E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নারী ও শিশুদের ঘর থেকে বের করে দিয়ে দরজায় তালা

সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারসহ তিন কর্মকর্তাকে তিন দিনের মধ্যে ঘরের তালা খুলে দেয়ার নির্দেশ 

২০২১ মার্চ ১৮ ২২:৩৬:৫৭
সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারসহ তিন কর্মকর্তাকে তিন দিনের মধ্যে ঘরের তালা খুলে দেয়ার নির্দেশ 

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : ২০২০ সালের ১৩ জুলাই সাতক্ষীরা সদরের ওয়ারিয়া গ্রামে  ছয়জন নারী ও একজন শিশুকে ঘর থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে দিয়ে ঘরে তালা মেরে পুলিশ চাবি নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ডাকডোগে আদেশ প্রাপ্তির পরবর্তী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তালা খুলে দিতে বলা হয়েছে। একইসাথে পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করার পরও কেন তা কার্যকর করা হয়নি তা জানতে চেয়ে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, সদর সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার মীর্জা সালাহউদ্দিন ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামানের প্রতি রুল জারি করা হয়েছে। আবুল বাসারের দায়েরকৃত রিট পিটিশনের শুনানী শেষে মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি মোঃ কামরুজ্জামান ও বিচারপতি মাহমুদ হাসান তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

ওয়ারিয়া গ্রামের আবুল বাসার জানান, একই গ্রামের নাদের আলী গাজীর,ছেলে আবুল বাসার জানান, তার মা জামেলা খাতুন ও প্রতিবন্ধি নাবালক ভাই ইশারতের অভিভাবক হিসেবে ছয় শতক করে মোট ১২ শতক জমি বিক্রি করেন একই গ্রামের জামায়াত জামায়াতের সাবেক রুকন বারী মোল্লার কাছে। এ ছাড়াও প্রতিবন্ধি ইশারতের ওয়ারেশ সূত্রে প্রাপ্ত পৈতৃক সাড়ে ১০ শতক জমি যাহা ভাই মোশারফের কাছে ২০০২ সালে বিক্রি করলেও ওই জমি ২০০৪ সালে স্ত্রী জাহানারার নামে কেনা হয়েছে মর্মে দাবি করে আসছিল বারী মোল্লা। পরবর্তীতে বারী মোল্লাকে ১৯ শতক জমি দিতে তারা রাজী হলেও বারী মোল্লা মানতে চাননি।

আবুল বাসার আরো জানান, গত বছরের ১৩ জুলাই সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জামায়াতের রুকন ছয়টি নাশকতা মামলার আসাী আব্দুল বারী মোল্লা, তার স্ত্রী ইউনিয়ন জামায়াতের সাবেক মহিলা রোকন ও তিনটি নশিকতা মামলার আসামী জাহানারা, তার ছেলে ২০১৩ সালে হেলমেট বাহিনীর অন্যতম সদস্য হিসেবে ডুুমরিয়া থেকে গ্রেপ্তার হওয়া ৫টি নাশকতা মামলার আসামী আবুল বাসার, ৫টি নাশকতা মামলার আসামী বাবু, রজব আলী মেম্বরের ছেলে শুভ’র নেতৃত্বে যুগিবাড়ির প্রিন্স, বাবুলিয়া, বালিয়াডাঙা, আবাদেরহাট এলাকার ৭০/৭৫ জন সন্ত্রাসী হাতে দা, লাঠি, কুড়াল ও লোহার রড নিয়ে তাদের বাড়িতে হামলা চালায়। তারা ঘরের মধ্যে ঢুকে আসবাবপত্র ভাঙচুর করে।

বাধা দেওয়ায় তাকেসহ মা জামেলা,আকবর আলী, আশরাফের ছেলে শরিফুল ইসলাম, আশরমের ছেলে আরিফুল, ইসমাইলের স্ত্রী মাজেদা ও আবুল হোসেনের স্ত্রী হালিমাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করা হয়। সাংবাদিক ও স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। পুলিশের সহায়তায় বারী মোল্লা তাদের বাড়ি দখলে নিতে পারে এমন খবর পেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আকবর আলী, আরিফুল, মাজেদা ও হালিমা বাড়িতে চলে যায়।

