E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত চাঁদপুরের তিন শতাধিক বেদে পরিবার

২০২১ মে ২৭ ১৭:৩২:২৬
নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত চাঁদপুরের তিন শতাধিক বেদে পরিবার

উজ্জ্বল হোসাইন, চাঁদপুর : চাঁদপুরে তিন শতাধিক বেদে পরিবার নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। যাদের জন্ম পানির ওপর ভাসমান নৌকায়, মৃত্যুও তাদের পানির ওপর ভাসমান নৌকায়। পরিবার-পরিজন সবাইকে নিয়ে জীবনযাপন এই ভাসমান নৌকায়। তারা এ দেশের নাগরিক। তারপরও অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাদের স্থান হয় না ডাঙ্গায়। একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই হয় না। ঝড়, বৃষ্টি, বর্ষা, শীত সব মৌসুমেই নদীর ওপরে ভাসমান অবস্থায় নৌকায় বসবাস করে যাচ্ছে এই বেদে পরিবার।

তাদের প্রধান জীবিকা মাছ শিকার করা। এ মাছ শিকার করে তারা সংসারের যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করতে হয়। বড়শি ও ছোট জাল দিয়ে চলে তাদের মাছ শিকার। তারা তাদের সম্প্রদায় ব্যতীত অন্য কোথাও আত্মীয়তা বা বিবাহ করতে পারে না। এদের বেশির ভাগই ইসলাম ধর্মের অনুসারী।

চাঁদপুর শহরের প্রেসক্লাব ঘাটের পেছনে ডাকাতিয়া নদীর তীরে, ১০নং চৌধুরী ঘাট ও ৫নং ঘাট এলাকায় রয়েছে এ জনগোষ্ঠীর বসবাস। এদের বাসস্থানকে বলা হয় বেদেপল্লী। এই পল্লী ঘুরে তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ছোট ছোট নৌকার ওপর রান্নাবান্নার কাজসহ জীবনের সকল কাজ তারা করছেন ভাসমান অবস্থায়। তবে কেউ কেউ আবার নৌকার পাশে নদী তীরে অর্থাৎ ডাঙ্গায় বাঁশের মাচানের ওপর টিন দিয়ে ছোট ছোট ঝুপড়িঘর বানিয়ে বসবাস করেন। কিন্তু সেটি আবার ক্ষণস্থায়ী। অর্থাৎ বর্ষার সময়ে আবারো সেই নৌকায় হয় তাদের মূল আশ্রয়স্থল।

নৌকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাসকারী বেদে জনগোষ্ঠীর রেজিয়া বেগম, আব্দুল করিম, শাহনাজ বেগমসহ কয়েকজন জানান, মাছ ধরার ওপরেই আমাদের জীবন সংগ্রাম। স্বামী-স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের নদীতে জাল ও বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে হয়। পরে বাজারে বিক্রি করে যা টাকা পাই তা দিয়ে কোনো রকম সংসার চলে। ঝড়-তুফান হলে অনেক সময় না খেয়ে থাকতে হয়।

নিজেদের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে ৫নং ঘাট ও ১০নং চৌধুরী ঘাটে বসবাসরত এই জনগোষ্ঠীর সর্দার মালেক সওদাগর জানান, আমাদের এখানে তিন শতাধিক পরিবার রয়েছে। বেশ ক’বার আমরা জেলা প্রশাসক বরাবরে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ঘর পাওয়ার আবেদন করেও কোনো সাড়া পাইনি। আবেদন করা হলে অনেকে এসে আমাদেরকে গুচ্ছগ্রামে থাকার ব্যবস্থা করার আশ^াস দেন। কিন্তু আশ^াস দেয়া হলেও তা আদৌ বাস্তবায়িত হয়নি। আমরা এই অঞ্চলের ভোটার। সকল নির্বাচনে আমাদের ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলেও নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাই আমাদের শেষ আশ্রয়স্থল চাঁদপুরের উন্নয়নের রূপকার শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি।

তিনি যদি মানবিক দিক বিবেচনা করে আমাদের জন্যে একটু পানি থেকে ডাঙায় বসবাসের ব্যবস্থা করেন, তাহলে আমরা আজীবন তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবো। তাই মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপির এ বিষয়ে সুদৃষ্টি কামনা করছি।

চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা শাহনাজ জানান, আমাদের এখন আশ্রয়ণ প্রকল্পের কোনো ঘর খালি নেই, এমনকি গুচ্ছগ্রামেও খালি নেই। এগুলো সংস্কার চলছে। তা শেষ হলে আমরা ওদের জন্যে কাজ শুরু করবো। তাছাড়া আমরা নতুন আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি নির্মাণ করার উদ্যোগ নিচ্ছি। যেখানে এ রকম বেদে সম্প্রদায়, হরিজন সম্প্রদায়ের লোককে থাকতে দেয়া হবে। কিন্তু জায়গা নির্ধারণ করতে না পারায় আমরা এখনো এই কাজ শুরু করতে পারিনি।

জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, এরা ভোটার, দেশের নাগরিক, কোনোভাবেই নাগরিক অধিকার বঞ্চিত হওয়ার সুযোগ নেই। ইউএনওকে বিষয়টি তদারকি করতে বলেছি। দেখা যাক এ বিষয়ে কী করা যায়।

(ইউ/এসপি/মে ২৭, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test