E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

 

কেমন আছেন রানা প্লাজা ট্রাজেডিতে দুই পা হারানো রেবেকা

২০২১ এপ্রিল ২৪ ১৭:৫৩:০৮
কেমন আছেন রানা প্লাজা ট্রাজেডিতে দুই পা হারানো রেবেকা

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : গার্মেন্টস খাতে সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা রানা প্লাজা ধসের স্মৃতিও সময়ের সাথে সাথে বিলীন হতে চলেছে। কিন্তু এখনো থামেনি শোকের মাতম। স্বজন হারানো স্মৃতি। ঘটনার শিকার পরিবারগুলো এখনো আছে আতংকে।  

আজ ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির এই দিনটির ৮ বছর পূর্ণ হয়েছে। গত ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিলের এই দিনে সেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।

রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার বারাই হাট এলাকার গার্মেন্ট শ্রমিক রেবেকা খাতুন দুই পা হারায়। দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার বারাইহাট এলাকার চেয়ারম্যান পাড়া গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা মেলে, দুই পা হারানো রেবেকা খাতুনের।বাড়িতে তিনি এবং তার দুই বছরের ছেলে মাদানী আন্নুর শুয়ে আছে, ছয় বছরের মেয়ে সিজরাতুন মুনতাহাকে পাশে নিয়ে বসে আছে।

রেবেকা রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় পুরোপুরি সুস্থ্য হতে প্রায় ১০ মাসের মতো তাকে হাসপাতালে থাকতে হয়েছে। দুই পায়ে মোট আটবার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। ওই দূর্ঘটনায় তিনি তার মাসহ পরিবারের আরো দুইজনকে হারিয়েছেন।

কান্না বিজরিত কণ্ঠে রেবেকা খাতুন বলেন, আট বছর হয়ে গেলে, রানা প্লাাজা ধসের ঘটনার লোমহোর্ষক ঘটনার কথা বলতে গেলে এখোনো গা শিউরে উঠে। সেই দুঃসহ স্মৃতি তাড়া করে ফেরে এখনো তাকে। রানা প্লাাজা ধসের দুই বছর আগে পছন্দ করে মোস্তাফিজুর রহমানকে বিয়ে করেন।

স্বামী মোস্তাফিজুর রাজমিস্ত্রির কাজ করেন আর রেবেকা গার্মেন্টস শ্রমিক এই দিয়ে দু'জনের বেশ চলছিলো। এরপর রানা প্লাাজা ধবসের ঘটনায় লন্ডভন্ড হয়ে যায়,মোস্তাাফিজুর আর রেবেকার সুখের সংসার। ওই দুর্ঘটনায় ইট-পাথরের স্তূপে হারিয়ে যান মা চান বানু বেগম। মারা যান দাদী কহিনুর বেগম ও ফুপু রাবেয়া খাতুন। সেই কষ্টের কথা তিনি আজো ভুলতে পারেনি।

তিনি অশ্রু ভেজা কন্ঠে বলেন, ঘটনার পর তার জ্ঞান ছিল না। দুই দিন পর জ্ঞান ফিরে এলে দেখেন পায়ের ওপর সিমেন্টের বিম চাপা পড়েছে, অন্ধকার এক জায়গায় পড়ে আছেন তিনি। তখন চিৎকার করতে থাকলে কয়েকজন উদ্ধারকর্মী কাছে আসেন। কিন্তু বড় বোঝা তার শরিরে চাপা থাকায় তখনো উদ্ধার করতে পারেননি উদ্ধারকর্মীরা। এ সময় রেবেকা উদ্ধারকর্মীদের তার স্বামীর মুঠোফোন নম্বর দেন। পরে তার স্বামী এসে উদ্ধারকর্মীদের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করেন। ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে এক বছর রেবেকাকে চিকিৎসা নিতে হয়। বাম পা কোমর পর্যন্ত ও ডান পা গোড়ালি পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়েছে তার। এর পর দির্ঘ আট বছর পেরিয়ে গেছে এর মধ্যে একটি ছেলে ও একটি কন্যা সন্তান জন্ম হয়েছে রেবেকা’র।

রেবেকা খাতুন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ১০ লাখ টাকা পেয়েছেন। সেটি স্থায়ী আমানত হিসেবে ব্যাংকে রয়েছে। সেই স্থায়ী আমানতের টাকা থেকে টাকা পায় তা দিয়ে কোনোমতে তাদের সংসার চলে। তার দেখাশুনার জন্য তার স্বামী বাইরে কাজ করতে পারেন না। তিনি বলেন, প্রস্রাব-পায়খানাকরা, বাচ্চাদের সামলানোসহ ঘর-সংসারের সব কাজে সহোযোগিতা করেন আমার স্বামী।

রেবেকার স্বামী মোস্তাফিজুর বলেন, এখন আর আমাদের কেউ খোঁজ নেই না। তবে বেসরকারী সংস্থা ব্রাক হিউম্যানিটারিয়ান প্রগ্রামের আওতায় ব্রাক এর পক্ষ থেকে ৭ লক্ষ ২১হাজার টাকা ব্যায়ে বারাই আলাদিপুর ইউনিয়নে পাচ শতাংশ জমির উপর একটি দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছেন।

এই বাড়ীতে রয়েছে দুটি শোবার ঘর একটি কমোটসহ বাথরুম ও একটি কিচেন, সোলার এবং সাপ্লাই পানির ব্যবস্থা। এছাড়াও ব্রাক ২০১৫ সাল থেকে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। বিভিন্ন সময়ে এপর্যন্ত ৩ লক্ষ্য টাকা সহায়তাও দিয়েছেন। নতুন বাড়ী পেয়ে তারা অনেক খুশি হয়েছেন।

(এস/এসপি/এপ্রিল ২৪, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

০৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test