দুপুরে তিনি মামলা দিতে গেলে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান তাকে ফিরিয়ে দেন। ওই দিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সাবেক ইউপি সদস্য রজব আলীসহ সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার মীর্জা সালাহউদ্দিন, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান, পুলিশ পরিদর্শক আবুল কালামের নেতৃত্বে কয়েকজন মহিলা পুলিশসহ ৩৫/৪০ জন পুলিশ তাদের বাড়িতে আসে। মহিলা পুলিশ তাদের বাড়ির মধ্যে অবস্থানরত লায়লা খাতুন, ফতেমা খাতুন, হালিমা খাতুন, আশুরা, শিমু, মুন্নি ও শিশু সুমাইয়াকে টেনে হিচড়ে রাস্তায় নিয়ে পুলিশের গাড়িতে তোলে।

এর আগে ঘর থেকে বের করার পর কয়েকজন পুরুষ পুলিশ সদস্য নারী ও শিশুদের লাথি মেরে উঠানে ফেলে দেয়। বাড়ি লোকজন শূন্য করার পর পুলিশ পরিদর্শক আবুল কালাম ওই ঘরের দরজায় বারী মোল্লার দেওয়া তালা লাগিয়ে চাবি নিয়ে আসেন। পরে এক শিশু ও ছয় নারীকে ১৫১ ধারায় নিরাপত্তা দেওয়ার নামে থানা হাজতে রেখে ১৪ জুলাই সকালে ওই ছয় নারীকে বারী মাওলানার দায়েরকৃত মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।

১৩ জুলাই বিকেলে পুলিশ ঘরের মধ্যে ঢুকে নারী ও শিশুদের টেনে হিচড়ে বের করে আনার চেষ্টার সময় সাংবাদিকদের সেখান থেকে বের করে দেওয়া হয়। নারী ও শিশু নির্যাতনের দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করায় দু’জন সাংবাদিকের মোবাইল ফোন কেড়ে নেন পুলিশ পরিদর্শক আবুল কালাম। মোবাইল থেবে ছবি মুছে ফেলে পরে মোবাইল দিয়ে দেওয়া হয়। যদিও পুলিশের নিন্দনীয় আচরনের ২৩ মিনিটের ভিডিও চিত্র একটি ছাদ থেকে ধারণ করা হয়। যাহা ১৫ ও ২১ জুলাই খুলনা রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শকের কাছে অভিযোগ দেওয়ার সময় উপস্থাপন করা হয়

। ১৫ জুলাই সিকিউরিটি সেলেও অভিযোগ করা হয়। পরবর্তীতে উপমহাপুলিশ পরিদর্শক কার্যালয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল করিম, সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান তদন্ত করে কোন ব্যবস্থা নেননি। একপর্যায়ে তিনি (আবুল বাসার) গত বছরের ২০ অক্টোবর সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের কাছে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার জন্য ঘরে চাবি চেয়ে আবেদন করেন।

আবেদনের অনুলিপি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মহাপুলিশ পরিদর্শক, উপমহাপুলিশ পরিদর্শক, সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়। সাতক্ষীরার নবাগত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফজাল হোসেন এর তদন্ত করেন। গত বছরের ৪ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে সাতক্ষীরা সদর সাংসদ মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি ঘটনাস্থলে গেলে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরদিন চাবি দেওয়ার কথা বললেও অজ্ঞাত কারণে তা কার্যকর হয়নি। একপর্য়ায়ে চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি তিনি (আবুল বাসার) হাইকোর্টে ২৭২৮/২১ নং রিট পিটিশন দাখিল করেন।

(আরকে/এসপি/মার্চ ১৮, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test