E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

১২০ কিলোমিটার বাঁধের ক্ষতি 

সাতক্ষীরায় জোয়ারের পানিতে  তলিয়ে গেছে সাড়ে ৭ হাজার চিংড়ি ঘের

২০২১ মে ২৭ ১৭:১৭:৪০
সাতক্ষীরায় জোয়ারের পানিতে  তলিয়ে গেছে সাড়ে ৭ হাজার চিংড়ি ঘের

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : ঘূর্ণিঝড় ইয়াশ এর প্রভাবে সাতক্ষীরা উপকূলের ছয়টি উপজেলার  মাছের ঘের জোয়ারের পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে। একই সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধেরও ক্ষতি হয়েছে। অপরদিকে গ্রামবাসী ক্ষতিগ্রস্থ বাড়িঘর নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এলাকায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। ভেঙে পড়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ ও সাতক্ষীরা শহরের সঙ্গে প্রধান সড়কে যোগাযোগ ব্যবস্থা।

সরেজমিনে বৃহস্পতিবার ঘুর্ণিঝড় ইয়েশ কবলিত শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের ঝাপা গ্রামে বেড়িবাঁধের চারটি পয়েন্ট, পাতাখালির দুটি পয়েন্ট, রমজাননগরের দুটি পয়েন্ট, গাবুরার তিনটি পয়েন্ট, কৈখালির দুটি পয়েন্ট, ভেটখালি জামে মসজিদের সামনে একটি পয়েন্ট, বুড়িগোয়ালিনীর তিনটি পয়েন্ট ও নূরনগর ইউনিয়নের একটি পয়েন্ট সহ অন্ততঃ ১৭টি স্থানে পানি বেড়িবাঁধ উপচে গ্রামে ঢুকে পড়েছে।

এসব বেড়িবাঁধ ভেঙে চুরমার হয়ে যাওয়ায় সয়লাব হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। এদিকে কালিগঞ্জের পূর্ব নারায়নপুর গ্রামের জব্বারের মাছের ঘের সংলগ্ন পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙে উপজেলা হাসপাতাল, আব্দুস সামাদ স্মৃৃতি মাঠ, বাস টার্মিনাল সহ বেশ কয়েকটি গ্রাম কাঁকশিয়ালী নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া কালীগঞ্জ সোহরাওয়ার্দি পার্কের পাশে কাঁকশিয়ালী নদীর পানি উপচে উপজেলা সদরের বেশ কিছু এলাকা তলিয়ে গেছে। উপজেলা পরিষদের কাছে যমুনা নদীর উপর নির্মিত স্লুইজ গেটের পাটাতন বন্ধ থাকায় সেখান থেকে পানি উপচে নাজিমগঞ্জ বাজার ও উপজেলা পরিষদ চত্বরসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে ছয়লাব হয়ে গেছে।

উপজেলার ঘোজাডাঙা এলাকায় কাঁকশিয়ালী নদীর বাঁধ উপচে উত্তর শ্রীপুর ও দক্ষিণ শ্রীপুরসহ তিনটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভাঙনের ফলে কপোতাক্ষের পানিতে আশাশুনি উপজেলার কুড়িকাহনিয়া লঞ্চঘাট, হরিশখালি, রুইয়ার বিল, সুভদ্রকাটিসহ কয়েকটি গ্রাম ছয়লাব হয়ে গেছে। এ ছাড়াও আশাশুনি সদরের দয়ারঘাট ও বলাবাড়িয়ায় বেড়িবাঁধ উপচে পানি বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার খাজরা ইরুনিয়নের পিরোজপুরের রাজবংশীপাড়ায় কপোতাক্ষ নদের বাঁধ উপচে বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আশাশুনির বামনডাঙা গ্রামে খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ উপচে পানি এলাকায় ঢুকে কয়েক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

গাবুরার জেলেখালি, নেবুবুনিয়া, চাদনীমুখা, গাগড়ামারি, পদ্মপুকুরের উত্তর ও দক্ষিণ পাতাখালি, কামালকাটি,ঝাঁপা ও সোনাখালি সহ বেশ কয়েকটি গ্রাম উপচে পড়া নদীর পানিতে ভাসছে। গ্রামবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা বালির বস্তা এবং মাটি ফেলে বাধ সংস্কারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।

এদিকে দেবহাটা উপজেলার ইছামতী নদীর কোমরপুর নামকস্থানে বেড়িবাঁধ উপচে বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সদর উপজেলার হাড়দ্দহ মসজিদের পাশে ও তালা উপজেলার পাখিমারা বিলে টিআর এম এর বাঁধ ভেঙে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে বিভিন্ন স্থানে কালভার্ট ধ্বসে নদীর পানি ছড়িয়ে পড়েছে। মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের সেতু উপচে চুনা নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে এলাকা। এখন পর্যন্ত কোন প্রানহানির খবর পাওয়া যায়নি। তবে গ্রামবাসী গবাদিপশু ও তাদের সহায় সম্পদ নিয়ে আতংকিত হয়ে পড়েছেন। বৃহষ্পতিবারও সাতক্ষীরায় দিনভর থেমে থেমে হালকা বৃষ্টি হয়েছে সেইসাথে ঝড়ো হাওয়া ছিল।

স্থানীয়রা জানান, পূর্নিমার ভরা কোটালে ভয়াল ইয়াশের থাবায় সাতক্ষীরা অঞ্চল বিপদমুক্ত হলেও জোয়ারের পানি তলিয়ে দিয়েছে এখানকার জনপদ ও অবকাঠামো। এসময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙে নোনা পানি ঢুকে গেছে গ্রামে। একইসাথে বেড়িবাঁধ ও সড়ক উপচে গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে গেছে পানি। পানির তোড়ে জেলার কয়েকটি স্লইসগেট এখন ঝুকির মধ্যে রয়েছে। দেবহাটার টাউনশ্রীপুরে সীমান্ত নদী ইছামতি সংলগ্ন ও সুশীলগাঁতিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুটি স্লুইস গেটে ফাটল দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী সাতক্ষীরা সহ খুলনা অঞ্চলে ১২০ কিলোমিটার বাঁধ ভেঙেচুরে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। অনেক স্থানে এসব বাঁধ স্থানীয়ভাবে মেরামতের কাজও চলছে। তবে জোয়ারের তীব্রতা কমে গেলেও বুধবার রাতে কয়েকটি ভাঙনকবলিত এলাকায় নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, শ্যামনগর, আশাশুনি, কালিগঞ্জ, দেবহাটা সাতক্ষীরা সদর ও তালা উপজেলার ২৯টি ইউনিয়নের ৭৫৬০টি মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর আয়তন ৬৭৩৮ হেক্টর। এই খাতে মাছ এবং অবকাঠামোগত সব হিসাব মিলিয়ে ৫৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পূর্নিমার ভরা জোয়ারে সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি ও দেবহাটা উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার চিংড়ি ঘের এখন পানির নিচে।

আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল হোসেন খান বলেন, সে এলাকায় ১ হাজার ৪ শত হেক্টর জমির মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। দেবহাটা উপজেলায় ২০০ ঘের পানিতে তলিয়ে আছে। অপরদিকে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু জার গিফারী বলেন, ১৬০০ হেক্টরের ২৫০০ ঘেরের মাছ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার রবিউল ইসলাম বলেন, তার এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরুপনের কাজ চলছে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান, এলাকাজুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি এখনও পুরোপুরি নিরুপন করা যায়নি। বাঁধ ভেঙেছে, মাছের ক্ষতি হয়েছে।

(আরকে/এসপি/মে ২৭, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test