E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দৌলতদিয়ার তিনটি ফেরিঘাট প্রভাবশালী মহলের দখলে!

২০২১ মার্চ ০৩ ১৪:৫৫:৫২
দৌলতদিয়ার তিনটি ফেরিঘাট প্রভাবশালী মহলের দখলে!

এমএ হীরা, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) : রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে ফেরি পারাপার কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে প্রায় ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত তিনটি ফেরিঘাট দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালীদের দখলে নিয়েছে। ঘাট কর্তৃপক্ষ ব্যবহার না করায় প্রভাবশালীরা ওই ঘাটগুলোতে বালুর চাতাল, ট্রলারে গরু ওঠা-নামা সাহ নানা রকম ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারীর কোন বালাই নেই।

দৌলতদিয়া ঘাটে নদী ভাঙনের কারেন ফেরি পারাপারের জন্য ২০১৭ ও ২০২০ সালে তিনটি নতুন ফেরি ঘাটের অ্যাপ্রোজ সড়ক নির্মান করা হয়েছিল। কিন্তু ওই সড়কগুলো এখন আর ব্যবহার করা হয় না। ওই অব্যহৃত সড়কগুলো স্থানীয় প্রভাবশালী মহল ক্ষমতার প্রভাব ঘাটিয়ে দখলে নিয়ে নানা ধরনের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে প্রভাবশালী মহল সড়কগুলো ব্যবহার করে লক্ষ লক্ষ আয় করলেও সরকার কোন রাজস্ব পাচ্ছে না।

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার কর্মমূখী মানুষের যাতায়াতে পদ্মা নদীর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া একটি গুরুত্বপুর্ণ নৌ-রুট। সারাবছর এ রুটে লক্ষ লক্ষ যাত্রী ও যানবাহন পারাপার হয়ে থাকে। কিন্তু নদী পারাপারের জন্য এ রুটে নির্মিত ফেরি ঘাটগুলো প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ভাঙনের শিকার হয়। এ কারনে এ রুটে ফেরি পারাপার স্বাভাবিক রাখতে নতুন ঘাট নির্মান সহ পুরাতন ঘাটগুলো সংস্কার কাজের জন্য প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়। দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ঘাটে সরকারী লোকজন কোটি কোটি টাকা অপরিকল্পিত ব্যয় দেখিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৭ সালে পদ্মার তান্ডবে দৌলতদিয়ার তৎকালীন থাকা ৪টি ফেরি ঘাটই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এ সময় দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাটের পাশে ছিদ্দিক কাজী পাড়ায় প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ ও ২ নং দুটি ফেরিঘাট স্থাপন করা হয়। এ জন্য তৎকালীন সময়ে ওই এলাকা থেকে প্রায় শতাধিক পরিবারের বসত বাড়িও সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। দৌলতদিয়া বিআইডব্লিউটিএ ও রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড এর তত্ববধায়নে ঘাট দুটি নির্মান কাজ করা হয়।

গত শুক্র দৌলতদিয়ায় অনুসন্ধান কালে জানা যায়, তৎকালীন সময়ে ওই দুটি ঘাট উদ্ভোধনের মাত্র মাস খানেক পর পারাপার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আর কখনো ঘাট দুটিতে ফেরি পারাপার করা হয়নি। বর্তমান ১ নং ফেরিঘাট দিয়ে ব্যবসায়ীদের গরু-মহিষ ট্রলারে তোলার কাজে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া ২নং ফেরি ঘাটটি বিভিন্ন সিমেন্ট কোম্পানীর সিমেন্ট নামানোর কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। বিনিময়ে বিআইডব্লিউটিএ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসদ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের কাছ থেকে উৎকোচ নিয়ে থাকেন। এ সময় একজন রফিকুল নামে একজন গরু ব্যবসায়ী বলেন, এই ঘাট দিয়ে গরুগুলো ট্রলারে তোলার জন্য নানা রকমের টাকা দিতে হয়।

এ ছাড়া ২০২০ সালে ব্যাপক ভাঙনে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বিআইডব্লিউটিএ ৬নং ফেরি ঘাটে পূর্বদিকে নদীর ভাটিতে ছাত্তার মেম্বর পাড়ায় ৩ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৭ নং ফেরি ঘাটের অ্যাপ্রোজ সড়ক তৈরী করে। ওই ঘাটটি নির্মানের জন্য প্রায় ৩০ একর ফসলী জমি একুয়ার করা হয়। কিন্তু ফেরি ঘাটটি নির্মান করার পর ঘাট এলাকায় নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় প্রায় দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও ওই ঘাটে পন্টুনও স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।

বুধবার দেখা যায়, ওই ঘাটটির অ্যাপ্রোজ সড়কের দুই পাশে স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের পাহাড়ের মতো উঁচু বালুর চাতাল। সরকারী ফেরি ঘাটের সড়ক দখল করে বালু কি ভাবে করছেন জানতে চাইলে বালু ব্যবসায়ীরা কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে না প্রকাশ না করার শর্তে বালু ব্যবসায়ীদের একজন ম্যানেজার জানান, প্রশাসন ও ঘাট কর্তৃপক্ষের সরকারী লোকজনকে ম্যানেজ করে এ সড়ক ব্যবহার করা হচ্ছে। কাকে ম্যানেজ করা হয়েছে তাদের নাম বলতে তিনি রাজি হননি।

বিআইডব্লিউটিএ’র সহকারী প্রকৌশলী শাহ আলম জানান, বর্ষা মৌসুমে নদী পারের জন্য ঘাটগুলো স্থাপন করা হয়। শুস্ক মৌসুমে পানি স্তর কমে যাওয়ায় ওখানে ফেরি ভিড়তে না পারায় ঘাটগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। এক প্রশ্নে জবাবে তিনি আরো জানান, ২নং ফেরি ঘাটে পন্টুন আছে তবে ফেরি ভিড়তে পারে না। তাছাড়া সহসাই ৭নং ফেরি ঘাটে পল্টুন স্থাপন করে ফেরি চলাচল উপযোগি করা হবে। চাঁদা আদায়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, পোর্ট হিসেবে ঘাটের ইজারাদার রয়েছে। তারা কিভাবে চাঁদা আদায় করেন তা তারাই বলতে পারেন।

এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, ঘাটের সড়ক দখল করে ব্যক্তি মালিকানায় যেকোন কার্যক্রম পরিচালনা করা অন্যায়। বিষয়টি ঘাট কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(এইচ/এসপি/মার্চ ০৩, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test