E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কীটনাশক পানে আত্মহত্যার চেষ্টায় ৬ দিনে ৭ জন হাসপাতালে  

২০২১ এপ্রিল ১০ ১৬:২৪:২০
কীটনাশক পানে আত্মহত্যার চেষ্টায় ৬ দিনে ৭ জন হাসপাতালে  

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : বরিশালের আগৈলঝাড়ায় কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে হঠাৎ করেই আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে গেছে। গত ৬ দিনে কীটনাশক (বিষ) পানে আত্মহত্যা করতে গিয়ে উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে ৭ জন। গুরুতর অসুস্থদের চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে।

হাসপাতালে চিকিৎসক, রেকর্ড ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার উপজেলার গৈলা গ্রামের নুর ইসলাম বালীর সাথে তার ছলে বাক বিতন্ডার কারণে পিতার উপর অভিমান করে পুত্র আজিম বালী (১৭) বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। মুমূর্ষ অবস্থায় আজিমকে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করে।

রবিবার উপজেলার পূর্ব সুজনকাঠী গ্রামের মিরাজ মোল্লার স্ত্রী মনি বেগম (২৩) স্বামীর সাথে ঝগড়া করে ঘরে থাকা কীটনাশক পান আত্মহত্যার চেষ্টা করলে স্বজনেরা মুমূর্ষ অবস্থায় মনি বেগমকে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করে।
মঙ্গলবার উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের নওপাড়া গ্রামের বীরেণ মন্ডলের ছেলে কনণ মন্ডল (২৫) পারিবারিক কলহের কারনে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। কর্ণকেও স্বজনেরা উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করেছে।

বুধবার উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের উত্তর শিহিপাশা গ্রামের এসকেন্দার সরদার তার ছেলে ইব্রাহিম সরদারকে (১৭) ঘোরাফেরা না করে পড়াশুনায় মনোযোগী হতে গালমন্দ করায় পিতার উপর অভিমান করে ঘরে থাকা কীটনাশক পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করলে মুমূর্ষ অবস্থায় ইব্রাহিমকে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ইব্রাহিমের অবস্থার অবনতি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করেন চিকিৎসকেরা।

বৃহস্পতিবার উপজেলার সীমান্তবর্তী কারফা গ্রামের শিশির বিশ্বাসের স্ত্রী রসনা বিশ্বাস (৪০) দাম্পত্য কলহের কারনে অভিমান করে ঘরে থাকা কীটনাশক পান করে। পরিবারের লোকজন মুমূর্ষ অবস্থায় রসনা বিশ্বাসকে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।

শুক্রবার উপজেলার কোদালধোয়া গ্রামের নিতাই দাসের মেয়ে কোদালধোয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী অনামিকা দাস (১১) পড়াশুনা না করায় পিতা গালমন্দ করলে পিতার উপর অভিমান করে ঘরে থাকা কীটনাশক পান করে। স্বজনেরা মুমূর্ষ অবস্থায় অনামিকাকে উদ্ধার করে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করে।

শনিবার সকালে উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের নওপাড়া গ্রামের নিত্যানন্দ রায়ের ছেলে নয়ন রায় (১৮)এর প্রেমের সর্ম্পক পরিবার মেনে না নেয়ায় অভিমান করে ঘরে থাকা কীটনাশক পান করলে মুমূর্ষ অবস্থায় নয়নকে উদ্ধার করে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করে।

উপজেলা হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডা. মো. বখতিয়াল আল মামুন বলেন, পারিবারিকভাবে আবেগ প্রবণতার কারণে এলাকার লোকজন মুলত আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। হাসপাতালের রেকর্ড অনুযায়ি আত্মহত্যার চেষ্টাকারীদের বয়স ১০ থেকে ৪০ এর মধ্যে। আবার ইরি-বোরো মৌসুমে ধানের ক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহার করে অবশিষ্ট কীটনাশক অনাকাঙ্খিতভাবে ঘরে রাখার কারণে হাতের কাছে কীটনাশক পেয়ে তার মাধ্যমে আত্মহত্যা করতে যাওয়া লোকজনের সংখ্যাই এই মৌসুমে বেশী। তাই কীটনাশক ব্যবহার করে অবশিষ্ট অংশ ফেলে দেয়া উচিত বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।

আগৈলঝাড়া থানা অফিসার ইনচার্জ মো. গোলাম ছরোয়ার জানান, বর্তমান ইরি-বোরো চাষের মৌসুমে এই এলাকায় ঘরে থাকা অবশিষ্ট অরক্ষিত কীটনাশক হাতের কাছে পাওয়ার কারণে আবেগ প্রবণ হলেই সহজেই ছেলে-মেয়েরা আত্মহননের জন্য তা পান করছে। এজন্য পরিবার সদস্যদের সচেতনাতার সাথে কীটনাশক ব্যবহার ও সংরক্ষণ করার করার কথা জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি দোকানে কীটনাশক বিক্রির নীতিমালা থাকার পাশাপাশি পরিবার প্রধান ছাড়া ব্যবসায়িরা কীটনাশক বিক্রি বন্ধ করলে আত্মহত্যার মতো পাপ কাজ থেকে অনেকটাই ছেলে মেয়েদের রেহাই করা যাবে বলেও জানান তিনি।

(টিবি/এসপি/এপ্রিল ১০, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test