E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নারী দিবসেও থেমে নেই উত্তরাঞ্চলের নারী 

২০২১ মার্চ ০৮ ১৮:১৬:০২
নারী দিবসেও থেমে নেই উত্তরাঞ্চলের নারী 

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ শ্রমজীবী নারী জানেন না, আন্তর্জাতিক নারী দিবস কি। নারী-নির্যাতন বন্ধ, নারীর অধিকার, মজুরিসহ নানা বিষয়ে সম অধিকার নিয়ে সভা-সেমিনার হলেও বাস্তবে নারীর অধিকার, মজুরী বৈষম্য এবং নারী নির্যাতন এখনো বন্ধ হয়নি পিছিয়ে পরা উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ জেলা।  নারী শ্রমিকরা যুগের পর যুগ নির্যাতন সহ্য করে হলেও জীবন-জীবিকার তাগিতে পুরুষ শ্রমিকদের সঙ্গে মাঠে-ময়দানে হাঁড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করলেও মিলছে না সমান মজুরী।

আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হলেও থেমে নেইএ অঞ্চলের নারী শ্রমিকরা। অনেকইে জানেন না,নারী দিবস কি? তারপরও দু-মুঠো খাবারের জন্য নারীরা মাঠে-ঘাঠে ঘাঁম জড়ানো কট্টর পরিশ্রম করেই যাচ্ছেন।

আজ সোমবার সকালে সরজমিনে দেখা মেলে দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকায় দল বেঁধে কর্মরত নারী।নারী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নারীরা এখনো নির্যাতনের শিকারসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন। সেই সঙ্গে এখনো রয়েছে মজুরি বৈষম্যের চিত্র।

নারীরা তুলে ধরেন তাদের কষ্টের কথা। তাঁরা দাবি করেন- মাঠে ঘাঠে, ময়দানে পুরুষদের সঙ্গে সমান ভাবে কাজ করলেও নারীরা সমান মজুরি থেকে বঞ্চিত।

নারীদের সুরক্ষা ও ন্যায্য অধিকার (মজুরির) নিয়ে প্রতিবাদ করেও কোন ভাবেই আশানুরুপ ফল পাচ্ছেন না বলে একাধিক নারী শ্রমিক ক্ষোভের সঙ্গে জানান। জীবন-জীবিকার তাগিদে তারা কম মূল্যে মাঠে ঘাটে কাজ করে যাচ্ছেন।
সেই সঙ্গে পুরুষ শ্রমিকদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করছেন। নারী শ্রমিকদের বোরো চারা রোপণসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফসলের পরিচর্যা, মাটি কাটা, চাতাল,ইট ভাটায় ও রাজমিস্ত্রীর কাজ করতে দেখা মেলে।

সাধারণত সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করলে এক দিনের কাজ ধরা হয়। স্থানীয় ভাবে এক দিনের পুরুষ শ্রমিকের মজুরি ৪ শত থেকে ৫ শত টাকা।কিন্তু, নারী সমান কাজ করে মজুরী পাচ্ছেন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
বিরল উপজেলায় পলাশবাড়ী গ্রামে মরিয়ম বেগম (৪২) বলেন, ‘নারী দিবস কি আমরা জানি না। আর নারী দিবস পালন করলেও আমাদের লাভ নেই। আমরা জানি কাজ করলে পেটে ভাত, কাজ না করলে থাকতে হবে উপবাস। তাই জীবন বাঁচার তাগিদে কাজে বেড়িয়েছি।’

ধুলাতৈর গ্রামের সখি বেগম (৩৮) বলেন, ‘আমরাও সকাল ৮/৯টা বাজলেই পুরুষদের সঙ্গে কাজ করতে যাই। কাজ থেকে ফিরে আসি একই সময়ে, কিন্তু পুরুষরা দৈনিক মজুরি ৪০০ টাকা পেলে আমরা পাই ২০০ টাকা। সমান টাকা চাইলে কাজ থেকে বাদ দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। আমরা চাই নারীরা যেন সমান মজুরি পায়, এ জন্য সরকারের কাছে জোড় দাবী জানাচ্ছি। ‘

নারী শ্রমিক সবেদা বেওয়া (৫৩) জানালেন, ‘১৩ বছর আগে স্বামী মারা গেছেন। অনেকে কষ্টে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। কোন রকমে এক সন্তান নিয়ে সংসার চলছে। তাই শ্রমিকের কাজ করি। নারীরা পুরুষের তুলনায় বেশি সময় ধরে কাজ করে। কাজের মধ্যে পুরুষরা বিশ্রামের বিরতি নিলেও নারী শ্রমিকরা তেমন বিশ্রামের সুযোগ পায়না।কিন্তু পুরুষ শ্রমিকরা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা মজুরি পেলে আমরা পাই ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। ‘

বেসরকারি নারী উন্নয়ন সংস্থার নেত্রী শামিমা পপি জানান, ‘নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে গিয়ে আমরা দেখেছি,বিভিন্ন এলাকায় পুরুষ শ্রমিকরা মাটি কেটে দেন, সেই মাটি বহন করেন একজন নারী শ্রমিক। তারপরও নারী শ্রমিকরা বেশি মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।

মজুরি বৈষম্য দূর করতে সামাজিক আন্দোলনের পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করা খুবই জরুরী। সেই সঙ্গে অতি জরুরী ভিত্তিতে নারী শ্রমিকদের মজুরী বৈষম্য দূর করার জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি’।

নারী উদ্যোত্তা শামসুন নাহার বলেন, ‘বর্তমান সরকার নারী বান্ধব। সরকার নারী-নির্যাতন বন্ধসহ নারীদের উন্নয়নসহ গ্রামীণ নারীদের ক্ষমতায়ন ও উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যেও কাজ করে যাচ্ছেন। নারীরা পুরুষদের সঙ্গে হাঁড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করলেও সম্মান মজুরী পাচ্ছেন না। এটা খুবই দুঃখজনক।

(এস/এসপি/মার্চ ০৮, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test