E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

তালতলীতে হতদরিদ্র কর্মসংস্থান প্রকল্পে কোটি টাকা লুটপাট

২০১৪ সেপ্টেম্বর ০১ ১২:৫৪:২০
তালতলীতে হতদরিদ্র কর্মসংস্থান প্রকল্পে কোটি টাকা লুটপাট

বরগুনা প্রতিনিধি : “সরকার মোগো লইগ্যা ৪০ দিনের কাম পাডাইছে কিন্তু হে কাম মোগো ভাইগ্যে নাই। সব চাডারা লুইট্যা পুইট্যা খাইয়া হালাইছে। কয়েকজন লেবারকে ঠিহা দিয়া পুরা রাস্তার কাম উডাইয়া নেছে। মোগো ভাইগ্যে কিছুই জোডে নাই, পোড়া কফাল মোগো” বরগুনা তালতলী উপজেলার পঁচাকোড়ালিয়া ইউনিয়নের একজন দিন মজুর চেয়ারম্যানের ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ কথা বললেন।

বরগুনার তালতলীতে হতদরিদ্রদের জন্য কর্ম সংস্থান প্রকল্প ৪০দিন (গ্রামীন অবকাঠামো) এ কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৪০ দিনের এ প্রকল্পের কাজ এ এলাকায় চল্লিশ ভাগও হয়নি। কাজ না করে ইউপি চেয়রম্যান, প্রকল্প কমিটি ও উপজেলা ত্রাণ পুর্নবাসন কর্মকর্তারা যোগসাজগে ব্যাংক ম্যানেজারকে ম্যানেজ করে ব্যাংক থেকে সমুদয় টাকা তুলে নিয়েছে। ২০১৩-২০১৪ আর্থিক বছরে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে কর্মসৃজন কাজে ১ কোটি ১৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা বরাদ্ধ হয়। ১ হাজার ৪’শ ৩১ জন নারী ও পুরুষ শ্রমিক দৈনিক ২’শ টাকা মজুরির বিনিময় ৪০ দিনের কাজ করার কথা। কিন্তু তা না করে কমিটির লোকজন এ কাজগুলো চুক্তিতে করিয়েছেন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতাধীন অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচী (ইজিপিপি) প্রকল্পে ২০১৩-১৪, দ্বিতীয় পর্যায় বরাদ্দকৃত উপকারভোগী মজুরী-১৫,২০,০০০ টাকার সিংহ ভাগ ভাগাভাগি করে নিয়েছে বলে জানান একাধিক এলাকাবাসী। এ প্রকল্পে প্রাক্কলিত মাটির কাজের পরিমান ২,৬৬,০০০ ঘনফুট। মোট উপকারভোগীর সংখ্যা ১৯০ জন এবং দৈনিক মজুরী ২০০ শত টাকা করে। কাজ আরম্ভের তারিখ ১৯ এপ্রিল শেষ হবে ১৮ জুন। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, তৈরী করা রাস্তার কিছু অংশ এখনও পড়ে আছে, যা করা হয়নি। এ প্রকল্পে ৪০ দিবসের কাজ ১৩ দিবসে সমাপ্ত হয়েছে বলে জানান ঠিকা চুক্তির লেবার সর্দার আঃ ছত্তার। তিনি বলেন, আমার দলে ২৬ জন লেবার কাজ করেছে। দুই গ্রুপ লেবারে মাত্র ১৩ দিনে এ কাজ সমাপ্ত করেছি। এজন্য আমাদের ব্যাংক অথবা কোন কাগজ পত্রে স্বাক্ষর করতে হয়নি। সকল বিধিমালাকে কাঁচকলা দেখিয়ে নিজস্ব নিয়মে কাজ করেছে, প্রকল্প কমিটির চেয়ারম্যান ইউপি সদস্যা রুমা বেগম।

এদিকে উপজেলার কড়াইবাড়ীয়া ইউনিয়নের মীরাবাড়ী থেকে তাহের সরদার বাড়ী পর্যন্ত ৩ হাজার ২’শ ফুট রাস্তা, হরিণবাড়ীয়া খেয়াঘাট থেকে কাবিখা রাস্তা পর্যন্ত ৩ হাজার ফুট রাস্তা। দক্ষিন ঝাড়াখালী পাকা রাস্তা থেকে পুর্বদিকে পাউবোর বাধঁ পর্যন্ত ২ হাজার ৮’শ ফুট রাস্তা সংস্কারের সিকি ভাগও না করে অর্থ উত্তোলন করে নিয়েছে। একই ভাবে উপজেলার শারিকখালী, পচাঁকোড়ালীয়া, ছোটবগী, বড়বগী, নিশানবাড়ীয়া ও সোনাকাটা ইউনিয়নের কাজে পুকুর চুরি করেছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

নিশানবাড়ীয়া ইউপি চেয়ারম্যান দুলাল ফরাজী বলেন, ৪০ দিনের কাজের জন্য প্রকল্প কমিটি করে দিয়েছি। কোন অনিয়ম হয়ে থাকলে প্রকল্প কমিটি দায়ী।

বড়বগী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন মুন্সী বলেন ,আমার ইউনিয়নে ৯টি প্রকল্পেই ভাল কাজ হয়েছে। কোন ধরনের অনিয়ম হয়নি।

কড়াইবাড়ীয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মাষ্টার বলেন, আমার এলাকায় কাজে অনিয়ম হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউপি সদস্য বলেন ৪০ দিনের কর্মসূচি কাজে যথেষ্ট অনিয়ম হয়েছে। তিনি আরো বলেন ইউপি সদস্যরা প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে ভাগে পেয়েছে।

তালতলী উপজেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা (পিআইও) আবুল কালাম বলেন, শতকরা ৯৯ ভাগ কাজ ভাল হয়েছে। তিনি আরো বলেন এ এলকায় সামান্য কাজ খারাপ হওয়াতে কিছু টাকা ফেরৎ গেছে। কি পরিমান টাকা ফেরৎ গেছে এ তথ্য দিতে তিনি অপরগতা প্রকাশ করেন।

তালতলী অগ্রনী ব্যাংক ব্যাবস্থাপক মাইনুল ইসলাম জানান, প্রকল্পের সমুদয় টাকা উত্তোলন করে নিয়েছে।

তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী তোফায়েল আহম্মেদ বলেন , আমি এখন পর্যন্ত কাজের কোন অনিয়মের অভিযোগ পাইনি।

(এমএইচ/এইচআর/সেপ্টেম্বর ০১, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test