E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মতলব উত্তরে স্বাস্থ্য সহকারী শাহজালালের অসীম ক্ষমতার দাপট!

২০২১ এপ্রিল ২৭ ১৫:৪৯:০৬
মতলব উত্তরে স্বাস্থ্য সহকারী শাহজালালের অসীম ক্ষমতার দাপট!

চাঁদপুর প্রতিনিধি, চাঁদপুর : মতলব উত্তর উপজেলার বড় মরাদোন কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারী শাহজালাল। গত ৬ মাসে একদিনও অফিসে যাননি তিনি। তবুও বেতন উত্তোলন করছেন নিয়মিত। তিনি সবসময় ঠিকাদারী নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তার অফিসে গিয়ে দেখা যায়, দৈনিক হাজিরা খাতায় গত ৬ মাসে (নভেম্বর থেকে অদ্যবদি) তার কোনো স্বাক্ষর নেই। নভেম্বরের আগের হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে তা আর দেখাতে পারেননি। হয়তো সেখানেও তার স্বাক্ষর পাওয়া যাবে না।

সরকারি চাকুরি করেও তিনি এ উপজেলার একজন প্রভাবশালী ঠিকাদার। গত ১২ বছরে তিনি অন্তত ৩০ কোটি টাকার কাজ করেছেন বলে জানা গেছে। তবে তার স্ত্রীর ‘রিজভিআপ’ নামের লাইসেন্সে তেমন কাজ করেন না, তিনি সরকারি দলের প্রতিষ্ঠিত ঠিকাদারের লাইসেন্সে কাজ করেন। কখনো করেন সরকারি দলের প্রতিষ্ঠিত ঠিকাদারদের সাথে পার্টনারশিপে কাজ। তবে কাজ দেখাশোনাতে তিনি থাকেন খুবই ব্যস্ত। স্বাস্থ্য বিভাগের উপজেলা পর্যায়ের সকল কর্মকর্তারাই জানেন শাহজালাল নিয়মিত অফিস করেন না বরং ঠিকাদারী নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু তার প্রভাবের কারণে এ বিষয়ে কখনো কেউ মুখ খুলেন না।

২০১২ সালে তৎকালীন স্থানীয় এমপির অলিখিত এপিএস পরিচয়ে এই স্বাস্থ্য সহকারী শাহজালাল নিজের কমিউনিটি ক্লিনিকে অফিস না করে তখন এলজিইডি ও পিআইও সেকশনের কাজ ভাগ-বাঁটোয়ারা করার নামে নিয়মিত উপজেলাতেই থাকতেন। তখন এ বিষয়ে এক সংবাদকর্মী তার বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করতে চাইলে তখনকার এই স্বাস্থ্য সহকারী শাহজালাল কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকে দিয়ে ৩ সংবাদকর্মীর সাথে অশোভন আচরণ করার কারণে কেউ আর তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করতে সাহস করেনি। এই স্বাস্থ্য সহকারীর প্রভাব যেনো দিন দিন বেড়েই চলছে। কৌশল হিসেবে তিনি যে যখন ক্ষমতায় আসেন তিনি সেই ক্ষমতাসীনদের কাছাকাছি থাকেন।

এই কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবার আওতায় থাকা আবু বকর, মরিয়ম, জিলানীসহ কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা জানান, এই কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারী শাহজালালকে তারা চিনেনই না। তবে এখানে কর্মরত বাকিদের চিনেন বলে জানান।

স্বাস্থ্য সহকারী শাহজালালের কয়েকজন সহকর্মীর সাথে কথা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, আমরা একসাথেই চাকুরিতে যোগদান করি। প্রথম থেকেই ও একটু বেপরোয়া এবং প্রভাব খাটিয়ে চলে। আমরা অফিস করলেও ওর অফিস করতে হয় না। এমনকি ওর ভাগ্যের চাকা এতোই ঘুরেছে গত কয়েক বছরে ও কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে।

গত ৬ মাস অফিসে আসেননি, দৈনিক হাজিরা খাতায় তার কোনো স্বাক্ষর নেই এবং সরকারি চাকুরি করে তিনি কীভাবে ঠিকাদারী করেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নুসরাত জাহান মিথেন জানান, শাহজালাল অফিসে আসে না এবং ঠিকাদারী করে দুটোই আমি জানি। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো তবে তার পক্ষে অনেক তদবির আসে। তার অনিয়মের কথা সিভিল সার্জন স্যারও জানেন।

স্বাস্থ্য সহকারী শাহজালালের ঠিকাদারী করার বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) সাইফুল ইসলাম বলেন, দুর্গাপুর বাড়ি ঠিকাদার শাহজালালের এই মুহূর্তে দুটি কাজ চলমান। একটি কালিপুর বাজারের মার্কেট অপরটি দুর্গাপুরের দাশেরবাজার মার্কেট। দুটি কাজের অর্থমূল্য ৩ কোটি টাকা। তবে ঠিকাদার শাহজালাল যে স্বাস্থ্য বিভাগে চাকুরি করেন তা-ও তিনি জানেন বলে জানান।

অভিযুক্ত স্বাস্থ্য সহকারী শাহজালালের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি তার কর্মস্থল সম্পর্কে এলোমেলো উত্তর দেন। তবে তিনি যে এই মুহূর্তে ৩ কোটি টাকার ঠিকাদারী কাজ করছেন তা অপকটে স্বীকার করেন।

(ইউ/এসপি/এপ্রিল ২৭, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test