E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

স্থানীয় বিরোধে থমকে গেছে গোয়ালপোতা বুড়ো শিব মন্দিরের সংস্কার কাজ

২০২১ এপ্রিল ২২ ১৮:২২:৫১
স্থানীয় বিরোধে থমকে গেছে গোয়ালপোতা বুড়ো শিব মন্দিরের সংস্কার কাজ

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : কতিপয় দুর্নীতিবাজের বাধার মুখে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার রতনপুর ইউনিয়নের গোয়ালপোতা বুড়ো শিবমন্দির সংস্কারের কাজ ধমকে গেছে।

গোয়ালপোতা বুড়ো শিবতলা মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুভাষ বিশ্বাস জানান, রাজা যতীন্দ্রনাথ রায় এর দানকৃত গোয়ালপোতা মৌজার ৩৪ বিঘা জমি শিবমন্দির, হাজরা কালীমন্দির, নারায়ন মন্দির ও মণষা মন্দিরের নামে চারটি সমান অংশ করে দেবত্ব শিব ঠাকুরের নামে সাবেক রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত হয়। পরবর্তীতে পুজারী থাকার সুবাদে গোয়ালপোতা গ্রামের গোবিন্দ চক্রবর্তী, রামপদ চক্রবর্তী, জিতেন চক্রবর্তী ও রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ওই জমির অধিকাংশই নিজেদের নামে রেকর্ড করে নেন। এসএ রেকর্ডে দেবত্বের হাটের নামে ৫১ শতক, ৪১ শতক পুকুর ও ৬৯ শতক মাঠ দেখা যায়। ১৯৯৬ সালের ৫ ডিসেম্বর ৬৫০ নং কবুলতি দলিলে ওই এক একর ৬১ শতক জমির কথা উল্লেখ আছে।

১৯৯৬ সালের আগে থেকে কালীগঞ্জের পূর্ব নারায়াণপুরের মেঘনাদ ঘোষের ছেলে ও গোয়ালপোতা গ্রামের কেশব ঘোষের ঘরজামাই হিমাংশু ঘোষ ও রতনপুর গ্রামের তরুণ ঘোষ যথাক্রমে গোয়ালপোতা শিবমন্দিরের স্বঘোষিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হয়ে মন্দিরের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। দীর্ঘ ২৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে সভাপতি থেকে হিমাংশু ঘোষ সাংসদ গোলাম রেজার দেওয়া মন্দির সংস্কারের ৮০ হাজার টাকা, রতনপুরের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহেদ এর ৩০ হাজার টাকাসহ সরকারি ও বেসরকারি অনুদানের টাকা পকেটস্ত করেছেন। এমনকি মন্দিরের জমি আর্থিক সুবিধা নিয়ে বেদখল করিয়ে টাকা লুটেছেন। তাই বর্তমান সেটেলমেন্টে মন্দিরের নামে কেবলমাত্র নয় শতক ও ২৩ শতক জমি দেবত্ত্বর হাট এর নামে রেকর্ড হয়েছে।

সরেজমিনে বৃহষ্পতিবার সকালে গোয়ালপোতা শিব মন্দিরে গেলে রতনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক দেবাশীষ ঘোষ, গোয়ালপোতা গ্রামের রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, রঞ্জন ঘোষ ও গীরেন্দ্রনাথ ঘোষসহ কয়েকজন জানান, ২০১৮ সালে চড়ক পুজার সন্ন্যাসীরা মন্দিরের পুকুরে ওঠানামার জন্য ঘাট তৈরির কথা বললে তারা তৎকালিন সভাপতি হিমাংশু ঘোষ ও তার সমর্থকদের হাতে লাঞ্ছিত হন। বিষয়টি নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেওয়ায় পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে। একপর্যায়ে ওই বছরের ১৮ জুন এলাকায় মাইকিং করে চণ্ডীচরণ মণ্ডলকে সভাপতি ও সুভাষ বিশ্বাসকে সাধারণ সম্পাদক করে দু’ বছরের জন্য ৪১ সদস্য বিশিষ্ঠ কমিটি গঠণ করা হয়। এরপর ধেকে মন্দিরের জমি পূণঃরুদ্ধার, বটতলাকে ঘিরে শিব মন্দির নির্মাণ, পাশে হাজরা কালীতলা, বেদখল হওয়া নারায়ন মন্দির ও মণষা বেদী সংস্কারের কাজ শুরু হয়। নির্মাণ করা হয় মন্দিরের পুকুরের পাকা ঘাট নির্মাণ।

