E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বেঁচে থাকার লড়াইয়ে কাহিল মহেশপুরের ২০০ হনুমান!

২০২১ মার্চ ১০ ১৮:৪০:০১
বেঁচে থাকার লড়াইয়ে কাহিল মহেশপুরের ২০০ হনুমান!

অরিত্র কুণ্ডু, ঝিনাইদহ : ভারতে যেখানে দেবতার সম্মান সেখানে বাংলাদেশে ওরা অত্যাচারী। পদে পদে মারধর আর নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রায় দুই শতাধীক কালোমুখো হনুমান এখন কাহিল। অনেকে রোগাক্রান্ত শরীর বয়ে বেড়াচ্ছে। খেয়ে না খেয়ে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন যেখানে পেট পুরে খাওয়ার কথা, সেখানে সরকারী ভাবে তারা কিছুই খেতে পায় না। সারাদিন দল বেঁধে কৃষকের ক্ষেত তছরুপ করে সন্ধায় ফিরে আসে আবাসস্থলে।

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়নের ভবনগর গ্রামে বছরের পর ধরে বসবাস করছে দুই’শ কালোমুখো হনুমান। একেবারেই ভারত ঘেষা ভবনগর গ্রামের বিভিন্ন বাগানে তাদের আবাস গড়ে উঠেছে। শ্যামকুড়, শ্রীনাথপুর ও মাঠপাড়াতেও এ সব কালোমুখো হনুমান চোখে পড়ে।

স্থানীয় শ্যামকুড় ইউনিয়নের ইউপি মেম্বর হারুন অর রশিদের ভাষ্যমতে, বৃটিশ আমল থেকে কালোমুখো হনুমান গুলো ভবনগর গ্রামে বসবাস করছে। সম্ভবত এই দলটি প্রথমে ভারত থেকে এসে বংশ বিস্তার করেছিল। এখন দুই শতাধীক হনুমান বসবাস করছে।

স্থানীয় চেয়ারম্যান আমানুল্লাহ হক জানান, কালোমুখো হনুমান ঠিক মতো খাবার পায় না। তাই খাবারের সন্ধানে কৃষকের ক্ষেত ও মানুষের ঘরবাড়িতে হামলা করে।

দীর্ঘদিন জীববৈচিত্র নিয়ে কাজ করা মহেশপুরের ভবনগর গ্রামের নাজমুল হোসেন জানান, বছরের পর বছর হনুমানগুলো সরকারী ভাবে কোন খাবার পায় না। মানুষ যা দেয় তাই খায়। ক্ষুধার যন্ত্রনায় তারা দলবেধে ফসলের ক্ষেত তছরুপ করে। ফলে কৃষকরা প্রতিহত করতে গিয়ে মারধর করে। ক্ষেতে বিষ দেয়। নানা ভাবে নির্যাতনের শিকার হয়।

নাজমুল হোসেন আরো জানান, প্রতি বছর চৈত্র মাসে ভারত থেকে দল বেঁধে কালোমুখো হনুমান এসে আমাদের দুর্বল হুনুমানদের আক্রমন করে। তখন গ্রামবাসী সেই হামলা প্রতিহত করে ভারতীয় হনুমান তাড়িয়ে দেয়। কারণ আমাদের হুনুমানগুলো অভুক্ত থেকে থেকে ভারতীয় সবল হুনুমান থেকে দুর্বল হয়ে আছে। ভবনগরের হনুমানদের চলাফেরা ও বসবাস বৈচিত্রময়। তারা একেক দিন একেক স্থানে বসবাস করে। কোন স্থানে স্থির নয় বলেও পশুপ্রেমী নাজমুল জানান।

এলাকাবাসী জানান, গত ১৯ ফেব্রয়ারি দেশেল প্রধান বন সংরক্ষক আমির হোসেন চৌধুরী ভবনগর গ্রামে এসেছিলেন। মহেশপুরের সন্তান হিসেবে তিনি এ সব হনুমানদের খাবারের সুব্যবস্থা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

ঝিনাইদহ জেলা বন কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দীন মুকুল জানান, মহেশপুরের ভবনগরের কালো কালোমুখো হনুমানগুলো সরকারী ভাবে কোন খাবার পায় না। কোন বরাদ্দ নেই। তবে প্রধান বণ সংরক্ষক আমির হোসেন চৌধুরী সরেজমিন দেখতে এসেছিলেন। তিনি এদের খাবারের ব্যবস্থা করবেন বলে জানান।

গিয়াস উদ্দীন মুকুল আরো জানান, যশোরের কেশবপুরের হনুমানদের বাজেটের সঙ্গে ভবনগরের হনুমানুদের আপাতত একটি খাবারের ব্যবস্থা হয়েছে। টেন্ডার হয়েছে। আগামী এপ্রিল মাস থেকে ভবনগরের এসব কালোমুখো হনুমানের জন্য প্রতিদিন কলা, রুটি ও বাদাম বরাদ্দ থাকবে। এ জন্য ঝিনাইদহ বন বিভাগের পক্ষ থেকে কয়েকটি স্পট তৈরী করা হবে। দিনের নিদ্দিষ্ট সময়ে সেখানে খাবার দেওয়া হবে। ফলে এলাকার কৃষকদের আর ফসল তছরুপ করবে না বলে তিনি আশা করেন।

(একে/এসপি/মার্চ ১০, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test