E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে দার্শনিক আরজ আলী গ্রন্থাগার

২০২১ মার্চ ১৮ ১৮:৩৮:০৬
অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে দার্শনিক আরজ আলী গ্রন্থাগার

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : “বিজ্ঞান মানুষকে আর মানুষ ধর্মকে পালন করে” চিরন্তর উক্তিটি করেছেন দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বর। বরিশাল জেলার সদর উপজেলাধীন চরবাড়িয়া ইউনিয়নের কীর্তনখোলা নদীর তীরবর্তী অজপাড়াগাঁ লামচড়িতে জন্মগ্রহণ করা শতাব্দীর সর্বাধিক আলোচিত ও গ্রহণযোগ্য দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বর দিনে দিনে হয়ে উঠেছেন জ্ঞানচর্চার প্রতিষ্ঠান।

জীবদ্দশার ৮৬ বছরের ৭০ বছর কাটিয়েছেন যে মানুষটি গ্রন্থাগারে, তার নিজ হাতে প্রতিষ্ঠিত সেই গ্রন্থাগার আজ অন্ধকার। নেই বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা। সৌরবিদ্যুৎ থাকলেও ছিন্নভিন্ন হয়ে আছে লাইনগুলো। নিয়মিত খোলা হয় না গ্রন্থাগারটি।

আরজ আলীর স্বজনরা জানান, নদী ভাঙনের কবলে পরে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে গ্রামটি। কীর্তনখোলা গ্রাস করেছে আরজ মঞ্জিলে আসার পথ। ফলে এখন যারা আসেন তাদের দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হয়। যে কারণে দর্শনাথী বা বইপ্রেমীর সংখ্যা দিন দিন কমছে। পাশাপাশি নদী ভাঙনের কারণে আরজ আলী মাতুব্বরের জন্মদিন উপলক্ষে ‘আরজ মেলা’ কয়েক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চরবাড়িয়া ইউনিয়নের গনিরহাট থেকে একটু সামনে এগিয়ে নির্মিত গ্রামরক্ষা বাঁধটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। গনিরহাট থেকে নদীগর্ভে বিলীন আরজ আলীর বাড়িতে যাওয়ার একমাত্র পথ না থাকায় কমপক্ষে এক কিলোমিটার পথ স্থানীয়দের বাড়ির ভিটে, উঠান, বাগান দিয়ে পায়ে হেঁটে গিয়ে পৌঁছাতে হয় আরজ মঞ্জিলে। লামচড়ি গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে বিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকলেও আরজ গ্রন্থাগারে নেই বিদ্যুৎ সংযোগ।

ফলে দর্শনার্থীরা এসে গ্রন্থাগারে বই পড়ার কোনো পরিবেশ পাচ্ছেন না। এমনকি কালেভদ্রে খোলা হয় জ্ঞানচর্চার এই পিঠস্থান। এলাকাবাসীর দাবি, জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরাসরি দেখভাল করা হলে আরজ মঞ্জিল তার জৌলুস ফিরে পাবে। মানুষ জ্ঞানচর্চার সুযোগ পাবে। ব্যক্তির হাতে গ্রন্থাগারটি থাকলে ব্যক্তির সুবিধা আদায় হবে। আরজ দর্শনচর্চা অব্যাহত থাকবে না।

গ্রন্থাগারটির দেখভালের দায়িত্বে থাকা আরজ আলী মাতুব্বরের নাতি ও গ্রন্থাগার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শামীম আলী মাতুব্বর বলেন, গ্রন্থাগারের নামে বিদ্যুতের মিটার নেই। কার নামে মিটার হবে তা নির্ধারণ না হওয়ায় বিদ্যুতের ব্যবস্থা হচ্ছেনা।

ওই গ্রামের বাসিন্দা আদম আলী মাঝি বলেন, আরজ আলী মাতুব্বর তার মাকে অনেক ভালবাসতেন। তার মা মারা যাওয়ার পর তিনি মৃত মায়ের একটি ছবি তুলেছিলেন। সে কারণে স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি ফতোয়া দিয়ে তার (আরজ আলী) মায়ের জানাজায় অংশগ্রহণ করেননি। শেষে আরজ আলী মাতুব্বর নিজে তার মাকে মাটি চাঁপা দিয়েছেন। এই দুঃখ তার মনে ছিলো। সে কারণে তিনি কট্টরতা মানতেন না। আরজ আলীর মুক্ত মানসিকতার চর্চাকে আরও ছড়িয়ে দিতে আরও উদ্যোগী হতে হবে।

আরজ আলীর মুক্তমনের চর্চার আরেক প্রতক্ষ্যদর্শী আলম হাওলাদার বলেন, তার সামনে আমি চেয়ারে বসতাম না। তিনি জোর করে আমাকে চেয়ারে বসাতেন। তিনি (আরজ আলী) বলেছেন, আমিও মানুষ, তুমিও মানুষ। আরজ আলীর সততা ধারণ করলেই একজন মানুষ আদর্শবান হতে পারবেন বলেও আলম হাওলাদার উল্লেখ করেন।

আরজ আলী মাতুব্বরের নাতি কবির হোসেন মাতুব্বর বলেন, আমাদের লাইব্রেরিতে আগে অনেক লোক আসতো। এখন আসতে পারেনা। আগে প্রতিবছরের ৩ পৌষ আরজ মেলা হতো। গত কয়েক বছর ধরে তা বন্ধ রয়েছে। মানুষ আসবে কীভাবে? নদীভাঙনে রাস্তা বিলীন হয়ে গেছে। তার দাবি, আরজ মঞ্জিল চালু রাখতে হলে নদীভাঙনরোধ করতে হবে। অন্যথায় আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আরজ আলীর বসতবাড়িও নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুনিবুর রহমান বলেন, নদী ভাঙনরোধ করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। জিও ব্যাগ ফেলার প্রকল্প চলমান রয়েছে। তিনি আরও বলেন, আরজ আলীর গ্রন্থাগারে বিদ্যুত ব্যবস্থা নেই, সে বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(টিবি/এসপি/মার্চ ১৮, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test