E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরার ভয়ঙ্কর প্রতারক বাদশা গ্রেফতার

২০২১ মে ০১ ১৩:৩২:৩৮
সাতক্ষীরার ভয়ঙ্কর প্রতারক বাদশা গ্রেফতার

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : চোরা ছবির প্রতারক এস এম বাদশা মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে সাতক্ষীরা শহরের বাইপাস সড়কের কামাননগর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। সে সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোলের জজ কোর্ট এলাকার ডাক্তার নূর ইসলামের ছেলে।

জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আটক বাদশা মিয়া ঢাকা রিজেন্ট হাসপাতালের মহাপ্রতারক সাহেদের মতোই জেলায় ব্যক্তি বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হুমকি দিয়ে অবৈধ সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করে যাচ্ছে মর্মে গত বৃহষ্পতিবার সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান সতর্ক থাকতে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের ফেসবুক পেইজে এক স্টাটাসের মাধ্যমে আহ্বান জানান।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কথিত ডাঃ বাদশা মিয়ার বাবা সাতক্ষীরার পলাশপোল এলাকার জজ কোর্টের সামনে নূর ইসলাম ছিলেন হাতুড়ে ডাক্তার। বাদশার সহোদর মামুন হোসেন সাতক্ষীরা জেলার বড় মাদক(ইয়াবা) এর হোলসেলার। নূর ইসলাম ওষুধ দিয়ে পাইলসের ভুয়া চিকিৎসা করতেন। প্রতারক বাদশার কোন পেশা বা ইনকাম নেই। প্রতারণা করে অর্থ আদায় করাই তার মূল ব্যবসা। তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করতে গিয়ে ভয়ঙ্কর আরেক শাহেদের সন্ধান পাওয়া যায়।

সে নিজেকে কখনো ডাক্তার, কখনো ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, কেন্দ্রীয় সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা পরিচয়ে বিভিন্ন মানুষকে টাকার বিনিময়ে চাকরিতে পদন্নতি, চাকুরী পাইয়ে দেওয়া এমন কি যে কোন মামলার সুরাহা করে দিতে পারবেন মর্মে প্রতিশ্রুতি দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়েছে। এছাড়া তিনি নিজেকে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের ডিরেক্টর পরিচয় দিতেন। ২০১০ সালে সুবিধা আদায় করতে না পেরে সদর থানার তৎকালিন উপপরিদর্শক আব্দুস সবুর ও উপপরিদর্শক মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কটুক্তির অভিযোগ এনে আদালতে মামলা করে বাদশা।

তার অন্যতম সহযোগী কালীগঞ্জের দুদলী গ্রামের ব্যাংকের প্রহরী বাসারতের ছেলে কালিগঞ্জ থানার এক সময়কার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বহুল আলোচিত নাসিরউদ্দিন ওই মামলার সাক্ষী ছেল। তাদের সহযোগী ছিল কালীগঞ্জের শীতলপুর গ্রামের ইউসুফ ড্রাইভারের ছেলে পুলিশের সোর্স পরিচয়দানকারি মোস্ট ওয়ান্টেড লিটন। বাদশার দায়েরকৃত মামলায় হতাশ হয়ে ২০১১ সালে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক হিসেবে কর্মরত অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে খুলনা সার্জিকাল ক্লিনিকে উপপরিদর্শক আব্দুস সবুরের মৃত্যু হয়। অপর আসামী মোশরারফ হোসেন বর্তমানে খুলনা রুপসার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত।

সম্প্রতি সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূয়া সাংবাদিক মোবাইল থেকে কালীগঞ্জ থানার সরকারি নাম্বার কল দিয়ে নিজেকে দৈনিক মানবাধিকার প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক ও ভুঁইফোড় সংগঠন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পাঠাগার কেন্দ্রীয় সংসদের প্রচার-প্রকাশনা সম্পাদক পরিচয় দিয়ে বলেন উক্ত সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের ডিরেক্টর ডাঃ বাদশা মিয়া স্যার কথা বলবেন। বাদশা মিয়া ওসি দেলোয়ার হুসেনকে নছু বিবিসহ তার মেয়েদের মিথ্যা মামলায় অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়ে ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়ার হুকুম দেয়।

ওসি দেলোয়ার হুসেন বলেন মামলা তদন্ত চলমান রয়েছে, আপনি প্রয়োজন হলে এসপি মহোদয়ের সাথে কথা বলেন। কিন্তু তিনি(বাদশা) কোর্ট খুললে ওসির বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন কোর্টে মিথ্যা মামলা করবেন বলে ভয়-ভীতি দেখান এবং তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ সম্বলিত খুলনা-০২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য এর প্যাডে লিখিত অভিযোগ খুব শ্রীর্ঘই আইজিপি বরাবর পাঠানোর কথা বলে হুমকি-ধমকি দিয়ে তার বাহাদুরি দেখানোর চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে ওসি দেলোয়ার হুসেন নিশ্চুপ হয়ে বাদশার কথা শুনতে থাকেন এবং পুলিশ সুপার মহোদয়ের সাথে কথা বলার কথা বলে ফোন কেটে দেয়।

গত বৃহষ্পতিবার দুপুরে পুলিশ সুপার ফেসবুক পেইজে কথিত ডাঃ বাদশা মিয়াকে নিয়ে সতর্কতামূলক স্টাটাস দেন। পরবর্তীতে এর গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বৃহষ্পতিবার রাতেই কামাননগরের জনৈক শহীদুল ইসলামের মুদি দোকানে অভিযান চালিয়ে দু’টি নকল সীল, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব লেখা একটি নকল নোট প্যাড, খুলনা-০২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য এর নকল ডিও লেটার/প্যাডে ওসি দেলোয়ার হুসেনের নামে লিখিত মিথ্যা অভিযোগ সহ বিভিন্ন প্রকার নিয়োগপত্র এবং জমাজমি সংক্রান্ত কাগজ-পত্র, ওসি দেলোয়ার হুসেনের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনের লিখিত কপি উদ্ধার করা হয়।

এদিকে তার বিরুদ্ধে পুলিশের তৎপরতার খবর পেয়ে আত্মগোপনে চলে যায় কথিত ভুঁইফোড় সংগঠনের পরিচয়দাতা ডাঃ বাদশা মিয়া। যদি শেষ রক্ষা হয়নি শনিবার ভোরে কামানগরের বাইপাস সড়কের ফাস্টফুড ব্যবসায়ি শফিকুল ইসলামের দোকানের পাশ থেকে বাদশাকে একটি পিস্তলসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক বুরহান উদ্দীন তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, শনিবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস বিফ্রিংয়ের মাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে।

(আরকে/এসপি/মে ০১, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test