব্যাটালিয়নে চলে এসে মাগুরা দাসপাড়ার আজিবর রহমান ও মুজিবর রহমানের কাছ থেকে সোয়া ১৩ শতক জমি কিনে ১৯৯৪ সালে সেখানে বাড়ি বানিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

নিঃসন্তান হওয়ায় স্ত্রী অশ্রর সাথে একই এলাকার মুদি ব্যবসায়ি আনন্দ দাস ওরফে কালুর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে তিনি তার ভাইপো সুভাষকে তার বাড়িতে পড়াশুনার জন্য নিয়ে আসেন। নিঃসন্তান হওয়ায় তার বাড়ি ও সম্পদ ভাইপো পেয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় তার বাড়ি ও সম্পদ লিখে নেওয়ার জন্য তার স্ত্রী অশ্রু, কালু দাস, শ্যালক অনুপ কুমার দত্ত ও টেনু দত্ত পরিকল্পনা করে। স্ত্রী অশ্রুর নামে ব্যাংকে জমানো সকল টাকা তুলে আত্মসাৎ করা হয়। এ টাকার হিসাব চাওয়ার পর থেকে তার (রুপ) উপর অলিখিত মৃত্যুর পরোয়ানা জারি করা হয়। এসবের অংশ হিসেবে ২০০৮ সালের ১৯ এপ্রিল কালু দাস, শ্যালক অনুপ দত্ত ও টেনু দত্তসহ কয়েকজন তাকে তার বাড়ির গেটের সামনে থেকে তুলে নিয়ে নূর আলীর বাঁশবাগানে নিয়ে হত্যার চেষ্টা করে।

একইভাােব ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে বর্তমানে জেলগেট এলাকায় রাস্তার পাশে ইজিবাইক দিয়ে পিছন দিক থেকে ধাক্কা মেরে পুকুরের মধ্যে ফেলে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। একই বছরে দুর্গা পুজার সময় বিডিআর এ কর্মরত চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারি ও তার বাড়ির ভাড়াটিয়া শঙ্কর দাসের সহায়তায় অশ্রু দাস,কালু দাস ও তাদের সহযোগীরা বাগেরহাট কাড়াপাড়া থেকে বিষাক্ত তরল নিয়ে এসে পরিকল্পিতভাবে খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। বেহাই শিবু দাস তাকে কবিরাজের কাছে নিয়ে যায়। সেখান থেকে সামান্য সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলে তাকে কয়েকটি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে সাক্ষর করানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে তাকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা করে কালু ও অশ্রু গ্রুপের সদস্যরা।

একপর্যায়ে কৌশলে পালিয়ে যেয়ে জজ কোর্টের আইনজীবী সহকারি বিকাশের কাছে যেয়ে তিন দিন অবস্থান করেন। ২০১০ সালে স্ত্রী তার বিরুদ্ধে ব্রাক অফিসে বাড়ি লিখে দেওয়াসহ বিভিন্ন কারণে অভিযোগ করে। ব্রাকের বকচরা মোড় এলাকার অফিসের কর্মকর্তা বিনয় তাকে বিরোধ মীমাংসা করে দেওয়ার জন্য ৫০ হাজার টাকা নিয়ে তার বাড়ি বাগেরহাটের নজিরপুর থানাধীন আব্দুল গণি কলেজের পাশে নদী তীরবর্তী এলাকায় নিয়ে ভাড়াটিয়া গুণ্ডাদের দিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন। এ কাজের জন্য ব্রাক কর্মকর্তা বিনয় প্রতিপক্ষ অশ্রু, অুনপ ও টেনুর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়েছিলেন। নিজের বাড়ির সামনে রাস্তার পাশ দিয়ে ড্রেন তৈরির সময় মনিশঙ্কর কুনু সরকারি রাস্তা কাটার অভিযোগ এনে আনন্দ দাস ওরফে কালু দাসের উস্কানিতে তাকে হুমকি দেয়। এ ঘটনায় তিনি ২০১৯ সালের ১৩ মার্চ সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কাছে গণশুনানী চলাকালে অভিযোগ করেন।

রুপ কুমার দাস আরো অভিযোগ করে বলেন, চলতি বছরের ২৬ জানিুয়ারি সন্ধ্যার পর তিনি পূজায় বসাকালিন দরজা খোলা থাকার সূযোগে সন্ত্রাসী দিয়ে তার ঘরের নগদ টাকা, সোনার আংটিসহ দু’লক্ষাধিক টাকার জিনিসপত্র লুট করায় কালু দাস ও তার সহযোগীরা। গত ১০ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৭টার দিকে কালু দাস, তার স্ত্রী চায়না দাস ও তার সহযোগীরা বাড়ির গের্টে দরজার তালা ভেঙে ফেলে। শব্দ পেয়ে বাইরে এলে ওই সন্ত্রাসীরা তার গলায় ও মুখে মাপলার জড়িয়ে মাথা ও পিঠে হাতুড়ি পেটা করে। মারাত্মক জখম অবস্থায় অবসরপ্রাপ্ত কাস্টমস কর্মকর্তা বসির আহম্মেদ ও অমিত দাস তাকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

এ ঘটনায় তিনি ২৩ ফেব্রুয়ারি স্ত্রী অশ্রু দাস, কালু দাস, অনুপ দত্ত, টেনু দত্ত, চায়না দাসসহ পাঁচজনের নামে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। পরদিন পুলিশ কালু ও অনুপ দত্তকে গ্রেপ্তার করে। দু’ আসামী গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২৫ ফেব্রুয়ারি বিকেল তিনটার দিকে মনিশঙ্কর দাস ওরফে কুনু, কালু দাসের ছেলে সুমন ও মোহনসহ কয়েকজন কয়েকটি মোটর সাইকেলে আসা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কালুর বাড়িতে বৈঠক করে। বৈঠকে তাকে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ায় তিনি জীবন বাঁচাতে বর্তমানে আত্মগোপন করে রয়েছেন। প্রতিকার চেয়ে ছুটছেন প্রশাসনের দুয়ারে দুয়ারে।
জানতে চাইলে কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপরিদর্শক মিজানুর রহমান জানান, বিষয়টি তিনি জেনেছেন। রুপ কুমার দাসকে এ নিয়ে প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিতে বলা হয়েছে।

(আরকে/এসপি/মার্চ ০১, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test