E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আক্রান্ত ৩৪৬৩, মৃত্যু ৯৭, চিকিৎসাধীন ৪৫২

চাঁদপুরে করোনা শনাক্তের এক বছর  

২০২১ এপ্রিল ০৯ ১২:৫০:১৫
চাঁদপুরে করোনা শনাক্তের এক বছর  

উজ্জ্বল হোসাইন, চাঁদপুর : মতলব উত্তর উপজেলার জামাই সুজন (৩২) এই জেলার প্রথম করোনা রোগী। দিনটি ছিলো গত বছরের অর্থাৎ ২০২০ সালের ৯ এপ্রিল বৃহস্পতিবার। এদিন তার করোনা টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ আসে। তাই গতকাল ৮ এপ্রিল চাঁদপুর জেলায় করোনা রোগী শনাক্তের এক বছর পূর্ণ হয়। এই এক বছরে করোনা অনেক পরিবারকে পিতৃহারা, মাতৃহারা ও স্বজনহারা করেছে। এমনও হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে যে, একইদিন মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বাবা এবং মাকে চিরদিনের জন্য বিদায় দিতে হয়েছে। বাবাকে দাফন করে কবরস্থান থেকে বাসায় এসে মাত্র কয়েক মিনিট পার করেছে। এরই মধ্যে মাও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল। নিষ্ঠুর করোনা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সন্তানদেরকে চিরদিনের জন্যে এতিম করে দিলো। খোদ চাঁদপুর শহরে এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। অনেক অপ্রত্যাশিত এবং অকাল মৃত্যু হয়েছে এই করোনার ছোবলে। আর এই মৃত্যুটি স্বাভাবিক মৃত্যু না হওয়ায় মানুষ প্রথমদিকে লাশের কাছেও যেতো না। প্রিয়জন এবং সবচেয়ে আপনজনও লাশের কাছে যেতো না সংক্রমণের ভয়ে। 

চাঁদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৯ এপ্রিল থেকে চলতি বছরের ৮ এপ্রিল পর্যন্ত এই এক বছরে চাঁদপুর জেলায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে মোট ৩৪৬৩ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৯৭ জন। আর চিকিৎসাধীন আছেন ৪৫২ জন। এই এক বছরে চাঁদপুর জেলার আট উপজেলা এবং শহরসহ পুরো জেলা থেকে ২১৬৬০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে সদর হাসপাতালেই সংগ্রহ করা হয় ১৩১১০ জনের। যা সংগ্রহকৃত নমুনার দুই তৃতীয়াংশ। সংগ্রহকৃত মোট নমুনার মধ্যে রিপোর্ট আসে ২১৪৫৩ জনের। এই সাড়ে একুশ হাজারের মধ্যে করোনা শনাক্ত হয় ৩৪৬৩ জনের। যা নমুনা পরীক্ষা অনুসারে ১৬.১৪ ভাগ। এদিকে মোট আক্রান্তের মধ্যে সদর উপজেলায়ই ১৫৮০জন। যা মোট আক্রান্তের প্রায় অর্ধেক। তবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এখন যে চলছে, তা খুবই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এক বছরের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে গত পনর দিনে। শনাক্তের হার সর্বোচ্চ ২৮ ভাগ পর্যন্ত উঠেছে। যা জাতীয় হারের চেয়েও বেশি।

চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে এক রোগী ঠাঁই হচ্ছে না। এখানে শয্যা সংখ্যা হচ্ছে ৬০টি। রোগী হচ্ছে এখন ৬৬ জন। ষাটটি শয্যার মধ্যে কোভিড রোগীদের জন্য ৩০টি, আর নন-কোভিড রোগীদের জন্য ৩০টি। গত বুধবার পর্যন্ত তথ্য হচ্ছে: হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী ৪৫ জন, আর নন-কোভিড হচ্ছে ২১ জন। অর্থাৎ চিত্র বলে দিচ্ছে করোনা রোগীর শয্যা সংখ্যার চেয়ে রোগী বেশি হচ্ছে ১৫ জন।

আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ও করোনাবিষয়ক ফোকালপার্সন ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেল জানান, এই হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ২০২০ সালের ২৭ মার্চ প্রথম রোগী ভর্তি হয়। তবে এই রোগী করোনায় আক্রান্ত ছিলেন না, সন্দেহভাজন ছিলেন। এরপর থেকে ননস্টপ রোগী ভর্তি হতে থাকে। গতকাল ৮ এপ্রিল পর্যন্ত এই হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে রোগী ভর্তি হয়েছে ২৫০০ জন। এর মধ্যে করোনা রোগী ছিলো ৫২০ জন, আর সন্দেহভাজন ছিলো ১৯৮০ জন। আইসোলেশন ওয়ার্ডে মারা গেছে এক বছরে ১১২ জন। এর মধ্যে করোনায় আক্রান্ত ছিলো ৩০ জন, আর করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে ৮২ জন। ডাঃ রুবেল আরো জানান, এই হাসপাতাল থেকে ঢাকা রেফার করা হয়েছে ৪৬৩ জন। এর মধ্যে করোনায় আক্রান্ত ছিলেন ৪৪ জন, আর নন-কোভিড ছিলেন ৪১৯ জন। আর এই এক বছরে জেলা সদর হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৩১১০ জনের। যা পুরো জেলার মোট সংগ্রহকৃত নমুনার দুই তৃতীয়াংশ।

এদিকে এই কোভিড-১৯ ভাইরাসকে কেন্দ্র করে চাঁদপুরে আরটি পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হয়। একই সাথে জেলা সদর হাসপাতালে অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন এবং আইসোলেশন ওয়ার্ডে হাই ফ্লো নেজেল ক্যানুলা সংযোজন করা হয়। চাঁদপুরে করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণে ল্যাব স্থাপন করায় চাঁদপুরের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট ১২ ঘণ্টার মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে। আর এর আগে ঢাকা যখন স্যাম্পল পাঠানো হতো, তখন এক সপ্তাহ থেকে ১২-১৪ দিনও লেগে যেতো রিপোর্ট আসতে। এর মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তি ঘুরে বেড়াতো। এতে করে সংক্রমণ বেড়ে যেতো। আর অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন এবং হাই ফ্লো নেজেল ক্যানুলা সংযোজনের আগে হাসপাতালে অধিক শ্বাসকষ্টের রোগী ও অক্সিজেনের লেভেল কমে যাওয়া রোগীর চিকিৎসা দেয়ার সুযোগ হতো না। হাসপাতালে আনার কিছুক্ষণের মধ্যেই ওইসব সিরিয়াস রোগী মারা যেতো।

করোনাকালে চাঁদপুরে চিকিৎসার এই সঙ্কটটি স্থানীয় সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির কাছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ তুলে ধরলে ডাঃ দীপু মনি এবং তাঁর বড়ভাই ডাঃ জে আর ওয়াদুদ টিপু চাঁদপুরে আরটি পিসিআর ল্যাব স্থাপনের এবং অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেন। অবশেষে ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অর্থায়ন ও তত্ত্বাবধানে চাঁদপুরে পিসিআর ল্যাব ও অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন করা হয়। গত বছরের ২৬ জুলাই চাঁদপুরে ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ আরটি পিসিআর ল্যাব উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। এর কয়েকদিন আগে হাসপাতালে অক্সিজেন প্লান্ট উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রীর পক্ষে তাঁর বড়ভাই ডাঃ জে আর ওয়াদুদ টিপু। চাঁদপুরে ল্যাব স্থাপন এবং অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন করায় এই জেলায় করোনা চিকিৎসায় ব্যাপক উন্নতি হয়।

(ইউ/এসপি/এপ্রিল ০৯, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test