E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

করোনা পরিস্থিতিতে ঋণের যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে ব্যবসায়ীর আত্মহত্যা

২০২১ মে ১৬ ১৯:৪২:৩৭
করোনা পরিস্থিতিতে ঋণের যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে ব্যবসায়ীর আত্মহত্যা

ঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : করোনা পরিস্থিতিতে ঋণের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে এক ব্যবসায়ী গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। রোববার দুপুর ১২টার দিকে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার বাঁশতলা বাজারের তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করেছে।

মৃত ব্যবসায়ীর নাম অপু রায় (৩০)। তিনি কালীগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের অনিরুদ্ধ রায় এর ছেলে।

বিষ্ণুপুর গ্রামের অনিরুদ্ধ রায় জানান, ২০১৭ সালে তার ছেলে অপু রায় এর সাথে কলারোয়া উপজেলার কেড়াগাছি ইউনিয়নের বাগাডাঙি গ্রামের লক্ষণ কর্মকারের মেয়ে শীলার বিয়ে হয়। বর্তমানে অয়ন রায় নামে তাদের তিন বছরের একটি ছেলে রয়েছে। ১৬ বছর আগে থেকে অপু বাঁশতলা বাজারের বাবু গাজীর মালিকানাধীন দোকন ঘর ভাড়া নিয়ে ফ্লাক্সি লোড ও বিকাশ এর ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল। কয়েক বছর আগে সে বাড়িতে হাঁসের চাষও করে।

ব্যবসা ও হাঁস চাষ করতে যেয়ে অপু আশা সমিতিসহ সাতটি সমিতি থেকে কমপক্ষে সাত লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করে। হাঁস পালন ও ব্যবসা লোকসানে চলায় সে সমিতির ঋণের কিস্তি দিতে পারছিল না। করোনা পরিস্থিতিতে টাকা পরিশোধের জন্য তার উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছিল।

শীলা রায় জানান, শনিবার সকালে তার স্বামী অপু রায় কালীগঞ্জে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। সেখান থেকে বিকেলে সে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাঁশতলা বাজারে যায়। রাতে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। রোববার সকালে বাজারের ব্যবসায়িদের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন যে তার স্বামী দোকানের ছাদে লাগানো রড এর সঙ্গে দড়ি বেঁধে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহতা করেছে। সাত লাখেরও বেশি ঋনের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে তার স্বামী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে বলে জানান শীলা রায়।

ফতেপুর গ্রামের বাবু গাজী জানান, বাঁশতলা বাজারে তার দোকান মাসিক এক হাজার টাকা ভাড়া নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতো অপু রায়। প্রায় পাঁচ বছর যাবৎ সে আর ভাড়া দিতে পারতো না। একপর্যায়ে অগ্রিম জমা রাখা টাকা থেকে ভাড়া কেটে নেওয়া হয়েছে গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত।

মানবাধিকার কর্মী অলোক কুমার পাল বলেন, ব্যাংক বা অন্য কোন ঋণদানকারি একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিলে তা পরিশোধ না করা পর্যন্ত অন্য কোন প্রতিষ্ঠান তাকে ঋণ দিতে পারবে না এটাই প্রচলিত আইন। অথচ অপু রায় কিভাবে সাতটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ পেল তা বোধগম্য নয়। যারা নিয়ম ভেঙে ঋণ দিয়ে অপুকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক সিয়াব হোসেন জানান, অপু রায়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে একটি সুইসাইডাল নোট পাওয়া গেছে। তাতে সে তার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয় মর্মে উল্লেখ করেছেন। একইসাথে কয়েকটি সমিতির ঋণ গ্রহণ ও কিস্তি পরিশোধ সম্পর্কিত বই পাওয়া গেছে। এ ছাড়া সে কার কাছে কত টাকা ঋণ আছে তা কম্পিউটারে লিখে গেছে বলে তিনি জেনেছেন। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে ময়না তদন্ত শেষে অপুর লাশ রোববার বিকেলে তার স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

(আরকে/এসপি/মে ১৬, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test