E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ফেনীর ধর্মপুরে অগ্নিকাণ্ডে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারালো ৮ পরিবার

২০২১ এপ্রিল ২৬ ১৮:২৩:৩৩
ফেনীর ধর্মপুরে অগ্নিকাণ্ডে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারালো ৮ পরিবার

নূরুল আমিন খোকন, ফেনী : ছেলেকে বিদেশে পাঠানোর জন্য পাসপোর্টসহ কাগজপত্র প্রস্তুত করে ঘরের আলমারিতে যত্ন করে  রেখেছিলেন রেহেনা আক্তার, ভিসার জন্য ধার দেনা করে কিছু টাকাও জমিয়েছিলেন। রেহেনা স্বপ্ন দেখেছিলেন সন্তান বিদেশ গিয়ে তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করবে, জমি কিনে নতুন করে ঘর করবেন। কিন্তু সর্বনাশা আগুনে তার সব স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ! গত ২৫ এপ্রিল (রবিবার) বিকেলে উদ্বেলিত কান্না সামলে এভাবেই নিজের দুদর্শার কথা বর্ণনা করছিলেন রেহানা আক্তার ।

গত শনিবার (২৪ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে তিনটায় ফেনীর ধর্মপুরের বটতলা গ্রামের মুন্সি বাড়িতে আগুন লেগে মুহুর্তে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে রেহেনার মত আরও ৮ পরিবারের স্বপ্ন !

কারও ঘরে রাখা নগদ টাকা পুড়েছে, কারও পুড়েছে জমির দলিল ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। সব হারিয়ে খোলা আকাশের নীচে রাত কাটছে কারও, আবার কেউ বা আশ্রয় নিয়েছেন প্রতিবেশীর বাড়িতে। আট পরিবারের সকলেই নিম্ন আয়ের মানুষ ।

মানিক নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, খুরশীদ আলমের ঘর হতে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের কারণে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। তিনি জানান, আগুনের লেলিহান শিখায় এক সঙ্গে আটটি ঘর পুড়ে মাটির সাথে মিশে গেছে। খবর পেয়ে ফেনী ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় ১ ঘন্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ।

ফেনী ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার জাকের হোসেন জানান, ৯৯৯ সহ একাধিক মোবাইলে থেকে ধর্মপুর বটতলা গ্রামে অগ্নিকাণ্ডের সংবাদ পেয়ে ৪ টা ২০ মিনিট নাগাদ ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস পৌঁছে ।
প্রায় ১ ঘন্টা ২০ মিনিট চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়, প্রাথমিকভাবে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটে আগুন লেগেছে বলে ধারনা করা হচ্ছে । অগ্নিকাণ্ডে আটটি পরিবারের প্রায় ৮/১০ লাখ টাকার মত ক্ষতি হয়েছে ।

আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত খুরশীদ আলম বলেন, সাড়ে ৩টার সময় ঘরে মোবাইল চার্জ দিতে গেলে শর্ট সার্কিট ঘটে। আগুনের স্ফুলিঙ্গ ঘরের ভেতর থাকা শুকনা পাতার উপর পড়লে তা মুহূর্তে জ্বলে ওঠে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। শোরচিৎকার শুনে সবাই ছুটে এলেও ততক্ষণে আগুন আশেপাশের আরও ৭টি ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে ঘরের সকল আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। কোন কিছুই রক্ষা করা যায়নি !

খুরশীদ আলমের স্ত্রী বলেন, যখন আগুন লাগে তখন আমি ঘুমে ছিলাম। আগুন আগুন চিৎকার শুনে কোন রকম ঘর থেকে বের হয়ে প্রান বাঁচিয়েছি ।

ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরীন সুলতানা জানান, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ৩ হাজার টাকা করে অনুদান ও ২০ টি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। ঘর নির্মাণ করার জন্য তাদেরকে ২ বান করে ঢেউটিন দেয়া হবে ।

ধর্মপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য নাসির উদ্দীন বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ইফতার সামগ্রী ও খাবার দেয়া হয়েছে। এই মুহুর্তে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো খাবার ও থাকার জন্য ঘর নির্মাণ জরুরী। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয় ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে আমরা ঘর তৈরিতে সহযোগিতা করবো ।

খালেদা আক্তার নামে এক গৃহিনী বলেন, স্বামী দিন মজুরের কাজ করেন, কত কষ্ট করে খেয়ে না খেয়ে ঘরে আসবাবপত্র ও জিনিসপত্রগুলো যুগিয়েছি। সর্বনাশা আগুন এক মুহুর্তে তা বিলীন করে দিলো। আমরা এখন কি করে বাঁচবো, কোথায় থাকবো। সন্তানদের নিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই ও দুমুঠো খাবারের জন্য সরকার ও বিত্তশালীদের নিকট উদার সাহায্য চান খালেদা।

ভুক্তভোগী মোঃ মানিক বলেন, আমরা নিন্ম আয়ের মানুষ। বাপ দাদার ভিটায় সামান্য একটু ভূমিতে কোনরকম ঘর করে পরিবার নিয়ে বসবাস করতাম। অগ্নিকাণ্ডে আমাদের শেষ আশ্রয়টুকুও চলে গেলো। আগুনে পোড়া ৮ পরিবারের অর্ধশতাধিক নারীপুরুষ খোলা আকাশের নীচে রাত কাটাচ্ছেন, আবার ঘর নির্মাণ করার মতো আমাদের সামর্থ্য নেই ।
ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী ও জেলা প্রশাসন থেকে যদি আমাদের ঘর নির্মাণের জন্য সহযোগিতা করা হয় তাহলে অন্তত স্ত্রী সন্তান নিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই পাবো ।

রেজিয়া বেগম নামে একজন বলেন, এমনিতেই করোনায় অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটছে এর মধ্যে মাথা গোঁজার ঠাঁইটাও হারালাম। আমাদের সহযোগিতা না করলে এই দূর্যোগ থেকে আমরা ঘুরে দাড়াতে পারবো না ।

(এনকে/এসপি/এপ্রিল ২৬, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test