E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঠাকুরগাঁও নারী ও শিশু আদালতে ২ বছরে ১১০০ মামলা নিষ্পত্তি

২০২১ মার্চ ০৬ ১৪:৫৪:০৫
ঠাকুরগাঁও নারী ও শিশু আদালতে ২ বছরে ১১০০ মামলা নিষ্পত্তি

আহমেদ ইসমাম, ঠাকুরগাঁও : একটা সময় ছিলো যখন গ্রামের অসহায় মানুষদের ভিটে মাটি বিক্রি করে ন্যায্য বিচারের আশায় ঘুরতে হতো আদালতের দাড়ে দাড়ে। তবে সে চিত্র এখন পাল্টে গেছে অনেকটাই। বদলে গেছে ঠাকুরগাঁও এ বিচার বিভাগের  চিত্র। গত ২ বছরে নারী ও শিশু আদালতে নিষ্পত্তি হয়েছে প্রায় ১১শ মামলা । যা আগের চেয়ে প্রায় ৬শ মামলা বেশি। ঠাকুরগাঁও এর নারী ও শিশু ট্রাইবুনালের বিচারক গোলাম ফারুক এর ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় এই অগ্রগতি হয়েছে বলে আইনজীবি ও বিচার প্রার্থীরা অভিমত প্রকাশ করেছেন। 

আদালত সুত্রে জানা যায়, ঠাকুরগাঁও নারী ও শিশু ট্রাইবুনালে ২০১৯ সালে জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত.প্রায় ১১শ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। বর্তমানে এই আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা প্রায় ১৩শ। ২০১৯ সালে যা ছিল ১৭শ ৩৮।

সংশ্লিষ্ট আদালত সুত্রে জানা যায়, নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুনালে বিচারক গোলাম ফারুক প্রতিদিন নিদিষ্ট সময়ে এজলাসে উঠেন এবং কার্য তালিকার সকল মামলার শুনানী করেন। এক্ষেত্রে তিনি পেশকারের কাছে রাষ্ট্র পক্ষের প্রস্তাবিত স্বাক্ষীর সকল তালিকা সংগ্রহ করেন এবং সকল স্বাক্ষীর স্বাক্ষ গ্রহণ করেন। এছাড়া তিনি নিজেই উদ্দোগী হয়ে বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটরের সংগে স্বাক্ষী উপস্থিত করা সহ মামলা নিষ্পত্তি কর্ম কৌশল নির্ধারন করেন। এছাড়াও বেশিরভাগ মামলাই হয়ে থাকে হয়রানিমূলক। আদালত সেসব আমলে নেওয়ার সময় সুক্ষভাবে পরীক্ষা করায় হয়রানিমূলক মামলার সংখ্যা কমে গেছে এবং অভিযোগ গঠনের সময় কাগজ পত্র পরীক্ষা করায় অনেকে প্রাথমিক পর্যায়েই মামলায় অব্যাহতি পায়।

১০ বছরের অধিক পুরাতন মামলা গুরুত্ব দিয়ে বিশেষ যত্ন নেওয়া হয়। যার ফলে পুরাতন মামলা আশাতীতভাবে হ্রাস পেয়েছে। এতে আদালতে বিচার প্রার্থী মানুষের হয়রানী ও আর্থিক ক্ষতি থেকে মুক্তি পেয়েছে। এর উদাহরণ লক্ষ্য করা যায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারীর ২৮ তারিখে ২০০৬ সালের একটি মামলার রায়ের মধ্য দিয়ে। যেখানে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ২০০০ সালের সংশোধনী ২০০৩ এর ১০ ধারায় আসামী কসির উদ্দিন গুনডুড়ীকে ৩ বছরের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অনাদায়ে আরো ৬ মাসের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়।

করোনা ভাইরাসের মহামারীর কারনে দীর্ঘ দিন আদালত বন্ধ থাকার পর গত আগষ্ট মাসে শুরু হয় দেশের সব আদালতের বিচার কাজ । এতে প্রভাব পড়ে মামলা নিষ্পত্তির ও । দীর্ঘদিন আদালত বন্ধ থাকায় মামলা নিষ্পত্তির হার গিয়ে পৌছে শুন্যের কোটায়। করোনা কালে বিচার প্রার্থীদের যে ক্ষতি হয়েছে তা কিছুটা কাটিয়ে উঠতে ট্রাইবুনাল বিভিন্ন উদ্দোগ্যে গ্রহন করেন।

ঠাকুরগাঁও নারী ও শিশু আদালত এর বিচারক মোঃ গোলাম ফারুক করোনা কালীন সময়ে স্বাস্থ্যবিধী মেনে ভার্চুয়াল আদালতের মাধ্যমে ৮৫টি মামলা দায়ের হলে সব কটি মামলাই নিস্পত্তি করেন। যা বিচার বিভাগে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে।

এই বিষয়ে বিচার প্রার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সময় মতো অফিস ও সময়ের কাজ সময়ে করলে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব। যা তিনি করতে পেরেছেন। তারা আরোও বলেন আদালতে কোন স্বাক্ষী এলে ফেরত দেওয়া হয় না, আদালতের সময় শেষ হলেও স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য নিয়ে তাকে বিদায় করা হয়, এ ব্যাপারে আদালতে কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং আইনজীবিদের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেন তারা।

ঠাকুরগাঁও এর নারী ও শিশু ট্রাইবুনালে বিশেষ পাবলিক প্রসিউকিউটর ( বিপিপি) এটিএম নাজমুল হুদা বলেন, বিচার নিষ্পত্তি ও আপোষ এর ক্ষেত্রে ঠাকুরগাঁও নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুনাল নজির স্থাপন করেছে। এ ধারা অব্যহত থাকবে।

এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও আইনজীবি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পদক অ্যাড. মোস্তাক আলম টুলু জানান বিচার বিভাগের গতিশীলতা ও আইজীবিদের সহযোগিতার কারনে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। অধিক মামলা নিষ্পত্তির কারনে অধিক বিচার প্রার্থী মানুষের ভোগান্তি কমেছে।

বর্তমান আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মামলা দ্রুত নিশ্পত্তির বিষয়ে বলেন, মাসিক পুলিশ ম্যজিট্রেট কনফারেন্স হওয়ার ফলে বর্তমানে মামলঅ নিশ্পত্তিতে আলাদা গতি এসেছে । প্রতি মাসে এ কনফারেন্সে জুডিশিয়াল ম্যজিস্ট্রেট, আইনজীবি, চিকিৎসক, পুলিশ, কারা কর্তৃপক্ষ নিজেদের সমস্যার কথা বিস্তারিত আলোচনা করার সুযোগ পায়।

(আই/এসপি/মার্চ ০৬, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test