E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ফেনীর একরাম হত্যার ৭ বছর, ১৭ আসামিকে খুঁজছে পুলিশ!

২০২১ মে ২০ ১৯:০১:৫৫
ফেনীর একরাম হত্যার ৭ বছর, ১৭ আসামিকে খুঁজছে পুলিশ!

নূরুল আমিন খোকন, ফেনী : ফেনীর বহুল আলোচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান একরামুল হক একরাম হত্যাকান্ডের ৭ বছর পূর্ণ হয়েছে বৃহস্পতিবার (২০ মে)। ২০১৪ সালের ২০ মে তৎকালীন ফুলগাজী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল হক একরামকে ফেনীর বিলাসী সিনেমা হলের সামনে গুলি করে, কুপিয়ে ও গাড়িসহ পুড়িয়ে হত্যাকাণ্ড নিশ্চিত করে নিজ দলীয় সন্ত্রাসীরা !

২০১৮ সালের ১৩ মার্চ চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার রায়ে ৩৯ জন আসামীর মৃত্যুদন্ডের রায় ঘোষণা করে আদালত, বিগত এক বছরের অধিক সময় ধরে করোনা সংক্রমন পরিস্থিতির কারণে হাইকোর্টে আসামীদের আপিলের শুনানী করা সম্ভব হয়নি । আপিল নিষ্পত্তি না হওয়ায় ডেথ রেফারেন্সের শুনানী ও আটকে আছে, এতে করে আদালতের রায় কার্যকরে বিলম্ব হচ্ছে ।

ফেনী জেলা জজ আদালত, আইনজীবী ও সংশ্লিষ্টসূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ২০ মে ফেনী শহরের জিএ একাডেমীর বিলাসী সিনেমা হলের সামনে প্রকাশ্যে একরামুল হকের গাড়ির গতিরোধ করে কুপিয়ে, গুলি করে ও গাড়িসহ পুড়িয়ে হত্যা করা হয় উপজেলা চেয়ারম্যান একরামকে।

ঘটনার রাতে তার ভাই রেজাউল হক বাদী হয়ে এ ঘটনায় ফেনী মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন । তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ এ মামলায় তদন্ত শেষে একই বছরের ৩০ আগস্টে ৫৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন । আলোচিত এ মামলায় গ্রেফতারকৃত ১৬ জন আসামী আদালতে ঘটনায় জড়িত ছিলেন মর্মে ১৬৪ ধারায় জবানবন্ধী দেন, ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ ফেনী জেলা ও দায়রা জর্জ আমিনুল হক আলোচিত এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন ।

রায়ে ৫৬ জন আসামীর মধ্যে ৩৯ জনের ফাঁসির আদেশ ও ১৬ জনকে খালাস দেওয়া হয়, এদের মধ্যে সোহেল নামের এক আসামী রায় ঘোষণার আগেই র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান ।

বর্তমানে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ৩৯ আসামীর মধ্যে ২২ জন কারাগারে রয়েছেন, বাকী ১৭ জনের মধ্যে ৮জন আসামী জামিনে গিয়ে পলাতক ও ৯ জন আসামী ঘটনার শুরু থেকেই পলাতক রয়েছেন ।

বর্তমানে এ মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে রয়েছেন ২২ আসামী, তারা সবাই খালাস চেয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন ।

এরা হচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির আদেল, ফেনী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবদুল্লাহিল মাহমুদ শিবলু, সাজ্জাদুল ইসলাম পাটোয়ারী সিফাত, আবু বক্কর সিদ্দিক, মোঃ আজমির হোসেন রায়হান, মোঃ শাহজালাল উদ্দিন শিপন, জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ওরফে আজাদ, কাজী শানান মাহমুদ, মীর হোসেন আরিফ ওরফে নাতি আরিফ, আরিফ ওরফে পাঙ্কু আরিফ, রাশেদুল ইসলাম রাজু, মোঃ সোহান চৌধুরী, জসিম উদ্দিন নয়ন, নিজাম উদ্দিন আবু, আবদুল কাইয়ুম, নুর উদ্দিন মিয়া, তোতা মানিক, মোঃ সজিব, মামুন, রুবেল, হুমায়ুন ও টিপু ।

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামীদের মধ্যে জামিনে গিয়ে পলাতক ৮ আসামী হচ্ছেন, ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম-সম্পাদক জাহিদ চৌধুরী, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লায়লা জেসমিন বড় মনির ছেলে আবিদুল ইসলাম, এমরান হোসেন রাসেল, জাহিদুল হাসেম সৈকত, চৌধুরী মোহাম্মদ নাফিজ উদ্দিন অনিক, জিয়াউর রহমান বাপ্পি, আরমান হোসেন কাউসার ও জসিম উদ্দিন ।

এছাড়াও এ মামলায় এখনো ৯ জন আসামীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করতে পারেন নি। তারা শুরু থেকেই পুলিশী ধরাছোঁয়ার বাহিরে রয়েছেন ।

এরা হচ্ছেন, ইসমাইল হোসেন ছুট্টু, কফিল উদ্দিন মাহমুদ আবির, রাহাত মোহাম্মদ এরফান আজাদ, শফিকুর রহমান, একরাম হোসেন, মোসলেহ উদ্দিন আসিফ, মহিউদ্দিন আনিছ, টিটু ও বাবলু ।

মামলাটির রায় প্রদানকালে খালাস পাওয়া ১৬ জন হলেন বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী মিনার, পৌর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম-আহবায়ক জিয়াউল আলম মিস্টার, আওয়ামী লীগ নেতা বেলাল হোসেন পাটোয়ারী ওরফে টুপি বেলাল, মোঃ আলমগীর ওরফে আলাউদ্দিন, আবদুর রহমান রউপ, সাইদুল করিম পবন ওরফে পাপন, জাহিদ হোসেন ভূইয়া, ইকবাল হোসেন, মোঃ শাখাওয়াত হোসেন, শরিফুল ইসলাম পিয়াস, কালা মিয়া, নুরুল আবসার রিপন, মোঃ ইউনুস ভূঁইয়া শামীম ওরফে টপ শামীম, মোঃ মাসুদ, কাদের ও ফারুক ।

ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ নিজাম উদ্দিন জানান, একরাম হত্যা মামলার ১৫ আসামীকে গ্রেফতারে সোর্স নিয়োগসহ যাবতীয় প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে আইনশৃংখলা বাহিনী ।

ফেনী জেলা জর্জ কোর্টের পিপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাফেজ আহাম্মদ জানান, নিম্ন আদালতে রায় ঘোষণার পর নিজেদেরকে নির্দোষ দাবী করে উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন কারাগারে থাকা ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত ২২ আসামী । করোনা পরিস্থিতিতে উচ্চ আদালতে আপিল শুনানী হচ্ছেনা, এমতাবস্থায় উচ্চ আদালতে ডেথ রেফারেন্সের শুনানীও করা যাচ্ছেনা ।

উচ্চ আদালতে আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানী সম্পন্ন হওয়ার পরই রায় কার্যকর করা হবে ।

(এনকে/এসপি/মে ২০, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test