সুভাষ বিশ্বাস জানান, মন্দিরের পূণ্যার্থীদের সুবিধার্থে তারা পাঁচকক্ষ বিশিষ্ঠ শৌচাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেন। সেজন্য তারা গত ৭ মার্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে মন্দিরের ও দেবত্ত্বর হাটের জমিতে থাকা মৃতপ্রায় দু’টি বড় আকারের সৃষ্টিফুল গাছ বিক্রির অনুমতি চান। আনুমানিক দু’ লাখ টাকা শৌচাগার নির্মাণের খরচ ধরে তাদের মৌখিক অনুমতি সাপেক্ষে ওই দু’টি গাছ ৯০ হাজার টাকা বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে নির্মাণ করা শুরু হয়। ক্রেতা গাছ কাটা শুরু করলে ১৩ মার্চ কালীগঞ্জ পুজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মিলন ঘোষ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অসিত সেন ও রতনপুর ইউনিয়ন পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি হিমাংশু ঘোষ এসে ওই গাছ সরকারি বলে কাটতে বাধা দেন। এলাকাবাসীর বাধার মুখে তারা চলে যান। প্রতিবাদে ওই দিন কালীগঞ্জ সদরের ফুলতলা মোড়ে ওই তিনজনের বিরুদ্বে মানববন্ধন ও ঝাঁটা মিছিল করে স্থানীয় গ্রামবাসি। পরে ওই চক্রটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ভুল বুঝিয়ে গাছ কাটা বন্ধ করে দেন ওই চক্রটি। সেখান থেকে শৌচাগার নির্মাণ ও গাছ কাটার কাজ বন্ধ রয়েছে।

গোয়ালপোতা শিবমন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি চণ্ডী চরণ মণ্ডল বলেন, হিমাংশু ঘোষ দীর্ঘ ২৬ বছরের বেশি সময় ধরে মন্দিরের কোন আয় ও ব্যয় এর হিসাব দেননি। মন্দিরের জমি সংক্রান্ত কাগজপত্র লুকিয়ে রেখেছেন। বারবার চেয়েও জবাব না পাওয়ায় উপাজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করলে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বৃহষ্পতিবার দুপুরে হিমাংশু ঘোষ সাংবাদিকদের বলেন, চণ্ডী ও সুভাষের কমিটি ভুয়া। গাছ কাটতে বাধা দেওয়ার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, স্থানীয় তহশীলদার বাধা দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট তদন্তকর্মকর্তার কাছে জবাব দেওয়া হবে।

কালীগঞ্জ পুজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মিলন ঘোষ,গোয়ালপোতা মন্দির সম্পর্কে কোন কিছু জানেন না দাবি করে বলেন, তাদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও ঝাঁটা মিছিল হয়েছে তা ফেসবুকে দেখেছেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার রবিউল ইসলাম বলেন, মন্দিরের জমি বলায় গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া হয়। পরে আপত্তি আসায় গাছ কাটতে মানা করা হয়েছে। তবে খুব শ্রীঘ্রই মাপ জরিপ শেষে মন্দিরের জমিতে গাছ থাকলে কাটতে বাধা দেওয়া হবে না। তাছাড়া দেবত্ব জমিতে গাছ কাটতে হলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমতি আনতে হবে।

(আরকে/এসপি/এপ্রিল ২২, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test